
স্থানীয় প্রজাতির দুর্লভ পাখি ‘সাদা ভ্রু কাঠঠোকরা’। দেখতে প্রজাতির অন্য সব কাঠঠোকরাদের মতো নয় এরা। আকারে ছোট হলেও চেহারা খানিকটা মায়াবী গড়নের। বাংলাদেশে দর্শন মিলে এমন মোট ২০ প্রজাতির কাঠঠোকরার মধ্যে এ প্রজাতিটিকে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম বলা হয়। আমাদের দেশে তেমন একটা বিস্তৃতি নেই। কেবলমাত্র মাঝে-মধ্যে নজরে পড়ে দেশের উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ব-দক্ষিণের মিশ্র চিরসবুজ বনে অথবা পাহাড়ি বাঁশবনে।
তবে স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্র ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় এলাকার বনভূমি। বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। শিকার খোঁজে বাঁশের কঞ্চি অথবা গাছের ডালপালা ঠুকরিয়ে। শিকাররত অবস্থায় আচমকায় চেঁচিয়ে ওঠে ‘চি..রররররা..’ সুরে। স্বভাবে চঞ্চল, স্থিরতা নেই খুব একটা। খাবার খুঁজে দ্রুততার সঙ্গে। প্রজননকালীন স্ত্রী পাখি ঘাড় মোচড়াতে থাকে পুরুষ পাখির সান্নিধ্য পেতে। পুরুষ পাখি ডানা ঝাপটিয়ে স্ত্রীর আবেদনে সাড়া দেয় যথারীতি। বাংলাদেশ ছাড়াও ধলাভ্রু কুটিকুড়ালির বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত।
পাখির বাংলা নাম: ‘সাদা ভ্রু কাঠঠোকরা’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট-ব্রাউড পিকোলেট, (White-browed piculet) বৈজ্ঞানিক নাম: Sasia ochracea | এরা ‘ধলাভ্রু কুটিকুড়ালি’ এবং ‘ক্ষুদে লাল কাঠঠোকরা’ নামেও পরিচিত।
প্রজাতিটি লম্বায় ৯ সেন্টিমিটার। তন্মধ্যে ঠোঁট ১.৩ সেন্টিমিটার এবং লেজ ২.৩ সেন্টিমিটার। ওজন মাত্র ১০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির চেহারায় ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষ পাখির কপাল সোনালি-হলুদ। পিঠ সবুজাভ-জলপাই। লেজ কালো, খাটো। দেহের নিুাংশ লালচে। চোখের ওপরে মোটা সাদা ভ্রু, যা মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ঘাড়ের কাছে গিয়ে ঠেকেছে। চোখের বলয় গাঢ় লাল, তারা বাদামি-লালচে। ঠোঁট শক্ত মজবুত গড়নের। ঠোঁটের উপরের অংশ কালো, নিচের অংশ ফ্যাকাসে-ধূসর। ঠোঁটের গোড়ায় শক্ত পশম রয়েছে। পা ও পায়ের পাতা হলদে-বাদামি। অপরদিকে স্ত্রী পাখির কপাল লাল। চোখের বলয় ফ্যাকাসে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেহতল ধূসর।
প্রধান খাবার: গাছ পিঁপড়া, পিঁপড়ার ডিম ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। বাসা বাঁধে বাঁশ অথবা ছোট গাছে গর্ত বানিয়ে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 19/10/2018