দোয়েল | Oriental magpie robin | Copsychus saularis
দোয়েল | ছবি: উকিপিডিয়া স্থানীয় প্রজাতির অতি সুলভ দর্শন গায়ক পাখি। পাখিটার সঙ্গে দেখা মেলে যত্রতত্রই। বাড়ির আঙিনায় হরহামেশায় নেচে বেড়ায় দোয়েল। ঝিঙে লতা, আতা কিংবা পেয়ারা গাছের ডালে লেজ উঁচিয়ে শারীরিক কসরত দেখায়। গান গায় দারুণ মিষ্টিসুরে। গ্রীষ্মকালে খুব ভোরে ‘সুই..সুইস..’ সুরে শিস দিয়ে গান গায়। এ ছাড়াও দিনের যে কোনো সময়ে গান শোনা যায়। সেটি কিন্তু ভোরের গানের মতো সুরেলা নয়। যাদের খুব ভোরে শয্যাত্যাগের অভ্যাস রয়েছে কানখাড়া করে রাখলেই তারা এদের মিষ্টি সুর শুনতে পাবেন। অবশ্য যদি আপনি শহরবাসী না হন। তাই বলে ভাববেন না শহরে এদের বিচরণ নেই। আলবত আছে। দেশের কোথায় নেই দোয়েল! নেই শুধু সদ্য জেগে ওঠা চরাঞ্চলে এবং সুন্দরবনে। এতদস্থানে দোয়েল বিচরণ না করার প্রধান কারণই হচ্ছে জনবসতির অভাব। অর্থাৎ যেখানে মানুষ নেই, সেখানে দোয়েল নেই। সুন্দর এ পাখির বাংলা নাম: ‘দোয়েল’, ইংরেজি নাম: ‘ওরিয়েন্টাল ম্যাগপাই রবিন’ (Oriental magpie-robin), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘কপসাইচাস সলারিস’ (Copsychus saularis)| অঞ্চলভেদে এদের ডাকা হয় দৈয়াল, দহিয়াল, দইনাচানি ও দইকুলি ইত্যাদি। প্রজাতিটি লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি রং ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত নীলাভ-কালো। ডানার দু’পাশে সাদাটান। থুতনি, গলা ও বুক নীলাভ-কালো। পেট থেকে লেজের তলা পর্যন্ত ধবধবে সাদা। স্ত্রী পাখি রং নিষ্প্রভ। পুরুষ পাখির ক্ষেত্রে যে সব স্থানে কালো রং, স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে তা ধূসর। উভয়ের চোখের মণি, ঠোঁট, পা ও আঙ্গুল কালো। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ। এ ছাড়াও ফুলের মধু, ছোট নরম ফল ও খেজুরের রস খায়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে কিংবা দর-দালানের ফাঁকফোকরে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাসের চিকন ডগা, সরু শিকড় ও নরম খড়কুটো। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 15/08/2014
গুলিন্দা বাটান | Curlew sandpiper | Calidris ferruginea
গুলিন্দা বাটান | ছবি: ইন্টারনেট সৈকতচারী পান্থপরিযায়ী পাখি ‘গুলিন্দা বাটান’। এরা শীত শুরুর আগেই আমাদের দেশে এসে হাজির হয়। গুলিন্দা বাটান এ সময় উত্তর এশিয়া থেকে পরিযায়ী হয়ে আসে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশে এরা আশ্রয় নেয় উপকূলীয় এলাকার বেলাভূমি কিংবা নদ-নদীর মোহনাতে। বিচরণ করে নোনা কিংবা মিঠাজলের কাছাকাছি কর্দমাক্ত বালিতটে। এরা শান্ত স্বভাবের পাখি, চলাফেরা করে অত্যন্ত ভারিক্কিচালে। চঞ্চলতা এদের ভেতর নেই বললেই চলে। গায়ে পড়ে কারো সঙ্গে ঝগড়া বাধায় না। বরং অন্যসব বাটানের সঙ্গে মিলেমিশে শিকারে বের হয়। নদ-নদীতে জোয়ার এলে দলের সবাই মিলে জটলা বেঁধে উঁচু বালিময় স্থানে আশ্রয় নেয়। জল নেমে গেলে অর্থাৎ ভাটায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। তখন কাদামিশ্রিত বালিতটে পোকামাকড়, ছোট কেঁচো খুঁজে বেড়ায়। বিচরণকালীন আওয়াজ করে ‘ক্লিপ…ক্লিপ…’ সুরে। গুলিন্দা বাটান বাংলাদেশে সুলভ দর্শন এবং বিপদমুক্ত পাখি। এদের প্রতি শিকারিদের লোভ নেই মোটেও। ফলে দেশে নিরাপদেই বিচরণ করার সুযোগ পাচ্ছে এরা। যার কারণে শীত শেষ হয়ে গেলেও প্রজাতির কিছু পাখি আমাদের দেশে থেকেও যায়। অবশ্য ফি বছর দলের অন্যদের সঙ্গে ফিরে যায় ওরা। পাখির বাংলা নাম: ‘গুলিন্দা বাটান’, ইংরেজি নাম: ‘কারলিউ স্যান্ডপাইপার’ (Curlew sandpiper), বৈজ্ঞানিক নাম: Calidris ferruginea | এরা ‘বাঁকা চঞ্চু বাটান’ এবং ‘গুলিন্দাঠোঁটি চাপাখি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি লম্বায় ২০-২১ সেন্টিমিটার। দেহের উপরাংশ ধূসরাভ পাটকিলে। তার ওপর গাঢ় বাদামি রঙের ছোট ছোট ছোপ। লেজের উপরের দিকটা কালো, নিচের দিক সাদা। বুক ফিকে পাটকিলের ওপর চিকন রেখা। পেটের দিক সাদা। টানা চোখের চারপাশে সাদা বলয়। ঠোঁট কালো, লম্বা এবং নিচের দিকে বাঁকানো। লম্বা পা ধূসরাভ কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রজনন মৌসুমে রং বদলায়। ধূসরাভ পাটকিলে রং বদলে গাঢ় বাদামি হয়। পিঠের পালক আঁশালো দেখায় তখন। প্রধান খাবার: সৈকতের কীটপতঙ্গ, কেঁচো ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুলাই। তুন্দ্রাঞ্চলের ঘেসোভূমিতে খড়কুটো বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় ১৮-২০দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: মানবকণ্ঠ, 18/07/2014
ধুসরাভ মেঠো চিল | Montagu’s Harrier | Circus pygargus
ধুসরাভ মেঠো চিল | ছবি: ইন্টারনেট শীত মৌসুমে উপমহাদেশীয় অঞ্চলে পরিযায়ী হয়ে আসে। নরওয়ে, গ্রেট ব্রিটেন, পর্তুগাল, রাশিয়া, (প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন) বেলারুশ, পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি। দেখতে ভয়ঙ্কর দর্শন হলেও মূলত এরা তত হিংস্র নয়। প্রজাতির অন্যদের তুলনায় দেখতে খানিকটা সুদর্শন। প্রাকৃতিক আবাসস্থল কাঁটাওয়ালা চিরহরিৎ গুল্ম। বিচরণ ক্ষেত্র ধানক্ষেত, গমক্ষেত, উন্মুক্ত বনভূমি, বালিয়াড়ি, ছোট নদ-নদী, জলাশয়ের আশপাশ। ক্ষেত খামারের ওপর চক্কর দিয়ে শিকার খোঁজে। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায়ও দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। মূলত শস্যক্ষেতে ব্যাপক কীটনাশক (ডিটিটি) ব্যবহারের কারণে প্রজাতিটি হুমকির মুখে পড়েছে এবং প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ধুসরাভ মেঠো চিল’, ইংরেজি নাম: ‘মন্টেগুয়াস হ্যারিয়ার’ (Montagu’s Harrier), বৈজ্ঞানিক নাম: Circus pygargus | এরা ‘মন্টেগুর কাপাসি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ৪৩-৪৭ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৯৭-১১৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি আকারে বড়। গায়ের রংও ভিন্ন। পুরুষ পাখির গড় ওজন ২৬৫ গ্রাম, স্ত্রী পাখির গড় ওজন ৩৪৫ গ্রাম। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ সুরমা ধূসর। ডানার প্রান্ত পালক কালচে। লেজ কালচে ধূসর। গাঢ় কালো রঙের ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া হলুদ। চোখ উজ্জ্বল হলুদ, মণি কালো। পা ও পায়ের পাতা হলুদ, নখ কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির গায়ের পালক হলদে বাদামি। দেহতল গাঢ় বাদামি। প্রধান খাবার: ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, ছোট পাখি, ইঁদুর, বড় পোকামাকড়, ফড়িং ও পঙ্গপাল। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ঝোঁপের ভেতর, জলাভূমির কাছে মাটিতে অথবা ঘেসো ভূমিতে লম্বা ঘাস বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৭-৪০ দিন। শাবক শাবলম্বী ছয় সপ্তাহ সময় লাগে। যৌবনপ্রাপ্ত হতে সময় লাগে ২-৩ বছর। লেখক: আলমশাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 20/01/2017
নীল শুমচা | Blue pitta | Pitta cyanea
নীল শুমচা | ছবি: ইন্টারনেট বনচর, পরিযায়ী পাখি নীল শুমচা। নজরকাড়া রূপ। ত্রিভুজাকৃতির গড়ন। তুলনামূলক লেজ খাটো। পা লম্বা। চিরসবুজ অরণ্যের বাসিন্দা। বাঁশঝাড় বা লতা গুল্মাদির ভিতর নরম মাটি ঠোকরে খাবার খোঁজে। ঝরাপাতা উল্টিয়ে পোকামাকড় খায়। বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। ওড়ার চেয়ে লাফায় বেশি। খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। রাতেও খাবার খোঁজে। অথচ রাতে খুব বেশি চোখে দেখে না। সুর সুমধুর। ডাকে ‘পিউ-হুয়িট…পিউ-হুয়িট…’ সুরে। সমগ্র বিশ্বে ১০ লাখ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে এদের আবাস। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, মিয়ানমার, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। আই ইউ সি এন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘নীল শুমচা’, ইংরেজি নাম: ‘ব্লু পিট্টা’ (Blue pitta), বৈজ্ঞানিক নাম: Pitta cyanea | এরা ‘আসমানি শুমচা’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ২১-২৩ সেন্টিমিটার। লেজ ৬ সেন্টিমিটার। ওজন ১১০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির কপাল ও মাথার চাঁদির সামনের দিক সবজে-ধূসর। কপালে রয়েছে কালচে সরু ডোরা। মাথার তালু থেকে ঘাড়ের পেছনের দিক সিঁদুর লাল। পিঠ থেকে লেজ পর্যন্ত গাঢ় নীল। ঠোঁটের গোড়া থেকে শুরু করে চোখের উপর দিয়ে ঘাড়ের পেছন পর্যন্ত চওড়া কালো রেখা চলে গেছে। ডানার প্রান্ত পালক কালচে। গলায় অস্পষ্ট কালো দাগ। গলার নিচের অংশ হালকা হলুদের ওপর অসংখ্য কালো তিলা। বুকের নিচ থেকে নীল-সাদার মিশ্রণের ওপর অসংখ্য কালো তিলা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির ঘাড়ের পেছনের পট্টি কালো রঙের। কাঁধ ঢাকনি কালচে-জলপাই রঙের। কোমর নীল। ডানা নীলাভ-জলপাই রঙের। উভয়ের ঠোঁট কালো। চোখ কালচে। পা ও পায়ের পাতা পাটকিলে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের পিঠ কালচে-বাদামি। দেহতলে ঘন ফিকে ডোরা। প্রধান খাবার: ভূমিজ কীট, কেঁচো ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন সময়ের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে মাটিতে অথবা গাছের কাণ্ডে। বাসা গোলাকার। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস বা বাঁশপাতা। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৬ দিন। শাবক উড়তে পারে ২০-২৫ দিনে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 07/12/2018
হিমালয়ী গৃধিনী | Himalayan Vulture | Gyps himalayensis
হিমালয়ী গৃধিনী | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন, পরিযায়ী পাখি। দেশে খুব কম দেখা যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, তিব্বত, চীন, আফগানিস্তান, কাজাখস্তান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও সিঙ্গাপুর পর্যন্ত। ঈগলাকৃতির চেহারা। খোলামাঠ প্রান্তরে বিচরণ করে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ মিটার উচ্চতায়ও এদের দেখা মেলে। একাকী, জোড়ায় কিংবা দল বেঁধে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। সব ধরনের মৃতদেহ ও সরীসৃপ এদের খাবার। যার ফলে বিষাক্ত মৃতদেহ খেয়ে ওদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। প্রজাতির অন্যদের তুলনায় এরা দীর্ঘজীবী। গড় আয়ু ৫০-৫৫ বছর। পাখির বাংলা নাম: ‘হিমালয়ী গৃধিনী’, ইংরেজি নাম: ‘হিমালয়ান ভালচার’ (Himalayan Vulture), বৈজ্ঞানিক নাম: Gyps himalayensis | এরা ‘বৃহত্তম গিদরি,’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কম-বেশি ১০০-১১০ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানার দৈর্ঘ্য ২৬০-২৯০ সেন্টিমিটার। মাথা, গলা ও ঘাড় তুলতুলে ক্রিম সাদা। পিঠ ও লেজ ঢাকনি সাদাটে আভার সঙ্গে হলদে বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক এবং লেজ কালো। ওড়ার পালকও কালচে। দেহতল বাদামির ওপর অস্পষ্ট রেখা যুক্ত। শিঙ কালো রঙের ঠোঁটের উপরের অংশ বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁট থেকে হলুদাভ আভা বের হয়। পা ও পায়ের পাতা ফিকে, নখ কালো। যুবাদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: মৃতদেহ। সর্বভুক পাখি। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে মে। বাসা বাঁধে পুরনো উঁচু গাছের ডালে। বাসা বাঁধতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ডালপালা পশুর চুল, গাছের বাকল, হাড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৫৪-৫৮ দিন। বাবা-মায়ের সঙ্গে মাস ছয়েক কাটায়। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 17/03/2017
পাতারি হাঁস | Common teal | Anas crecca
পাতারি হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট প্রচণ্ড শীতে সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী হয়ে আসে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে। শীতের শুরুতে লতাগুল্ম আচ্ছাদিত বৃহৎ জলাশয়ে কিংবা হাওর-বাওরে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করতে দেখা যায়। দেখা যায় জলাশয়ের ওপর ওড়াউড়ি করতেও। এদের ওড়ার গতিও ভালো। উড়তে উড়তে অনেক সময় পুরুষ পাখি নিচুস্বরে ডাকে ‘ক্রিট..ক্রিট’। প্রজাতিটি সুলভ দর্শন হলেও আমাদের দেশে এরা নিরাপদ নয়। বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। গত দশক আগেও দেশে এদের ব্যাপক বিচরণ ছিল। সে তুলনায় বর্তমান সময়ে নজরে পড়ছে না তেমনটি। ১৯৯৭ সালের দিকেও ঢাকা চিড়িয়াখানার লেকে ব্যাপক দর্শনের নজির রয়েছে। দ্রুত এদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারনটিই হচ্ছে শিকারিদের দৌরাত্ম্য। দেখতে ভীষণ সুন্দর, ওজনে সামান্য হলেও এরা রেহাই পায় না নিষ্ঠুর শিকারিদের হাত থেকে। রসনাবিলাসিরা যদি একটু সংযত হন বোধ করি দেশের শিকরিরাই বিপাকে পড়ে যাবে এবং তারা পাখি শিকারে নিরুৎসাহী হয়ে পড়বে। তাতে করে হ্রাস পাওয়া প্রজাতির সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এ পাখির বাংলা নাম: ‘পাতারি হাঁস’, ইংরেজি নাম: ‘কমন টিল’ (Common teal), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘আনাস ক্রেককা’ (Anas crecca)। এরা ‘পাতি তিলিহাঁস’ নামেও পরিচিত। লম্বায় ৩৪-৩৮ সেন্টিমিটার। ওজন ২৮০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির বর্ণে পার্থক্য রয়েছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রঙ বদলায়। এ সময় এদের মাথার রঙ লালচে-বাদামি এবং শরীরে গুঁড়ি গুঁড়ি রেখা দেখা যায়। মাথার দু’পাশে লম্বা দুটি সাদা ডোরা। চোখের ওপর থেকে ঘাড় পর্যন্ত দেখা যায় চওড়া ধাতব-সবুজ পট্টি। ডানা কালো, ধাতব সবুজ ও হলদেটে। লেজের নিচের পালক হলুদাভ ছোপ। স্ত্রী পাখির রূপ নিষ্প্রভ। মাথার তালু ও ঘাড় কালচে-লালচের মিশ্রণ। উভয়ের চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা জলপাই-ধূসর। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখির সঙ্গে মা পাখির বর্ণের খানিকটা মিল রয়েছে। প্রধান খাবার: জলজ উদ্ভিদের কচিডগা ও বীজ। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট। জন্মভূমি সাইবেরিয়া অঞ্চলের জলাশয়ের পাশের ভূমিতে শুকনো লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২৩ দিন। শাবক উড়তে শিখে ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/02/2014
লম্বাঠোঁট তুলিকা | Long Billed Pipit | Anthus Similis
লম্বাঠোঁট তুলিকা | ছবি: ইন্টারনেট পাথুরে পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা। পাহাড়ের কার্নিশে কিংবা কাঁটা গাছে বিচরণ করে। তবে গাছ-গাছালির চেয়ে বেশির ভাগই পাথুরে এলাকায় বা পাহাড়ের কার্নিশ দেখা যায়। মায়াবি চেহারা। স্লিম গড়ন। প্রজাতির অন্যদের তুলনায় সুদর্শনই বটে। তুলনামূলক ঠোঁট ও লেজ খানিকটা লম্বা। গানের গলা চমৎকার। ধীরলয়ে গান গায়। চলাফেরাও ধীরগতির। বিচরণ করে একাকী। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। যত্রতত্র দেখা মেলে না। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ব্যতীত, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ-মধ্য আফ্রিকা ও পশ্চিম আফ্রিকা পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক। পাখির বাংলা নাম: ‘লম্বাঠোঁট তুলিকা’, ইংরেজি নাম: ‘লং-বিল্ড পিপিট’ (Long-billed Pipit), বৈজ্ঞানিক নাম: Anthus similis | প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ১৭-২০ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির ওজন ৪০-৩৫ গ্রাম। স্ত্রী পাখির ওজন ২৮-৩১ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ বেলে ধূসর। ডানায় গাঢ় বাদামি টান। চোখের ওপর ভ্রুর মতো বাঁকানো ফ্যাকাসে চওয়া টান। দেহতল ফ্যাকাসে। ঠোঁট লম্বা, উপরের অংশ বেলে ধূসর, নিচের অংশ ফ্যাকাসে পা ত্বক বর্ণের। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ, ঘাসবীজ ইত্যাদি। প্রজনন সময় মার্চ-এপ্রিল। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে নিজ বাসভূমে। বাসা বানায় শিলা বা মাটির ওপর সরু-নরম লতা বিছিয়ে। ডিমের সংখ্যা ২-৪টি। ফুটতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 12/01/2018