চোখগেলো | Common Hawk Cuckoo | Hierococcyx varius

4484
চোখগেলো| ছবি: ইন্টারনেট

শীতকালে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে এরা নিজেদের আড়াল করে রাখে। আগমন ঘটে বসন্তের মাঝামাঝি সময়। গ্রীষ্মের শুরু থেকে মোটামুটি দেশে কম-বেশি সবখানেই দেখা যায় এ পাখি। এরা পছন্দ করে গাছের উঁচু শিখরে বসতে। বিশেষ করে আম-জাম গাছের উঁচু শিখরে বসে বেশি। পারতপক্ষে এরা মাটিতে নামে না। গাছে গাছে কিংবা শূন্যে ওড়াউড়ি করেই সময় কাটায়। পতঙ্গ ভক্ষণের লোভে ঝোপ-জঙ্গলের কাছাকাছি বেশিরভাগ সময় উড়ে বেড়াতে দেখা যায়। দেখা যায় রসালো নরম ছোট ফল গাছের আশপাশেও। সাধারণত একাকী বিচরণ করে।

প্রজনন সময় ঘনিয়ে এলে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। তবে কম। তখন পুরুষ পাখিটির সুর উতলে ওঠে। দিন-রাত ডাকতে থাকে ‘চোখগেলো চোখগেলো’ অথবা ‘পিউ-কাঁহা পিউ-কাঁহা’ সুরে। ওদের সুরে রয়েছে চমৎকার তাল-লয়। নিচু স্বর থেকে ক্রমেই উচ্চৈঃস্বরে ডাকে ওরা। সুরে থাকে এক ধরনের মাদকতাও। শুনলে কান খাড়া হয়ে ওঠে এবং আরো শোনার আগ্রহবোধ হয়। গগনবিদারী আর্তচিৎকারটা শুনলে মনটা আবেগে ভরে ওঠে যে কারো।

এ পাখির বাংলা নাম: “চোখগেলো”, ইংরেজি নাম: “কমন হাক কুক্কু”, (Common Hawk Cuckoo), বৈজ্ঞানিক নাম: “হাইরোকক্সিস ভেরিয়াস”, (Hierococcyx varius), গোত্রের নাম: কুকুলিদি।

এরা লম্বায় ৩৩-৩৪ সেন্টিমিটার। ঠোঁট তীক্ষ। ঠোঁটের ডগা কালো বাদবাকি হলদেটে সবুজ। মাথা থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত ধূসর। তবে লেজের ওপর কিছু কালো বলয় রয়েছে। গলার নিচ থেকে বুক পর্যন্ত লালচে বাদামি। বুকের দু’পাশে সরু বাদামি দাগ। চোখের তারা, বলয় হলুদ। পা, আঙুল হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম।

প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়, ছোটখাটো সরীসৃপ। ছোট নরম ফল-ফলাদিও খায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না। জ্ঞাতিভাই কোকিলের মতো পরের বাসায় ডিম পেড়ে পালিয়ে যায়। বেশিরভাগ সময় ডিম পাড়ে একটি। ডিম পাড়ে সাতভায়লা, ফিঙ্গে, হলদে পাখির বাসায়। এতে ডিম ফোটার সঠিক সময়টা নির্ধারণ করা যায়নি।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 07/12/2012

মন্তব্য করুন: