উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস | Northern Pintail | Anas acuta
উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী পাখি। সুলভ দর্শন। শীতে দেশের উপকূলীয় এলাকার নদ-নদী, হাওর-বাঁওড় ও বিল-ঝিলে ছোট-বড় ঝাঁকে বিচরণ করে। বাংলাদেশ ছাড়াও উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও ভারত পর্যন্ত এর বিচরণ ক্ষেত্র। বিশ্বে বিপন্মুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত। এরা ভোরে ও গোধূলিলগ্নে শিকারে ব্যস্ত থাকে। শিকার খোঁজে মাথা ডুবিয়ে, লম্বা লেজটা উঁচানো থাকে তখন। পুরুষ পাখি ডাকে, প্রিউ…প্রিউ সুরে। স্ত্রী পাখির সুর ভিন্ন। ডাকে, কিউয়্যাহ…কিউয়্যাহ সুরে। স্বভাবে শান্ত। প্রজনন মৌসুমে নিজ বাসভূমিতে প্রত্যাবর্তন করে। পাখির বাংলা নাম: ‘উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস’, ইংরেজি নাম: ‘নর্দার্ন পিনটেইল’(Northern Pintail), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘আনাস আক্যুটা’(Anas acuta), গোত্রের নাম: ‘আনাটিদি’। পিনাকৃতির লেজের কারণে এদেরকে অনেকে ‘পিনপুচ্ছ’ নামেও ডাকে। লম্বায় পুরুষ পাখি ৫৯ থেকে ৭৬ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ৫১ থেকে ৬৪ সেন্টিমিটার। গলা সরু। পুরুষ পাখির লেজ লম্বা ও চোখা। প্রজনন মৌসুমে রঙ বদলায় পুরুষ পাখির। তখন মাথা, মুখ ও ঘাড় চকোলেট-বাদামি রঙ ধারণ করে। ঘাড়ের দু’পাশ দিয়ে সাদা পট্টি সরু থেকে চওড়া হয়ে বুক পেট অবধি নেমেছে। পিঠ তামাটে।ডানার কিনারের পালক তামাটে-সবুজ মিশ্রণ। ডানার ঢাকনি কালো। দেহের পাশ থেকে দেখা যায় মিহি ধূসরাভ রেখাবৃত। বস্তিপ্রদেশ কালো। স্ত্রী পাখির রঙ ও আকার ভিন্ন। মাথা ও ঘাড় বাদামি। শরীর সামান্য পীতাভ রঙের ওপর চিত্রবিচিত্র আঁকা। আকারে ছোট। উভয়ের ঠোঁট সিসে-ধূসর। প্রধান খাবার: জলজ উদ্ভিদ। ছোট পোকামাকড়েও অরুচি নেই। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর। সাইবেরিয়া-মঙ্গোলিয়ার উত্তরাঞ্চলের আর্দ্রভূমিতে ঘাস-লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৭-৯টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২২ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 08/11/2013
ধলাগলা মাছরাঙা | White throated Kingfisher | Halcyon smyrnensis
ধলাগলা মাছরাঙা | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন পর্যন্ত। দেশে এদের বেশিরভাগ বিচরণ উপকূলীয় অঞ্চলের জলাশয়ের কাছাকাছিতে। এ ছাড়াও শুষ্ক পাতাঝরা বনের প্রান্তদেশে কিংবা আবাদি জমির আশপাশে উড়ে বেড়াতে দেখা যায়। দেখা যায় বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকতেও। বিচরণকালীন সময়ে একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায়ও দেখা যায়। কণ্ঠস্বর কর্কশ। উড়তে উড়তে চেঁচিয়ে ওঠে ‘কে-কে-কে’ সুরে। মনটা ভালো থাকলে শিস মেরে ‘কিলিলিলি… ’ সুরে গান গায়। বিশ্বে ব্যাপক নজরে পড়ে বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে বিপন্মুক্ত বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলাগলা মাছরাঙা’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট থ্রোটেড কিংফিশার’ (White-throated Kingfisher), বৈজ্ঞানিক নাম: Halcyon smyrnensis | বাংলাদেশে মোট ১২ প্রজাতির মাছরাঙা দেখা যায়। এরা লম্বায় ২৮ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড় গাঢ় বাদামি রঙের। পিঠ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত উজ্জ্বল নীল। সবুজ ডানার উপরের দিকটা গাঢ় বাদামি, মাঝখানে কালচে পালক। থুতনি, গলা ও বুকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধবধবে সাদা। বুকের নিচ থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত কালচে বাদামি। শক্তপোক্ত ঠোঁট কমলা লাল। চোখের মণি বাদামি, বলয় লালচে। পা ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে তেমন কোনো তফাৎ নেই। প্রধান খাবার: ছোট ইঁদুর, পঙ্গপাল, ফড়িংসহ অন্যান্য পোকামাকড়। মাছের প্রতিও আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। জলাশয়ের খাড়া পাড়ে নিজেরা গর্ত খুঁড়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/08/2014
সুন্দরী প্রিনা | Graceful Prinia | Prinia gracilis
সুন্দরী প্রিনা | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। স্লিম গড়ন। ভোলাভালা চেহারা। দেহের তুলনায় লেজ খানিকটা লম্বা। সাংঘাতিক চঞ্চল হলেও উড়তে খুব পারদর্শী নয়। দ্রুত উড়তে গেলে মনে হয় নিচে ঝুলে পড়বে। কিন্তু ভাবেসাবে দেখায় খুব উড়তে পারে। তবে এরা খুব আমুদে পাখি। সারাদিনই নেচেগেয়ে কাটাতে পছন্দ করে। খাদ্যের সন্ধানে গাছগাছালিতে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়ায়। ছোট ছোট পোকামাকড় সংগ্রহ করে খায়। বেশিরভাগই একাকী বিচরণ করে। মূলত এরা ঘাসবনের পাখি। এ ছাড়াও শুষ্ক অঞ্চল, বিশেষ করে সারিবদ্ধ গাছপালা কিংবা কাঁটা গাছে বিচরণ রয়েছে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। কণ্ঠস্বর সুমধুর। ‘টিস..টিস..’ কণ্ঠে ডাকে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ব্যতীত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। এ ছাড়াও মিসর, ইরাক, ইসরাইল, সোমালিয়া ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃতি রয়েছে। বিশ্বব্যাপী এরা হুমকি নয়, অবস্থান মোটামুটি সন্তোষজনক। পাখির বাংলা নাম: ‘সুন্দরী প্রিনা’| ইংরেজি নাম: ‘গ্রেসফুল প্রিনিয়া’, (Graceful Prinia) | বৈজ্ঞানিক নাম: Prinia gracilis| এরা ‘চটপটে বুনো টুনি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১০-১৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৬-৮ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন হলেও পুরুষ পাখির রঙে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখি বাদামি রঙের। মাথা, ডানা ও লেজে গাঢ় বাদামি টান। গলা বাদামি সাদা। স্ত্রী পাখি হালকা বাদামি। উভয়ের লেজ লম্বা, কালচে বাদামি। দেহতল বাদামি-সাদা। ঠোঁট খাটো, গোলাপি কালচে। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা হলুদাভ ত্বক বর্ণের। প্রজনন পালক ভিন্ন। প্রধান খাবার: গোবরে পোকা, কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি-জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। ভূমি থেকে দুই-তিন মিটার উঁচুতে লতাপাতা পেঁচিয়ে থলে আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১০-১১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 30/03/2018
তামাটে কাঠকুড়ালি | Bay Woodpecker | Blythipicus pyrrhotis
তামাটে কাঠকুড়ালি | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন আবাসিক পাখি। দেশে কালেভদ্রে দেখা মেলে। বিচরণ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার বাঁশবনে কিংবা ঘন প্রশস্ত পাতার চিরহরিৎ অরণ্যে। নিজেদের আড়ালে-আবডালে রাখতে পছন্দ করে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত। এতদাঞ্চলে ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বনে অথবা পার্বত্য অরণ্যে দেখা মেলে। এ ছাড়াও হিমালয়াঞ্চলে এদের বিচরণ রয়েছে। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় একাকী, জোড়ায় কিংবা পারিবারিক দলে। দিনভর মৃত গাছের কাণ্ডে অথবা শ্যাওলায় ঢেকে থাকা গাছের কাণ্ডে ধারালো মজবুত ঠোঁট চালিয়ে খাবার খোঁজে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্নমুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। এছাড়াও প্রজাতিটি বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘তামাটে কাঠকুড়ালি’, ইংরেজি নাম: ‘বে উডপেকার’(Bay Woodpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: Blythipicus pyrrhotis | এরা ‘লালমাথা কাঠঠোকরা’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কম-বেশি ২৭ সেন্টিমিটার। ওজন ১৭০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। তাছাড়া স্ত্রী পাখি আকারে খানিকটা ছোট। পুরুষ পাখির কান ঢাকনি ও ঘাড়ের পাশে টকটকে লাল পট্টি দেখা যায়। উভয়ের মাথা বাদামি লাল। পিঠে লালের ওপর বাদামি ডোরা। কাঁধ ঢাকনি ও ডানায় প্রশস্ত কালচে বাদামি ডোরা। দেহতল কালচে বাদামি। ঠোঁট ফ্যাকাসে। চোখ অনুজ্জ্বল গাঢ় লাল। পা কালচে বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা ভিন্ন। প্রধান খাবার: সাদা পিঁপড়া ও গোবরে পোকার লার্ভা। