সবুজ ঘুঘু | Asian Emerald Dove | Chalcophaps indica indica

6262
সবুজ ঘুঘু | ছবি: ইন্টারনেট

মুষলধারে বৃষ্টি, সঙ্গে শীলাপাত। বজ্র ‘কড়্..কড়্..কড়াৎ’ শব্দে চিৎকার জুড়ে দিয়েছে। কানে তুলো ঢুকিয়েও রেহাই পাইনি বিকট শব্দ থেকে। জীবজগতের প্রতিটি প্রাণীই আশ্রয় নিয়েছে নিজ নিজ আলয়ে। এমনিতে গোধূলিলগ্ন, তার ওপর ঝড়ের তাণ্ডব। পরিবেশটা কেমন জানি ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগছে। ঝড়ের গতি কিছুটা কমে আসতেই বেরিয়ে পড়লাম ছাতা নিয়ে। ঝড়ের ঝাপটায় ছাতাটা গুটিয়ে আসছে, তার পরও অভিযান থামিয়ে দেইনি। সোজা গিয়ে হাজির বাড়ির উত্তরের খালপাড়ে। তিন দিন আগে খালপাড়ের একটা আমগাছে ‘হলদে পাখি’র বাসা দেখেছি। ওটাতে ছোট দুটি শাবকও রয়েছে। বাসাটা ওরা জুতসই ডালে বাঁধেনি। বাতাসের ঝাপটায় বাচ্চাগুলো নিচে পড়লে আর রেহাই নেই। একেবারে গিয়ে পড়বে জলে। কাজেই দে ছুট। মিনিট চার-পাঁচেকের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছলাম।

গাছের ওপর তাকিয়ে স্বস্তিও পেলাম যাক প্রকৃতি ওদের কৃপা করছে; কিন্তু কৃপা করেনি ‘সবুজ ঘুঘু’ পাখিটাকে। বেচারি নিচে পড়ে কাতরাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে ওকে তুলে নিলাম। রক্ত ঝরছে। ডানায় শীলের আঘাত লেগেছে। ডানাটা ভেঙে গেছে বোধহয়। পাখিটার করুণ দশা দেখে আমারও চোখের কোণায় জল জমেছে। আহ, কী সুন্দর পাখি! এমনিই তো এদের আজকাল খুব কম দেখা যায়। একটা সময় গ্রামেগঞ্জে প্রচুর সবুজ ঘুঘু দেখা যেত। ‘কু-উ’ বা ‘হুউন’ সুরে ডেকে মানুষকে আপ্লুত করে দিত। সেই চিরচেনা করুণ সুর আজকাল খুব কমই শোনা যায়। কারণ যেখানে সেখানে চোখে পড়ে না এখন আর। হয়তো ওদের বেঁঁঁঁচে থাকার পরিবেশ অনুকূলে নেই। তার ওপর যোগ হয়েছে পাখি নিধনকারীদের অত্যাচার। সব মিলিয়ে এরা অসহায় হয়ে পড়েছে। তাই ওকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠলাম। বাড়ি এনে ডানায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলাম। আমার দেয়া চিকিৎসায় পাখিটি সুস্থ হয়েছে এবং সুসংবাদটি হচ্ছে, সে মুক্ত আকাশে ডানাও মেলেছে।

হ্যাঁ পাঠক, এ পাখিদের বাংলা নাম: ‘সবুজ ঘুঘু’। ইংরেজি নাম: ‘এশিয়ান এমারল্ড ডাভ’ (Asian Emerald Dove)। বৈজ্ঞানিক নাম: Chalcophaps indica indica | আমাদের দেশে বহু প্রজাতির ঘুঘু রয়েছে যেমন: তিলা ঘুঘু, সবুজ ঘুঘু, রাজ ঘুঘু, রাম ঘুঘু, খুদে ঘুঘু, লাল ঘুঘু ইত্যাদি।

এরা লম্বায় ২৫-২৮ সেন্টিমিটার। এদের মাথা ও ঘাড় ধূসর। কাঁধ সাদা। পিঠ সবুজ। ডানার প্রান্ত এবং লেজ কালো। গলা থেকে তলপেট পর্যন্ত উজ্জ্বল গোলাপি। ঠোঁট ও পা লাল। স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য ছোট। রঙে সামান্য তারতম্য রয়েছে। স্ত্রী পাখির মাথা ঘাড় বাদামি। কাঁধের সাদা দাগটি অস্পষ্ট।

এদের প্রধান খাদ্য ধান ও অন্যান্য শস্যদানা। মাটিতে বিচরণকালে খুঁটে খুঁটে মাটি এবং উইপোকা খায়। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর। ভূমি থেকে ৫ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে বাসা বাঁধে। সরু, নরম ও শুকনো ঘাস-লতা দিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৮ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/11/2012

মন্তব্য করুন: