আবাবিল | Barn swallow | Hirundo rustica

5042
আবাবিল | ছবি: ইন্টারনেট

পবিত্র কোরআন শরিফের ‘সুরা ফিল’-এর ৩ নং আয়াতে একটি পাখির বর্ণনা আছে। পাখিটির নাম ‘আবা-বিল’। সেটিই আমাদের দেশের আবাবিল পাখি। সে কারণে পাখিটির প্রতি দুর্বলতাও সৃষ্টি হয়েছে। যেভাবে হোক এ পাখি চিনতে হবে। এর আগে কালো লেজচেরা যে পাখিকে আবাবিল পাখি হিসেবে জেনেছি, সেটি আসলে আবাবিল নয়। দেখতে অবিকল আবাবিলের মতো হলেও ওরা অন্য গোত্রের। যারা আবাবিল পাখি চেনেন না, তাদের ধারণা, ওরাই আবাবিল। বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, সাধারণত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবাবিল উত্তর-পূর্ব এশিয়া থেকে হিমালয় পেরিয়ে এ দেশে আসে। ফিরে যায় এপ্রিল থেকে মে নাগাদ। অর্থাৎ ৮-৯ মাস এ দেশে অবস্থান করে।

আগেই বলেছি, এ পাখির প্রতি দুর্বলতা পবিত্র কোরআনের উদৃব্দতি থেকে। কাজেই আবাবিল চেনা চাই-ই। খুব বেশি দূরে যেতে হয়নি এ পাখি দেখতে। বছর তিনেক আগে চর ইন্দুরিয়ায় গেছি। এটি রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) উপজেলায় অবস্থিত। আমার সঙ্গে ছিল অনুজ সাংবাদিক এবিএম রিপন। রায়পুর থেকে খানিকটা দূরে চর ইন্দুরিয়া। আগে কখনও যাওয়া হয়নি। এই প্রথম মেঘনার চরে গেছি। বিশাল চর। চারদিকে ধুধু বালুচর। রোদে পুড়ে খাঁ খাঁ করছে চরের বালুকারাশি। বালুকারাশির ওপর তীক্ষষ্ট সূর্যরশ্মি ছড়িয়ে পড়াতে দৃষ্টি দেওয়া কঠিন হয়ে গেছে। চোখ ধাঁধিয়ে উঠছে নিমেষেই। অনেক কষ্টে দৃষ্টি প্রসারিত করে খোলা প্রান্তরের আশপাশ দেখে নিচ্ছি। প্রকৃতিকে উপভোগ করার মুহূর্তেই আমার নজরে পড়েছে এক ঝাঁক লেজচেরা পাখি। ওরা চরের ওপর চক্কর দিচ্ছে। বসছে না কোথাও। দলছুট দু’একটি পাখি উড়ন্ত অবস্থায় পতঙ্গের পিছু নিচ্ছে।

প্রায় ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ছোঁ মেরে শিকার ধরছে। দৃশ্যটি মজাদার বটে। তাকিয়ে রয়েছি অনেকক্ষণ। ওদের বসার অপেক্ষায় রয়েছি। না হলে ভালো করে দেখা যাবে না। মিনিট পঁচিশেক অপেক্ষার পর সে সুযোগটি এসেছে। মাত্র দুটি পাখি চরের পাশে পত্রপল্লবহীন একটি গাছের ডালে বসেছে। সে সুবাদে ওদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। এ পাখির রঙ-রূপ আহামরি না হলেও দেখতে একেবারে মন্দ লাগেনি। পরখ করে দেখলে মায়াবী মুখটা ধরা পড়ে। বলে রাখা ভালো চর ইন্দুরিয়ার পাশেই ‘চর আবাবিল’ নামে একটি প্রসিদ্ধ স্থান রয়েছে। মিথ থেকে জানা গেছে, আবাবিল পাখিদের আধিক্যের কারণেই এ নামকরণ।

বাংলা নাম: ‘আবাবিল’, ইংরেজি নাম: ‘বার্ন সোয়ালো’ (Barn swallow), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘হিরানডো রাসটিকা’ (Hirundo rustica), গোত্রের নাম: ‘হিরানডিনিদি’।

লম্বায় ১২-১৩ সেন্টিমিটার। কপাল গাঢ় বাদামি। পিঠ পালিশ করা গাঢ় নীল। ডানার পালক, লেজ কালচে। চিবুক, গলা বাদামি। বুক মলিন সাদা। পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। আবাবিল পাখির লেজ চেরা। উড়লে চিলতে চাঁদের মতো দেখায়।

কীটপতঙ্গ আবাবিলের প্রধান খাবার। এরা উড়ন্ত অবস্থায় পতঙ্গ শিকার করে। দলবদ্ধভাবে শিকার খোঁজে। নদী, বিল, হাওর-বাঁওড় কিংবা বালুচরে এদের দেখা যায় বেশি। আবাবিল পাখি যদিও গায়ক পাখির আওতায় পড়ে না, তথাপি সুরটা মধুর। ‘চিক্- চিক্… লি উইট’ সুরে ডাকে। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুলাই। বাসা বানায় পুরনো দালানের ফাঁকফোকরে। ডিম পাড়ে দু-তিনটি। মৌসুমে দু’বার ডিম দিতে দেখা যায়। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই ডিমে তা দেয়। ফুটতে সময় নেয় ১৬-১৮ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক সমকাল, 18/08/2012

1 COMMENT

  1. আপনার লেখাগুলো পড়ি এবং নিয়মিত ফলো করি। এমন সুন্দর তথ্যসমৃদ্ধ বাংলায় লেখা পাওয়া বেশ কঠিন। আপনার জন্য অবিরাম শুভকামনা।

মন্তব্য করুন:

Please enter your comment!
Please enter your name here

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.