বেঘবৌ | Lineated barbet | Megalaima lineata

3396
বেঘবৌ | ছবি: ইন্টারনেট

আমাদের দেশীয় পাখি এরা। দেশের গ্রামে-গঞ্জে এমনকি শহরেও এদের দেখা যায়। ঢাকা শহরেও এ পাখির বিচরণ রয়েছে। তবে এরা বেশিরভাগই জোড়ায় জোড়ায় থাকে। এলাকাভেদে সাধারণত এক বা দু’জোড়ার বেশি থাকে না। পশ্চিমবঙ্গেও এদের দেখা যায়। এরা ‘বসন্ত বাউরি’ পাখির জ্ঞাতি ভাই।

চেহারা-সুরতও অনেকটা তেমনই। আচার-আচরণেও মিল রয়েছে বেশ খানিকটা। ডাকে ‘ক্রুয়ো-ক্রুয়ো-ক্রুয়ো’ সুরে। অনেক দূর থেকে আওয়াজটা শোনা যায়। সুরটা শুনতে মন্দ লাগে না; আর্তনাদের মতো কানে বাজে। আমি প্রথম দেখেছি মুন্সীগঞ্জ জেলার নগর কসবা এলাকায় বছর দশেক আগে। পাখিটাকে প্রথম দেখায় বসন্ত বাউরি ভেবে ভুল করেছি। দেখেছি একটা মরা গাছের খোড়লের ভেতর। মাথাটা সামান্য বের করে রেখেছে। অনেকটাই সাপের মাথার মতো লেগেছে দেখতে। ভয়ও পেয়েছি সামান্য।

ভয়ের কারণ ছিল ওর বড় বড় চোখ দুটি। খোড়লের ভেতর থেকে মাথাটা ঘুরিয়ে আগে চারপাশটা দেখে নিয়েছে সে। আশপাশ নিরাপদ মনে হতেই লাফিয়ে সামনের ডালে বসেছে। ওই পাখিটা বের হতেই পেছন দিয়ে অন্য পাখিটি খোড়লে ঢুকে পড়েছে। বুঝতে পেরেছি, ডিমে তা দিতেই পালা করে ওরা খোড়লে ঢুকেছে। তখনো যে ডিম ফোটেনি, তা নিশ্চিত হয়েছি দু’ঠোঁটের ফাঁকে খাবার জাতীয় কিছু না দেখে। শাবক থাকলে অবশ্য খাবার নিয়েই কোটরে প্রবেশ করতে হতো। ওদের সেদিন দীর্ঘক্ষণ লাগিয়েই পর্যবেক্ষণ করেছি। যতদূর দেখেছি ওরা উড়তে তেমন পারদর্শী নয়। ডানা ঝাপটে এক গাছ থেকে অন্য গাছে গেলেও মনে হচ্ছে বুঝি নিচে পড়ে যাচ্ছে। অথবা পড়তে পড়তে গিয়ে অন্য গাছের ডালে বসছে। আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে দুর্লভ কিছু দৃশ্য ভিডিও করেছিÑযা পরে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে কাজে দিতে পারে।

পাখিটার বাংলা নাম: বেঘবৌ, ইংরেজি নাম: লাইনিয়েটেড বারবেট (Lineated barbet), বৈজ্ঞানিক নাম: মেগালাইমা লিনিয়েটা (Megalaima lineata)। এদের আরেক নাম ‘গোরখুদ’।

এ পাখি লম্বায় ২৭-২৮ সেন্টিমিটার। এদের পিঠ, ডানা থেকে লেজ পর্যন্ত ঘাড় সবুজ বর্ণ। মাথা, ঘাড়, বুকের শেষাংশ পর্যন্ত খাড়া বাদামি ডোরা, যা থেকে হলুদের আভা বের হয়। চোখ বড়। চোখের বলয় হলুদ। চঞ্চু মোটা মজবুত, ধারালো। চঞ্চুর গোড়ায় ক’টি খাড়া লোম রয়েছে। পা হলুদ।

বেঘবৌদের প্রিয় খাবার যে কোনো ধরনের ছোট রসালো ফল। তবে আতা, কামরাঙ্গা, নুন ফলের প্রতি অসক্তি বেশি। খাদ্য সংকটে এদের টমেটো খেতেও দেখা যায়। সুযোগ পেলে বেঘবৌ খেজুরের রসেও ভাগ বসায়। প্রজনন সময় গ্রীষ্মকাল। এরা নিজেরাই মরা গাছের গায়ে খোড়ল বানিয়ে বাসা বাঁধে। অনেক সময় যৎসামান্য খড়কুটা খোড়লের ঢুকিয়ে বাসাটাকে আরামদায়ক করে নেয়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/12/2012

মন্তব্য করুন: