ছোট বাবুইবাটান | Small pratincole | Glareola lactea
ছোট বাবুইবাটান | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন, স্থানীয় প্রজাতির পাখি ‘ছোট বাবুইবাটান’। বাংলাদেশ ছাড়াও দেখা মেলে ভারত, পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে বালুচরে। পদ্মা ও যমুনার চরে ব্যাপক দর্শন মেলে। এ ছাড়াও নদ-নদী কিংবা মোহনার দ্বীপাঞ্চলে অথবা সৈকতের বেলাভূমিতে শিকার খুঁজে বেড়াতে দেখা যায়। হাঁটাহাঁটি করে খুব দ্রুততার সঙ্গে। আবার অনেকে মিলে জলের কিনারে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। একটা সময় এসে একেবারেই চুপচাপ থাকে, দূর থেকে দেখলে মনে হয় তখন বুঝি ওরা প্রার্থনারত রয়েছে। ওড়ে খুব ক্ষিপ্রতার সঙ্গে। তবে সোজাসুজি না উড়ে এঁকেবেঁকে ছান্দসিক তালে ওড়ে। তেমনিভাবে উড়ে উড়ে এরা শিকারের পিছু নেয়। মানুষ অথবা অন্য যে কোনো বন্যপ্রাণী ওদের বাসার কাছাকাছি গেলে মাথার ওপর দিয়ে চেঁচিয়ে চক্কর দিতে থাকে। এতে করে ওরা আরো বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং ওদের বাসার অবস্থান শনাক্ত হয়ে যায়। আর শত্রুপক্ষ সে সুবাদে ওদের ডিম-বাচ্চার ক্ষতি করার করার যথেষ্ট সুযোগ পেয়ে যায়। যার ফলে ওদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটে ব্যাপক। ছোট বাবুইবাটানদের কণ্ঠস্বর সুমধুর নয়। ‘টিক টিক টিক… টাক টাক টাক’ আওয়াজ করে। উত্তেজিত হলে কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসে। স্বর তখন আরো কর্কশ হয়ে ওঠে। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট বাবুইবাটান’, ইংরেজি নাম: ‘স্মল প্রাটিনকোল’, (Small pratincole), বৈজ্ঞানিক নাম: Glareola lactea| লম্বায় ১৬-১৭ সেন্টিমিটার। কপাল হালকা বাদামি। চোখের কোণ থেকে ঠোঁটের গোড়া পর্যন্ত কাজলটান। ঠোঁট নীলাভ কালো, গোড়ার দু’পাশ লাল। চোখের বলয় সাদা, তারা নীলাভ। পিঠ বালুধূসর। ডানার দিকে হালকা বাদামির ওপর লালচে আভা। ডানার প্রান্ত কালো। ওড়ার পালক কালো। লেজের কিনারটা কালো। দেহতল সাদা। পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার কীটপতঙ্গ। বিশেষ করে উড়ন্ত কীটপতঙ্গের প্রতি আসক্তি বেশি। প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে মার্চ। কোনো কোনো অঞ্চলে মার্চ থেকে এপ্রিলে বাসা বাঁধে (অঞ্চলভেদে সময়ের হেরফের লক্ষ্য করা যায়)। বাসা বাঁধে বেলাভূমি কিংবা পাথুরে এলাকায়। একাকী কিংবা কলোনি টাইপের বাসা বানাতেও দেখা যায়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 19/09/2014
পাতি চখাচখি | Common Shelduck | Tadorna tadorna
পাতি চখাচখি | ছবি: ইন্টারনেট উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের বহু দেশেই বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। এছাড়াও ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, চীন, তিব্বত, জাপান, মালয়েশিয়া, ইরান ও ইরাকে দেখা যায়। বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও সুলভ দর্শন। দর্শনীয় চেহারাও বটে। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেশের প্রায় বিভাগেরই নদ-নদীতে কম-বেশি বিচরণ করে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার সদ্য জেগে ওঠা চরাঞ্চলে কিংবা মোহনাতে বেশি পরিলক্ষিত হয়। খাদ্যের সন্ধানে বড় বড় দলে বিচরণ করে অগভীর জলাশয়ে। শিকার কৌশল দেশীয় গোত্রের পাতি হাঁসের মতো। সাধারণত এরা নিরীহ গোত্রের পাখি। নিজেদের মধ্যেও কোনো ধরনের কলহ-বিবাদ ঘটায় না। বলা যায় সারাদিন চুপচাপ কাটিয়ে দেয়। পুরুষ পাখি পারতপক্ষে তেমন ডাকাডাকিও করে না। স্ত্রী পাখির মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে কালেভদ্রে নিচু গলায় শিস কাটে। সঙ্গী জবাব দেয় তখন ‘গ্যাগ-গ্যা-গ্যা’ সুরে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। শিকারি দ্বারা নির্যাতিত হওয়া সত্ত্বেও প্রজাতিটি দেশে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা আরেকটু সদয় হলে বোধ করি এদের আগমন আরো বেশি বেশি ঘটবে দেশে। পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি চখাচখি’, ইংরেজি নাম: ‘কমন শেল ডাক’ (Common Shelduck), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘টাডোর্না টাডোর্না’, (Tadorna tadorna) গোত্রের নাম: ‘আনাটিদি’। অনেকে ‘শাহ চখা বা সাচ্কা’ নামেও ডাকে। দেশে দুই প্রজাতির চখাচখি নজরে পড়ে। যথা: খয়রা চখাচখি ও পাতি চখাচখি। এরা লম্বায় ৫৮-৬৭ সেন্টিমিটার। ওজন ১ কেজি। কপাল, মাথা ও গলা ধাতব সবুজ। ঠোঁট রক্ত লাল, গোড়া স্ফীত লাল পুঁটলি। বুক ও ঘাড়ে সাদার ওপর পাটকিলে চওড়া বন্ধনী। পিঠ ধবধবে সাদা। ডানা কুচকুচে কালো। লেজ ও কোমর সাদা। দেহতল ধবধবে সাদা। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা মেটে-লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি চেহারা ও আকার ভিন্ন। পুরুষের চেয়ে স্ত্রী পাখি খানিকটা ছোট। এ ছাড়াও স্ত্রী পাখির বুকে পাটকিলে বর্ণের প্রান্তটা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মাথার তালু, গলার পেছন ও পিট কালচে-বাদামি। প্রধান খাবার: জলজ কীট, ছোট শামুক, চিংড়ি, ধান, শৈবাল, কেঁচো, সরীসৃপ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মে-জুন। মধ্য এশিয়ার পাহাড়ের খাড়া দেয়ালে প্রাকৃতিক ফাটলে কিংবা মাটির প্রাকৃতিক গর্তে পালক দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৬-১০টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 18/04/2014
টুনটুনি | Common Tailor bird | Orthotomus sutorius
টুনটুনি | ছবি: ইন্টারনেট অতি সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। দেশের এমন কোনো গাঁও-গ্রাম বা শহর নেই, যেখানে এদের সাক্ষাত পাওয়া যাবে না। খোদ রাজধানীতেও দেখা মেলে। ছেলে-বুড়ো সবাই প্রজাতির সঙ্গে পরিচিত। নানা কারণেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণটি হচ্ছে আমাদের শিশুসাহিত্যে ‘টুনটুনি’ পাখি পাকাপোক্তভাবে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। ছড়া-গল্প-গান কোথায় নেই টুনটুনি? শুধু কি তাই? এরা আমাদের বসতঘরের গা-ঘেঁষা ঝোপজঙ্গলে সব সময়ই লাফিয়ে বেড়ায়। কিংবা নাচানাচি করে লেজ উঁচিয়ে। গান শোনায় ‘টিন-টিন-টিন-টিন বা কিট-কিট-কিট-কিট-’ আওয়াজ করে। মায়াবী চেহারা। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। স্থিরতা নেই খুব একটা। যেন একদণ্ড বসার সুযোগ নেই কোথাও। এই আছে তো এই নেই। তবে যেখানেই থাকুক না কেন এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। জোড়ের পাখিটি সামান্য দূরে থাকলেও ডাকাডাকি করে ভাবের আদান-প্রদান চালিয়ে নেয়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি নানা কসরত করে স্ত্রী পাখির মন ভোলাতে। বাসা বাঁধে বেশ পরিপাটি করে। দুটি পাতাকে একত্রিত করে ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে বাসা বাঁধে। অনেকটা দর্জির কাপড় সেলাই করার মতো। ইংরেজি নামকরণেও সেই রকমটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ পাখির প্রধান শত্রু বাড়ির বিড়াল। মাটির কাছাকাছি বাসা বাঁধার কারণে বিড়াল সে সুযোগটি নেয়। তথাপিও দেশে এদের অবস্থান সন্তোষজনক। কারণ এরা বিড়াল দ্বারা আক্রান্ত হলেও মানুষ দ্বারা নির্যাতিত হয় না খুব একটা। মানুষ এদের যথেষ্ট মায়া করে। পাখির বাংলা নাম: ‘টুনটুনি’, ইংরেজি নাম: ‘কমন টেলর বার্ড’ (Common Tailor-bird), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘অর্থোটোমাস স্যুটোরিয়াস’ (Orthotomus sutorius)। লম্বায় ১২-১৩ সেন্টিমিটার। মাথা পাটকিলে। পিঠ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত জলপাই রঙের। ডানা ফিকে বাদামি। দেহতল সাদাটে। চোখ ফিকে বাদামি। ঠোঁট লম্বা সুচাল। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য খাটো। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির লেজ খানিকটা লম্বা হয়ে যায়। প্রধান খাবার: ফুলের মধু, ছোট পোকামাকড়। পারত পক্ষে মাটিতে নেমে খাবার সংগ্রহ করে না। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর। বাসা বাঁধে মাটির কাছাকাছি গাছের পাতায়। সেলাই করা বাসার ভেতর নরম তন্তু বা তুলা দিয়ে পরিপাটি করে ৩-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় নেয় ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/05/2014
জিরিয়া | Kentish plover | Charadrius alexandrinus
জিরিয়া | ছবি: ইন্টারনেট অতি সুলভ দর্শন, পান্থ পরিযায়ী পাখি (চলার পথের প্রজাতি)। শীত আগমনের পূর্বেই পরিযায়ী হয়ে আসে উত্তর ও মধ্য এশিয়া থেকে। মূলত এরা সৈকতচারী পাখি। ঠিক অক্টোবরের দিকে আমাদের দেশে এসে আশ্রয় নেয় উপকূলীয় এলাকার বনাঞ্চলের জলাশয়ের কাছাকাছি কিংবা মোহনা ও দ্বীপাঞ্চলের বালুকারাশিতে। বিচরণ করে পাহাড়ি এলাকার ঝর্ণার ধারেও। অনেক সময় উপকূলীয় এলাকার লোকালয়ের হালচাষ করা জমিতেও বিচরণ করতে দেখা যায়। এরা ছোট-বড় কিংবা মিশ্র দলে শিকারে বের হয়। দলে অনেক সময় হাজারখানেক পাখিও দেখা যায়। সারাদিন বালুকারাশি বা বালুকাদাময় এলাকায় পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। খাদ্যের সন্ধানে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করতে দেখা যায়। চলার পথে মাঝে মাঝে ‘টুউ-ইট টুউ-ইট ইট্টাপ ইট্টাপ’ সুরে ডাকে। সুর তেমন শ্রুতিমধুর নয়। ডানা লম্বা এবং ছুঁচাল বিধায় উড়তে পারে বেশ দ্রুত। দৌড়াতেও পারে দ্রুতগতিতে। বেশ মিশুক পাখি। সৈকতচারী অন্য সব প্রজাতি পাখির সঙ্গে মিলেমিশে কাটিয়ে দেয়। বিশ্বে বিপন্মুক্ত। বাংলাদেশেও ভালো অবস্থানে রয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘জিরিয়া’, ইংরেজি নাম: ‘কেন্টিশ প্লোভার’, (Kentish plover), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘চারাড্রিয়াস আলেকজান্ড্রিনাস’ (Charadrius alexandrinus)। এরা ‘ভাঙ্গা অঙ্গুরী বাটান’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি লম্বায় ১৫-১৭ সেন্টিমিটার। শীতে রং বদলায়। মাথা লালচে বাদামি। ভ্রু সাদা। ঘাড়ে সাদা বন্ধনী। বন্ধনীটা অনেক সময় অপূর্ণ দেখায়। পিঠ ও ডানা ধূসরাভ-বাদামি। ওড়ার পালক ধোঁয়াটে। বুকের পাশ কেটে বাদামি ছোপ ডানার সঙ্গে মিশেছে। যা প্রজনন মৌসুমে কালো দেখায়। বুক থেকে লেজের তলদেশ পর্যন্ত সাদা। ঠোঁট শক্তপোক্ত কালো। ডাগর ডাগর চোখ কালো রঙের। লম্বা, কালচে পা জলের ভেতর দিয়ে হাঁটতে উপযোগী। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: শুককীট, ছোট কাঁকড়া ও অন্যান্য পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। উত্তর ও মধ্য-এশিয়ার নিজস্ব বাসভূমিতে জলাশয়ের কাছাকাছি মাটিতে সামান্য খোদল করে অথবা সমতল ভূমিতে বাসা বাঁধে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সরাসরি মাটিতে ডিম পাড়তে। উল্লেখ্য, পাখি পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ জানিয়েছেন তারা নাকি উপমহাদেশের সিন্ধু, বেলুচিস্তান, শ্রীলঙ্কা, গুজরাট ও উত্তর প্রদেশে এদের বাসা বাঁধতে দেখেছেন। এরা ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটাতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/04/2014
মরিচা কপাল ডোরাডানা | Rusty fronted Barwing | Actinodura egertoni
মরিচা কপাল ডোরাডানা | ছবি: ইন্টারনেট মাথায় চমৎকার ঝুঁটি। দেহের তুলনায় লেজ খানিকটা লম্বা। দেখতে বুলবুলি পাখির মতো মনে হতে পারে। আসলে এরা বুলবুলি প্রজাতির কেউ নয়। প্রজাতিটি দেশের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও যত্রতত্র দেখা যায় না। প্রাকৃতিক আবাসস্থল নাতিশীতোষ্ণ এলাকার ক্রান্তীয় আর্দ্র পার্বত্য অরণ্য। এ ছাড়া লতাগুল্মের ঝোপ কিংবা সুঁচালো চিরহরিৎ বনে বিচরণ রয়েছে। এরা একাকি বিচরণ করে না বললেই চলে। ছোট দলে বিচরণ করে। দলে কমপক্ষে ৬ থেকে ১২টি পাখি দেখা যায়। শুধু প্রজনন মৌসুমে দলত্যাগ করে জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। এদের চেহারা রাগীরাগী হলেও স্বভাবে হিংস নয়। দলের সবাই একত্রে বা মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল (হিমালয়ের পাদদেশ), ভুটান, পশ্চিম মিয়ানমার, চীন (ইউনান) পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান খুব বেশি সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘মরিচা কপাল ডোরাডানা’, ইংরেজি নাম: ‘রাস্টি ফ্রন্টেড বারউইং’ (Rusty-fronted Barwing), বৈজ্ঞানিক নাম: Actinodura egertoni | এরা ‘লালমুখ দাগিডানা’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ২২-২৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৩-৩৮ গ্রাম। কপাল মরিচা লাল। মাথা ও ঝুঁটি ডার্ক-বাদামি। পিঠ পাটকিলে। ডানা পাটকিলের সঙ্গে সাদা-কালো মিশ্র ডোরাদাগ। লেজ পাটকিলে হলেও অগ্রভাগ কালচে, নিচের পালকের অগ্রভাগ সাদা। থুতনি মরিচা-লাল। দেহতল বাদামি-ধূসর। ঠোঁট খাটো হলদেটে ত্বক বর্ণ। পা ত্বক বর্ণের। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তেমন কোনো পার্থক্য নেই। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, ফড়িং, বীজ, কচিপাতা। ছোট ফলের প্রতিও আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুলাই। ভূমি থেকে ৬ মিটার উচ্চতার মধ্যে কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে। বাসা বাঁধতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস-লতা, শৈবাল, ফার্ন, শিকড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে কত দিন সময় লাগে সে তথ্য জানা যায়নি। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদওপরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/12/2016
কালো ঝুঁটি শালিক | Pale bellied Myna | Acridotheres cinereus
কালো ঝুঁটি শালিক | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। গ্রাম-গঞ্জে দেখা মেলে। হুবহু ঝুঁটি শালিকের মতো দেখতে। শুধু গায়ের রঙে পার্থক্য। আকার আকৃতি ঝুঁটি শালিকের মতো। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। চাষাবাদ চলছে এমন ক্ষেত-খামারে বিচরণ খানিকটা বেশি। এ ছাড়াও মুক্ত এলাকায় নজরে পড়ে। গবাদিপশুর পিঠে চড়ে পোকামাকড় খেতে দেখা যায়। বেশির ভাগই জোড়ায় দেখা যায়। দেখা যায় একাকী কিংবা ছোট দলেও। নজরে পড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায়ও। কণ্ঠস্বর কর্কশ। ঝগড়াটে স্বভাবের হলেও হিংস নয়। ভালো পোষ মানে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, পূর্ব তিমুর পর্যন্ত বিস্তৃতি রয়েছে। দেশে খুব বেশি নজরে না পড়লেও বিশ্বব্যাপী হুমকি নয় এরা। পাখির বাংলা নাম: ‘কালো ঝুঁটি শালিক’, ইংরেজি নাম: ‘পেল-বেলিড ময়না’ (Pale-bellied Myna), বৈজ্ঞানিক নাম: Acridotheres cinereus| এ ছাড়াও এরা ‘ধলাতলা শালিক’ ও ‘ধূসরপেট ঝুঁটি শালিক’ নামে পরিচিত। দেশে মোট ১১ প্রজাতির শালিক দেখা যায়। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। কপাল, মাথার তালু থেকে ঘাড়ের ওপরের অংশ মসৃণ কালো। কপাল খাড়া। ঠোঁটের গোড়া থেকে খাড়া ঝুঁটি। গলা-ঘাড় কালো মিশ্রিত ধূসর। পিঠ ও কোমর ধূসর-সাদা। ডানার পালক কালো। লেজের মধ্যখানে কালো মোটা দাগ। লেজের প্রান্তর সাদা। দেহতল ধুসর সাদা। ঠোঁট হলুদ। চোখের বলয় হলুদ। পা উজ্জ্বল হলুদ। প্রধান খাবার: পোকা-মাকড়। এ ছাড়া শস্যদানাও খেতে দেখা যায়। ভাত, পাউরুটি এসবও খায়। প্রজনন সময় গ্রীষ্মকাল। নদী বা খালের খাড়া পাড়ে গর্ত করে বাসা বাঁধে। এ ছাড়াও দালান-কোঠা, পুরনো পুলের ফোঁকরে বাসা বাঁধে। শুকনো ঘাস লতাপাতা ঢুকিয়ে ডিম পাড়ার উপযোগী করে নেয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/03/2017
বড় গুলিন্দা | Eurasian Curlew | Numenius arquata
বড় গুলিন্দা | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন পান্থ পরিযায়ী পাখি (চলার পথের পরিযায়ী)। আমাদের দেশে প্রচণ্ড শীতে আগমন ঘটে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে। ফিরে যায় এপ্রিলের প্রথম দিকেই। দেশে ফিরেই সংসারী হয় ওরা। আমাদের দেশ সাধারণত বিচরণ করে কাদা-বালিময় সমুদ্র সৈকতে। এ ছাড়াও নদ-নদীর মোহনায়, ম্যানগ্রোভ অরণ্যের পাশঘেঁষা জলাশয়ে কিংবা জোয়ার-ভাটা হয় এমন স্থানেও এদের বিচরণ রয়েছে। এরা লোনা-মিঠা উভয় ধরনের জলেই বিচরণ করে। দিবাচর পাখি। গোধূলিলগ্নের পূর্বেই শিকারে বিরতি টানে। বেশির ভাগই একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় শিকারে বের হয়। অদ্ভুত গড়নের লম্বা ঠোঁটটি নরম মাটি কিংবা পাথরের নিচে ঢুকিয়ে পোকামাকড় বের করে আনে। গর্তের ভেতর থেকে বের করে আনে ছোট ছোট কাঁকড়া। স্বভাবে হিংস্র নয়। সৈকতচারী অন্য প্রজাতির পাখিদের সঙ্গেও ঘুরেফিরে খাবার খায়। ডাকে মিষ্টি সুরে। উড়তে উড়তে ডাকে ‘ক্লু-ইট, ক্লু-ইট, কুউর-লিই, কার লিউ।’ ইংরেজি নামের শেষাংশের সঙ্গে ওদের ডাকের শেষাংশের হুবহু মিল রয়েছে। তাই অনেকে মনে করেন ‘কারলিউ’ শব্দ থেকে ইংরেজি নামের সূচনা হয়েছে। প্রজাতিটি আমাদের দেশে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। তার প্রধান কারণ শিকারি দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে না এরা। এ পাখির বাংলা নাম: ‘বড় গুলিন্দা’, ইংরেজি নাম: ‘ইউরেশিয়ান কারলিউ’, (Eurasian Curlew), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ন্যুমেনিয়াস আরকোয়াট’ (Numenius arquata), গোত্রের নাম : ‘স্কোলোপাসিদি’। এরা ‘কারলিউ’ বা ‘ইউরেশীয় গুলিন্দা’ নামেও পরিচিত। আবার অনেকের কাছে ‘চোপ্পা’ নামে পরিচিত। দেশের বিশিষ্ট প্রাণী বিজ্ঞানী ড. রেজা খান প্রণীত ‘বাংলাদেশের পাখি’ গ্রন্থে পাখিটিকে ‘বড় গুলিন্দা’ নামে অভিহিত করেছেন। প্রজাতিটি লম্বায় ৫৮-৬০ সেন্টিমিটার এবং ঠোঁট ১৭ সেন্টিমিটার। ঠোঁট অস্বাভাবিক লম্বা, নিচের দিকে বাঁকানো। মাথা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত হালকা বাদামি, তার ওপর কালো ডোরা দাগ। তবে পিঠের অংশ সাদাটে। ডানার নিচটা সাদা। দেহতল সাদা, রেখাযুক্ত। লম্বা পা ও আঙ্গুল ধূসর। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: ছোট মাছ, ছোট কাঁকড়া, পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। বাসা বাঁধে সাইবেরিয়া অঞ্চলের জলাশয়ের আশপাশের মাটিতে। সামান্য ঘাস-লতাপাতা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 04/04/2014