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। গাছের কাণ্ডে নিজেরা গর্ত বানিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/10/2015
আমুর শাহিন | Amur Falcon | Falco amurensis
আমুর শাহিন | ছবি: ইন্টারনেট পাখির নাম ‘আমুর শাহিন’। আমুরল্যান্ডে বিচরণ আধিক্য বিধায় হয়তো এই নাম ওদের। এরা উপমহাদেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। সুদর্শন, স্লিম গড়নের পাখি। দেখতে কিছুটা ককাটিল পাখিদের মতো। পুরুষদের চেহারা চকচকে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ; ভিন্ন বর্ণের। প্রাকৃতিক আবাসস্থল খোলা মাঠপ্রান্তর, খোলা বনাঞ্চল। শিকারি পাখি হলেও স্বভাবে হিংস নয়। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আমুরল্যান্ড, ট্রান্সবিকালিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব সাইবেরিয়া, উত্তর-পূর্ব মঙ্গোলিয়া উত্তর-পূর্ব চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়, উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে আইসিইউএন এদের শনাক্ত করেছে তাই। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘আমুর শাহিন ’, ইংরেজি নাম: ‘আমুর ফ্যালকন’, (Amur Falcon), বৈজ্ঞানিক নাম: Falco amurensis | এরা ‘লালপা তুরমুতি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ৩০-৩৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৬৫-৭৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৯৭-১৫৫ গ্রাম। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। চেহারায় বিস্তর তফাৎ। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ গাঢ় ধূসর। ডানা খানিকটা লম্বা। দেহতল ধূসর। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত লাল। চোখের বলয় কমলা হলুদ। ঠোঁটের অগ্রভাগ কালচে বাঁকানো, গোড়া কমলা হলুদ। পা লালচে কমলা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির চেহারা ভিন্ন। শরীরে ধূসর, হলুদ, সাদা, বাদামির মিশ্রণ ছিট। বাদবাকি পুরুষের মতো। প্রধান খাবার: ঘাসফড়িং, পতঙ্গ, ছোট পাখি ও ছোট সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। গাছের উঁচু ডালে চিকন ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। মাস খানেকের মধ্যেই শাবক স্বাবলম্বী হয় এবং বাবা-মাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/10/2017
ছোটকান পেঁচা | Short Eared Owl | Asio flammeus
ছোটকান পেঁচা | ছবি: ইন্টারনেট ভয়ঙ্কর দর্শন। গোলাকার চোখ। গোলাকার শারীরিক গঠনও। স্বভাবে হিংস নয়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে বাংলাদেশে। নিশাচর পাখি হলেও রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসার ঘণ্টা খানেক আগেই শিকারে বের হয়। প্রশস্ত তৃণভূমি, মোহনা অঞ্চল, কৃষি জমি, বালিয়াড়ি কিংবা পাহাড়ি অঞ্চলে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। ঘন জঙ্গল এদের পছন্দ নয়। একাকি জোড়ায় কিংবা ছোট দলে দেখা যায়। মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে উড়ন্ত পোকামাকড় ইঁদুর বা সরীসৃপজাতীয় প্রাণীর গতিবিধি লক্ষ্য করে। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোটকান পেঁচা’, ইংরেজি নাম: ‘শর্ট ইয়ার্ড আউল’, (Short Eared Owl), বৈজ্ঞানিক নাম: Asio flammeus | দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৩-৪৩ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ১০৫-১০৭ সেন্টিমিটার। ওজন পুরুষ পাখি ২০০-৪৫০ গ্রাম। স্ত্রী পাখির ওজন ২৮০-৫০০ গ্রাম। পুরুষের চেয়ে স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। গায়ের রঙে সামান্য পার্থক্যও রয়েছে। মাথা বড়। কান খাটো। বাইরে থেকে নজরে পড়ে না। গোলাকার মুখ ধূসরাভ সাদা। পিঠে কালো-সাদা-বাদামি বুটিক। কারো কারো গায়ে হলদে-তামাটে মিশ্রণ দেখা যায়। লেজ খাটো। দেহের নিচের দিকে হলদে সাদার সঙ্গে কালো রেখাযুক্ত। গোলাকার চোখের তারা সালফার-হলুদ। কখনো কখনো উজ্জ্বল হলুদ হয়। চোখের কোটর কালো। ভ্রু সাদা। ঠোঁট খাটো, কালো। পা পালকে আবৃত। পায়ের আঙ্গুল সাদাটে ক্রিম ফ্যাকাসে। নখ কালো। প্রধান খাবার: ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, খরগোশ, বাদুর, ফড়িং, তেলাপোকা, টিকটিকিসহ অন্যান্য সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম উত্তর গোলার্ধে মার্চ থেকে জুন। অন্যান্য অঞ্চলে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। মরা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে অথবা শুকনো মাটিতে ঘাস-লতা বিছিয়ে গড়ে ৪-৭টি ডিম পাড়ে। কোনো কোনো পেঁচাকে ৪-১২টি ডিম পাড়তে দেখা যায়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৪-২৯ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে মাসখানেক লেগে যায়। বয়ঃপ্রাপ্ত হতে সময় লাগে এক বছর। গড় আয়ু ১৩ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 04/11/2016
কালাপেট পানচিল | Black bellied Tern | Sterna acuticauda
কালাপেট পানচিল | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। সুচালো স্লিম আকৃতির গড়ন। দেখতে মন্দ নয়। উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে এদের দেখা মিললেও মূলত এরা সামুদ্রিক পাখি। হ্রদ কিংবা নদ-নদীতে বিচরণের পাশাপাশি দেখা মেলে বালুময় দ্বীপাঞ্চলেও। এ ছাড়া কৃষিজমিতে বিচরণ রয়েছে। মিঠা জলের চেয়ে লবণ জলে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণই এটি। বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে। কলোনি টাইপ বাসা বাঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে। স্বভাবে শান্ত। ঝগড়াঝাটি পছন্দ নয়। তবে নিজেদের মধ্যে কমবেশি ঝগড়া বাধে। এ সময় বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’ সুরে। শিকারি পাখি ব্যতিরেকে এদেরকে পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা বিরক্ত করে না। ফলে এরা দেশে মোটামুটি ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়া পর্যন্ত। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এদের অবস্থান কিছুটা ভালো। পাখির বাংলা নাম: ‘কালাপেট পানচিল’, ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক-ব্যালিড টার্ন’ (Black-bellied Tern), বৈজ্ঞানিক নাম: Sterna acuticauda | এরা ‘কালো গাংচিল’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্যে ৩২-৩৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রজনন পালক ভিন্ন। মাথায় টুপি আকৃতির ঘন কালো পালক, যা ঘাড়ের উপরিভাগ অবধি নেমে গেছে। পিঠ, ডানা ও লেজ সাদাটে ধূসর। ডানা এবং লেজের অগ্রভাগ সরু। গলা সাদা। বুক ধূসর কালো। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত গাঢ় কালো। ওড়ার পালক সাদা। চোখের কালো। হলুদ ঠোঁটের গোড়ার দিক মোটা হলেও প্রান্তটা সুচালো। পা ও আঙ্গুল কমলা হলুদ। প্রধান খাবার: ছোট মাছ। এ ছাড়াও বালুচরে ঘুরে পোকামাকড়, সরীসৃপ, শুককীট খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম ফ্রেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। জলাশয়ের কাছাকাছি বেলাভূমি এলাকায় ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২২-২৩ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে ৪-৫ সপ্তাহ সময় লাগে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 26/02/2016