ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা | Crested kingfisher | Megaceryle lugubris

3069
ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা | ছবি: ইন্টারনেট

প্রজাতির অন্যসব মাছরাঙাদের মতো চেহারায় তত আকর্ষণীয় ভাব নেই। বরং উল্টোটা। দেখা যায় হিংস্র কিংবা রাগী রাগী চেহারার। ‘ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা’ বাংলাদেশে স্থায়ী হলেও খুব একটা দেখার নজির নেই যত্রতত্র। বলা যায় বিরল দর্শন। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ বনের প্রবাহমান নদ-নদী কিংবা ঝরনার কিনারে দেখার রেকর্ড রয়েছে। তবে সেটি দু-একবারের বেশি নয়। যতদূর জানা যায়, ওরা নিভৃতচারী পাখি। একাকী থাকতেই বেশি পছন্দ করে, শিকারেও বের হয় একাকীই। জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায় মাঝে মধ্যে। শিকার কৌশল প্রজাতির অন্যদের মতোই।

তবে এরা সাধারণত গহিন অরণ্যের ভিতর প্রবাহমান নদীর ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে উড়তে উড়তে শিকার খোঁজে। আর মাঝে মধ্যে তীক্ষèকণ্ঠে ডেকে ওঠে, ‘ক্লিক…ক্লিক…ক্লিক…’। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রজাতিটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, জাপান, লাওস, ভিয়েতনামে ও থাইল্যন্ডে। প্রজাতিটি বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। দেশের পাখি বিশারদরা এদেরকে বিপদাপন্নের দিকে ধাবিত হওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

পাখির বাংলা নাম: ‘ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা’, ইংরেজি নাম: ‘ক্রেস্টেড কিংফিশার’,(crested kingfisher) বৈজ্ঞানিক নাম: Megaceryle lugubris | এরা ‘ফোঁটকা মাছরাঙা’ নামেও পরিচিত।

লম্বায় ৪০-৪২ সেন্টিমিটার। ঠোঁটের গোড়া ধূসর, অগ্রভাগ কালো। মাথায় চমৎকার সাদা-কালো লম্বা ঝুঁটি। চোখের সামনে-পেছনের সাদা দাগ ঘাড়ে মিশেছে। গলাবন্ধ সাদা। ঘাড়ের গোড়া থেকে পিঠ হয়ে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত নীলাভ ধূসরের ওপর সাদা ফুটকি। ডানার নিচে রয়েছে লালচে পালক, যা কেবলমাত্র ওড়ার সময় দেখা যায়। বুকের ওপর কালো ও বাদামি ছোপযুক্ত অস্পষ্ট বলয় রয়েছে। বুকের নিচ থেকে সাদা। চোখ কালো। পা ও পায়ের পাতা ধূসরাভ-জলপাই। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য নেই, কেবলমাত্র ডানার নিচের ফ্যাকাসে লালরঙের মাধ্যম ব্যতীত। যা স্ত্রী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির রয়েছে, পুরুষ পাখির গায়ে দেখা যায় না।

প্রধান খাবার: মাছ। ছোট ব্যাঙ কিংবা পোকামাকড়ের প্রতিও আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। নদ-নদীর খাড়া পাড়ে সুড়ঙ্গ বানিয়ে বাসা বাঁধে। বাসা বানাতে বাড়তি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে কাঁটা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় নেয় ১৫-১৭ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
প্রকাশ: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 05/10/2018

মন্তব্য করুন: