ধূসর তিতির পাখি | Grey Francolin | Francolinus pondicerianus

4407
ধূসর তিতির পাখি | ছবি: ইন্টারনেট

বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি। বিরল দর্শন। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ঢাকা বিভাগে কম বেশি দেখা যেত। দেখা যেত দেশের পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলেও। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। তবে ভারত, নেপাল (হিমালয়ের পাদদেশে) শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের সিন্ধু উপত্যকায় ও ইরান পর্যন্ত বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। বিশ্বে এরা বিপদমুক্ত হলেও বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

সাধারণত এরা পারিবারিক দলে বিচরণ করে। জোড়ায় ব্যতীত একাকী খুব কম দেখা যায়। বিচরণ করে শুকনো ভূমিতে বা বালিয়াড়িতে অথবা তৃণভূমিতে। খাদ্য সংগ্রহ করে পা দিয়ে মাটিতে আঁচড় কেটে। তীক্ষ ধারালো ঠোঁটের ব্যবহারও বাদ থাকেনি। খুব বেশি উড়তে পারে না। কিছুক্ষণ জোরেশোরে ডানা ঝাঁপটিয়ে বাতাসে ভেসে থাকে। নিচের দিকে ধাবিত হতে থাকলে পুনরায় ডানা ঝাঁপটাতে থাকে। নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে রাত কাটায় কাঁটাগাছের ডালে। অথবা ঝোপের নিচে চুপটি মেরে রাত কাটিয়ে দেয়। ভয় পেলে রাতেও উড়াল দেয়। ওই সময় ‘ক্ষির্র-ক্ষির্র-’ শব্দে আওয়াজ করে। চলাফেরায় খুব সতর্ক। স্বভাবে তত হিংস নয়। গায়ের রঙ ব্যতীত দেখতে অনেকটাই গৃহপালিত তিতির পাখির মতো।

পাখির বাংলা নাম: ‘ধূসর তিতির’, ইংরেজি নাম: ‘গ্রে ফ্রানকলিন’ (Grey Francolin), বৈজ্ঞানিক নাম: Francolinus pondicerianus | এরা ‘মেটে তিতির’ নামেও পরিচিত।

দৈর্ঘ্য ২৯-৩৪ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির গড় ওজন ২৬০-৩৪০ গ্রাম। স্ত্রী পাখির গড় ওজন ২৩০-৩১০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। মুখ অনুজ্জ্বল কমলা। পিঠ পীতাভ তামাটের ওপর ধূসর-বাদামি এবং বাদামি ডোরা সমস্ত পিঠে। পীতাভ গলায় অস্পষ্ট কালো মালা। দেহতলে কালচে-পীতাভ সংমিশ্রণ। বাঁকানো ঠোঁটের নিচের দিক কালচে। চোখ পিঙ্গল-বাদামি। পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল লাল। খাটো লেজের প্রান্ত পালক তামাটে।

প্রধান খাবার: পোকামাকড়, শস্যদানা, ঘাসের কচিডগা ও আগাছার বীজ। উইপোকা প্রিয় খাবার। রসালো ফলের প্রতি আসক্তি রয়েছে। সুযোগ পেলে ছোট সাপও শিকার করে। প্রজনন মৌসুম মার্চ সেপ্টেম্বর। বাসা বাঁধে ঝোপ-জঙ্গলের ভেতর কিংবা পাথরের আড়ালে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস কিংবা লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৯টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, ০১/০৫/২০১৫

মন্তব্য করুন: