সোনা কপালি হরবোলা | Golden fronted leafbird | Chloropsis aurifrons

3657
সোনা কপালি হরবোলা | ছবি: ইন্টারনেট

সুলভ দর্শন, স্থানীয় প্রজাতির পাখি সোনা-কপালি হরবোলা। নজরকাড়া রূপ, কণ্ঠস্বর সুমধুর। স্বভাবে চঞ্চল, হিংস্র নয়। সারা দিন বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ালেও পাখি পর্যবেক্ষকরা সহজে এদের সাক্ষাৎ পান না, তবে কণ্ঠস্বর শুনতে পান। ওদের দৈহিক বর্ণটাই এমন যে, খুব সহজে পাতার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। বিচরণ ক্ষেত্র যত্রতত্র নয়। গ্রামাঞ্চলে খুব কমই দেখা মিলে। মূলত এরা চিরসবুজ ও পাতা ঝরা বনের বাসিন্দা। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা ছোট দলে।

এ প্রজাতির পাখির বড় গুণটি হচ্ছে খুব সহজেই অন্য পাখির কণ্ঠস্বর হুবহু নকল করতে পারে। যার ফলে এদের নামের শেষাংশে যোগ হয়ছে ‘হরবোলা’ শব্দটি। এদের নিজেদের কণ্ঠস্বরেও রয়েছে এক ধরনের মাদকতা। শ্রুতিমধুর সেই সুর ‘হুইট, চা, কি-হুই, সুই-চি-চি-উই’ কানে গেলে যে কেউই থমকে দাঁড়াবেন। কিন্তু চট করে ওকে খুঁজে বের করতে পারবেন না। একটু ধৈর্য ধরে ঘাপটি মেরে বসে থাকলে এক সময় দেখবেন অস্থিরমতি পাখিটি গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফালাফি করছে। সে সুযোগে ইচ্ছা করলে আপনি ক্যামেরাবন্দী করে নিতে পারবেন।

এ পাখির বাংলা নাম: ‘সোনা-কপালি হরবোলা’, ইংরেজি নাম: ‘গোল্ডেন-ফ্রন্টেড লিফবার্ড’,(Golden-fronted leafbird), বৈজ্ঞানিক নাম: Chloropsis aurifrons | দেশে দুই প্রজাতির হরবোলা নজরে পড়ে। সোনা-কপালি হরবোলা ও নীলডানা হরবোলা।

সোনা-কপালি হরবোলা লম্বায় ১৮-১৯ সেন্টিমিটার। কপাল কমলা-হলুদ বা সোনালি। কপালের নিচ থেকে দেহের উপরাংশ উজ্জ্বল সবুজ। ডানার ওপরের দিকটায় কিঞ্চিৎ আসমানি রং। চোখের দুই পাশ থেকে মুখ ও গলা কালো। চিবুক বেগুনি-নীল। গলার নিচ থেকে বুকের উপরাংশে রয়েছে সোনালি-হলুদ রেখা। ঠোঁট কালো, অগ্রভাগ বাঁকানো। চোখের মণি গাঢ় বাদামি। পা ও পায়ের পাতা কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে সামান্য তফাৎ রয়েছে। স্ত্রী পাখির কপালের সোনালি পালক পুরুষের তুলনায় হালকা। এ ছাড়াও স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য ছোট।

প্রধান খাবার: ছোট ফল, ফুলের মধু ও পোকামাকড়। বিশেষ করে শুঁয়াপোকার প্রতি আসক্ত বেশি। শিমুল ফুলের মধুও এদের প্রিয়। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে আগস্ট। গাছের উচ্চ শিখরে বাটি আকৃতির বাসা বাঁধে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন কাঠি, পাতা, নরম ঘাস ও তন্তু। ডিম দেয় ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, 07/12/2013

মন্তব্য করুন: