ধলাগলা মাছরাঙা | White throated Kingfisher | Halcyon smyrnensis
ধলাগলা মাছরাঙা | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন পর্যন্ত। দেশে এদের বেশিরভাগ বিচরণ উপকূলীয় অঞ্চলের জলাশয়ের কাছাকাছিতে। এ ছাড়াও শুষ্ক পাতাঝরা বনের প্রান্তদেশে কিংবা আবাদি জমির আশপাশে উড়ে বেড়াতে দেখা যায়। দেখা যায় বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকতেও। বিচরণকালীন সময়ে একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায়ও দেখা যায়। কণ্ঠস্বর কর্কশ। উড়তে উড়তে চেঁচিয়ে ওঠে ‘কে-কে-কে’ সুরে। মনটা ভালো থাকলে শিস মেরে ‘কিলিলিলি… ’ সুরে গান গায়। বিশ্বে ব্যাপক নজরে পড়ে বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে বিপন্মুক্ত বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলাগলা মাছরাঙা’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট থ্রোটেড কিংফিশার’ (White-throated Kingfisher), বৈজ্ঞানিক নাম: Halcyon smyrnensis | বাংলাদেশে মোট ১২ প্রজাতির মাছরাঙা দেখা যায়। এরা লম্বায় ২৮ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড় গাঢ় বাদামি রঙের। পিঠ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত উজ্জ্বল নীল। সবুজ ডানার উপরের দিকটা গাঢ় বাদামি, মাঝখানে কালচে পালক। থুতনি, গলা ও বুকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধবধবে সাদা। বুকের নিচ থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত কালচে বাদামি। শক্তপোক্ত ঠোঁট কমলা লাল। চোখের মণি বাদামি, বলয় লালচে। পা ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে তেমন কোনো তফাৎ নেই। প্রধান খাবার: ছোট ইঁদুর, পঙ্গপাল, ফড়িংসহ অন্যান্য পোকামাকড়। মাছের প্রতিও আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। জলাশয়ের খাড়া পাড়ে নিজেরা গর্ত খুঁড়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/08/2014
তামাটে লাল বেনেবউ | Maroon Oriole | Oriolus traillii
তামাটে লাল বেনেবউ | ছবি: ইন্টারনেট হিমালয় এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা। পরিযায়ী হয়ে আসে বাংলাদেশে। যত্রতত্র দেখা যায় না। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও তিব্বত পর্যন্ত। বিচরণ করে চিরহরিৎ বন বা আধা-চিরহরিৎ বন অথবা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র নিুভূমির বনে। বৃক্ষচারী পাখি। প্রয়োজন ছাড়া ভূমি স্পর্শ করে না। জোড়ায় কিংবা একাকী বিচরণ করে। স্বভাবে চঞ্চল। স্থিরতা নেই খুব একটা। গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে লাফিয়ে বেড়ায় সারা দিন। লাফাতে লাফাতে চোখের পলকে হারিয়ে যায়। ভাবটা এমন যেন রাজ্যের ব্যস্ততা তাড়া করছে ওদের। স্লিম গড়ন। সুদর্শনও বটে। প্রথম দর্শনে যে কেউই মুগ্ধ হবেন বোধ করি। প্রজাতির রূপের বর্ণনা দিয়ে বোঝানো মুশকিল। এক কথায় দেখতে খুবই সুন্দর। গানের গলাও সুমধুর। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি আড়ালে আবডালে গিয়ে স্ত্রী পাখিকে মুগ্ধ করতে গান বাঁধে। মিষ্টি কণ্ঠে নিচু স্বরে গান গায়, ‘কো-কে-ওয়া’ সুরে। খিদে পেলে ওদের বাচ্চারাও মিষ্টি সুরে কাঁদে। সেই সুর শুনতে বড়ই করুণ লাগে। প্রজাতিটি বিশ্বে খুব ভালো অবস্থানে নেই বিধায় আইইউসিএন ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে এদের। পাখির বাংলা নামঃ তামাটে-লাল বেনেবউ, ইংরেজি নামঃ মেরুন ওরিয়োল (Maroon Oriole), বৈজ্ঞানিক নামঃ Oriolus traillii | এরা ‘তামারং বেনেবউ’ নামেও পরিচিত। দেশে মোট পাঁচ প্রজাতির বেনেবউ নজরে পড়ে। যথাক্রমে- ইউরেশীয় সোনাবউ, কালাঘাড় বেনেবউ, কালামাথা বেনেবউ, তামাটে-লাল বেনেবউ ও সরুঠোঁট বেনেবউ। দৈর্ঘ্য ২৫ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম মনে হলেও রঙে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। স্ত্রী-পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। উভয়ের মাথা, গলা, ঘাড় ও ডানা কালো। শরীরের বাদবাকি অংশ তামাটে-লাল রঙের। চোখের বলয় হলদে-সাদা, মণি কালো। ঠোঁটও ধূসর-কালচে। প্রধান খাবারঃ শুঁয়াপোকা এবং কীটপতঙ্গ। এ ছাড়াও ফুলের মধু এবং ছোট ফলের প্রতি আসক্তি রয়েছে। বিশেষ করে পাকা ডুমুর ফল বেশি প্রিয়। প্রজনন মৌসুম মার্চ-এপ্রিল। অঞ্চলভেদে প্রজনন সময় ভিন্ন হয়। তবে উপমহাদেশীয় অঞ্চলে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই ডিম-বাচ্চা তোলে। বাসা বাঁধে পেয়ালা আকৃতির। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে গাছের ছাল, তন্তু, সরু ঘাস-লতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে দু-তিনটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩ থেকে ১৫ দিন। লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
ধলালেজ ঈগল | White-tailed Eagle | Haliaeetus albicilla
ধলালেজ ঈগল | ছবি: ইন্টারনেট ধলালেজ ঈগল পরিযায়ী সামুদ্রিক পাখি। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেশে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জলাশয় নদ-নদীর মোহনায় এদের সাক্ষাৎ মেলে। দেশের বিচরণরত ঈগল প্রজাতির পাখিদের মধ্যে আকারে সর্ববহৎ। খানিকটা হিংস্রও। অন্যসব শিকারী পাখিদের খাবার চিনিয়ে নিতে ইতস্ততবোধ করে না। শিকারের লোভে জলের ২০-৩০ মিটার ওপরে ধীর গতিতে বৃত্তাকারে উড়ে বেড়ায়। শিকার নজরে পড়লে ঝাঁপিয়ে পড়ে পায়ের তীক্ষè নখে বিঁধিয়ে নিয়ে উড়ন্ত অবস্থায় খেয়ে ফেলে। এ ছাড়াও গাছের ডালে অথবা মাটিতে নেমে খাবার খেতে দেখা যায়। সুযোগ পেলে এরা গবাদি পশুর মৃতদেহও খায়। এরা অনায়াসে সমুদ্র-সমতল থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি সাইবেরিয়া, আলাস্কা, নরওয়ে, স্কল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড পর্যন্ত। দেশে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন এ প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘ধলালেজ ঈগল’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট টেইলড ঈগল’ (White-tailed Eagle), বৈজ্ঞানিক নাম: Haliaeetus albicilla | এরা ‘সাদালেজী ঈগল’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্যে ৬৬-৯৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৪-৫ কেজি। মাথা ফ্যাকাসে বাদামি। পিঠ গাঢ় বাদামি। কোমর কালো। লেজ সাদা। বুক ও পেট ফ্যাকাসে বাদামি। ওড়ার পালক কালো। হলুদ রঙের ঠোঁট শক্ত মজবুত, অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। পা বাদামি পালকে আবৃত। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম হলেও স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য বড়। অপ্রাপ্ত বয়য়স্কদের রঙ ভিন্ন। প্রধান খাবার: মাছ, সাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, ইঁদুর, ভোঁদড় ও পানকৌড়ি। অন্যসব পাখির চেয়ে জলচর পাখি বেশি ওদের শিকারে পরিণত হয়। প্রজনন সময় মার্চ থেকে এপ্রিল। তবে স্থানভেদে প্রজনন ঋতুর হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে বড় গাছের উঁচু ডালে। ডালপালা দিয়ে বড়সড়ো অগোছালো বাসা বানায়। এক বসায় বহু বছর ধরে ডিম বাচ্চা তোলে। ডিম পাড়ে ১-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৮-৪০ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৬-১০ সপ্তাহ এবং প্রজননক্ষম হতে সময় লাগে ৪-৫ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/06/2016
চুনিমুখি মৌটুসি | Ruby cheeked Sunbird | Anthreptes singalensis
চুনিমুখি মৌটুসি | ছবি: ইন্টারনেট আকাশ প্রদীপ নিবুনিবু করছে। প্রাণীকুল যে যার ডেরায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দিন-রাতের সন্ধিক্ষণে আকাশ কেঁপে উঠল হঠাৎ করে। নিশ্চয়ই দূরে কোথাও বজ্রপাত হয়েছে। খানিকটা ভড়কে গিয়েছি। কালবৈশাখীর তাণ্ডব শুরু হয়ে যাবে একটু বাদেই। যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদে ফেরা চাই। কিন্তু সেটি আর হয়ে উঠেনি, তার আগেই ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। উপায়ান্তর না দেখে নিজ গাঁয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছি। আমার সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে ‘চুনিমুখি মৌটুসি’ও। জানালার কার্নিশে বসেছে পাখিটা। কাঁপছে থরথর করে। হাত বাড়িয়ে পাখিটাকে ধরলাম। উড়তে পারছে না বেচারি। ডানায় সুতা জাতীয় তন্তু পেঁচানো। ধীরে ধীরে প্যাঁচ খুলে দিতেই পাখিটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। চুনিমুখি মৌটুসি অতি পরিচিত পাখি। দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। দেখা মেলে গাঁওগেরামের ঝোপ-জঙ্গলে। ঝোপের ভেতর থেকে উচ্চস্বরে ‘সুইটি-টি-চি-চিউ..টিউসি-টিটসুইটি-সুইটি..সুইটি-টি-চি-চিউ..’ সুরে শিস দেয়। বেশ মধুর সুর। এরা অত্যন্ত ফূর্তিবাজ পাখি। দিনের বেশিরভাগ সময় গাছের শাখা-প্রশাখায় নেচে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পর্যন্ত। এতদাঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা এরা। বিশ্বে প্রজাতির সংখ্যা স্থিতিশীল। তাই আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘চুনিমুখি মৌটুসি’, ইংরেজি নাম: ‘রুবি চিকড সানবার্ড’ (Ruby-cheeked Sunbird), বৈজ্ঞানিক নাম: Anthreptes singalensis | প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১১-১২ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির মাথার তালু, ঘাড়, পিঠ, কোমর ও লেজের উপরিভাগ ধাতব সবুজ। ডানা ও লেজ কালচে। গাল টকটকে লাল, সূর্যালোকে বেগুনি বিচ্ছুরণ বের হয়। গলা ও বুক লালচে-কমলা। পেট উজ্জ্বল হলুদ। অপরদিকে স্ত্রী পাখির পিঠের বর্ণ নিষ্প্রভ জলপাই সবুজ। গলা ও বুক লালচে-কমলা। গালে লাল রঙের উপস্থিতি নেই, নেই পেটের হলুদ বর্ণও। উভয়েরই ঠোঁট কালচে, খাটো ও সোজা। পা সবুজ-ধূসর। প্রধান খাবার: ফুলের মধু ও ছোট পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। ভূমি থেকে ২ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে অথবা লতা আচ্ছাদিত গাছের ডালে থলে আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২টি। ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/07/2018
ধূসর দামা | Tickell’s Thrush | Turdus unicolor
ধূসর দামা | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী, ভূচর পাখি। উপমহাদেশীয় অঞ্চলে শীতে দেখা যায়। তবে এতদাঞ্চলে প্রজনন ঘটায় না। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। প্রাকৃতিক আবাসস্থল মিশ্র পর্ণমোচী ও সুঁচালো পার্বত্য বন। পাইন বনে বেশি পরিলক্ষিত হয়। বিচরণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। গানের গলা ভালো। গাছের উঁচু ডালে বসে খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে গান গায়। স্বভাবে লাজুক। বেশির ভাগই একাকী বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। দেখা যায় লতাগুল্মের নিচেও। আবার পাথুরে এলাকায়ও বিচরণ রয়েছে। পরিত্যক্ত বা স্যাঁতস্যাঁতে এলাকার লতাপাতা উল্টিয়ে এবং ঘন ঘন ঠোঁট চালিয়ে খাবার খোঁজে। গাছের উঁচুতে বিচরণ করে না। দেশের সর্বত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। শীতে দেখা যায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান ও মিয়ানমার পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও প্রজাতিটি ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘ধূসর দামা’, ইংরেজি নাম:‘ টিকেল’স থ্রাস’ (Tickell’s Thrush), বৈজ্ঞানিক নাম: Turdus unicolor | এরা ‘টিকেলের দামা’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১৫ প্রজাতির দামা নজরে পড়ে। গড় দৈর্ঘ্য ২০-২৫ সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন ৫৮-৭৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। দেহের ওপরের অংশ ধূসর। অনেকটাই গাঢ় ছাই বর্ণের। কেবল গলায় সামান্য সাদাটে দাগ। গলার নিচ থেকে পেট পর্যন্ত ফ্যাকাসে ধূসর। লেজতল সাদাটে। চোখের বলয় হলুদ, মনি কালো। ঠোঁট হলুদ। পা ও পায়ের আঙুল হলুদ। যুবাদের রঙ ভিন্ন। শীত-গ্রীষ্মে রঙ বদলায়। প্রধান খাবার: কেঁচো, পোকামাকড়। মাঝেমধ্যে ছোট ফলফলাদি খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ২-৭ মিটার উঁচুতে। গভীর কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, শুকনো ঘাস ও লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 26/05/2017
চিতিপেট হুতুমপেঁচা | Spot bellied eagle owl | Bubo nipalensis
চিতিপেট হুতুমপেঁচা | ছবি: ইন্টারনেট রাতচরা পাখি। আকারে বড়সড়ো। স্বভাবে হিংস ন বারবার। দিনের বেলায় গাছের পাতার আড়ালে বা বাঁশঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। রাতে ‘হুহু… হুহু’ আওয়াজ করে মানুষের পিলে চমকে দেয়। প্রাকৃতিক আবাসস্থল ঘন চিরহরিৎ এবং আর্দ্র পর্ণমোচী বন, নদীর তীরবর্তী ঘন বন, পাহাড়ি অঞ্চল, হিমালয় অঞ্চলসহ ট্রপিকাল রেনফরেস্ট। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। বলা যায়, অঞ্চলভেদে বিরল দর্শন। পাখির বাংলা নাম: ‘চিতিপেট হুতুমপেঁচা’, ইংরেজি নাম: ‘স্পট-বেলিড ঈগল আউল’ (Spot-bellied Eagle Owl), বৈজ্ঞানিক নাম: Bubo nipalensis | এদের অন্য নাম ‘বুনো হুতুমপেঁচা’ (ফরেস্ট ঈগল আউল)। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ৫৮-৬৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৩.৭ পাউন্ড। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। মুখমণ্ডল গোলাকার। কান পশম আছে। মাথা ধূসর সাদার ওপর কালচে ফোঁটা। পিঠ হরিদ্রাভ বাদামি ওপর কালচে-বাদামি চিতি। ডানার পান্ত পালকে কালচে-বাদামি চিতি। দেহতলে ক্রিম সাদা চিতি। লেজ খাটো, কালচে বাদামি। লেজতলে সাদা-কালো ডোরা। খাটো ঠোঁট ক্রিম সাদা বড়শির মতো বাঁকানো। মার্বেলের মতো গোলাকার চোখ গাঢ় বাদামি রঙের। পা হলদে সাদা। পায়ের আঙ্গুল হরিদ্রাভ-ধূসর। পায়ে পশম আছে। প্রধান খাবার: সাপ, ইঁদুর, টিকটিকি, বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ, ছোট পাখি, মাছ ও গলিত মাংস। প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে গাছের প্রাকৃতিক কোটরে। ডিম পাড়ে ১টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/10/2016
লাল বুক টিয়া | Red Breasted Parakeet | Psittacula alexandri
লাল বুক টিয়া | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা হলেও শালবনে বেশি দেখা যায়। লোকালয়েও দেখা মেলে, তবে কম। স্থানীয় প্রজাতির হলেও সুলভ দর্শন অঞ্চলভেদে। যেমন: সিলেটের চা বাগান, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক নজরে পড়ে। বিচরণ করে ছোট-বড় দলে। কৃষকের ধান, গম, ভুট্টাক্ষেতে দল বেঁধে নেমে ব্যাপক ক্ষতি করে, যা খায় তারচেয়ে বেশি নষ্ট করে। দেখতে ভীষণ সুন্দর হলেও কণ্ঠস্বর কর্কশ। সামাজিক পাখি, দলবদ্ধভাবে বাস করে। দলের যে কেউ বিপদের গন্ধ পেলে ‘ক্যাঁক..ক্যাঁক’ স্বরে ডেকে সবাইকে সতর্ক করে। বিপৎসংকেত পেয়ে সঙ্গীরা ঝটপট ডানা মেলে নিরাপদে পৌঁছায়। এত সতর্ক থাকার পরেও এরা শিকারিদের কবলে পড়ছে দেদার- যার ফলে আজ প্রজাতিটি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘লাল বুক টিয়া’, ইংরেজি নাম: ‘রেড ব্রেসটেড প্যারাকিট’ (Red-Breasted Parakeet), বৈজ্ঞানিক: Psittacula alexandri | নাম: ‘সিট্টিসিদি’। এরা ‘তোতা ও মদনা’ নামে পরিচিত। প্রজাতি লম্বায় লেজসহ ৩৪-৩৮ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষের মাথা বেগুনি-ধূসর, কপালের ওপর কালো পট্টি, যা চোখের কাছে গিয়ে মিশেছে। ডানায় সোনালি আভা। গলা থেকে বুক পর্যন্ত গোলাপি। পেট নীলচে-সবুজ, তলপেট থেকে লেজের নিচ হলদেটে-সবুজ। লেজের ওপরের দিক নীলচে-সবুজ। লেজের ডগার কিনারটা হলদেটে। শক্ত মজবুত ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁটের বর্ণ ওপরের দিকে রক্ত লাল, নিচের অংশ কালো। স্ত্রী পাখির মাথা নীলচে-সবুজ। বুকের দিক গাঢ় গোলাপি। ঠোঁটের ওপরাংশ কালো, নিচের অংশ পাটকিলে-কালো। এ ছাড়াও পুরুষ পাখির কনীনিকা ফিকে-হলুদ, স্ত্রী পাখির সাদাটে-হলুদ। উভয়ের পা ও আঙ্গুল ধূসরাভ-সবুজের সঙ্গে হলটে মিশ্রণ । প্রধান খাবার: শস্যবীজ, ফুল, ফল, মধু, গাছের কচিপাতা ইত্যাদি। পোষা তোতাদের দুধ-ভাত, কলা, বাদামের প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন সময় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২২-২৪ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।প্রকাশ: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/06/2017 এবং দৈনিক যুগান্তর, 31/08/2013