পাকড়া কাঠঠোকরা | Fulvous breasted woodpecker | Dendrocopos macei

4101
পাকড়া কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট

সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি ‘পাকড়া কাঠঠোকরা’। দৃষ্টিনন্দন চেহারা। প্রজাতির অন্যদের মতো চোখ ভয়ঙ্কর দর্শন নয়। নেই খাড়া ঝুঁটিও। দেখা মেলে যত্রতত্র। গ্রাম-গঞ্জের পাশাপাশি শহরেও নজরে পড়ে। নজরে পড়ে রাজধানীতেও। বিচরণ করে খোলামেলা বনবনানী কিংবা লোকালয়ের গাছগাছালিতে। এমনকি কোলাহলপূর্ণ রাস্তার পাশে গাছেও লাফাতে দেখা যায়। এরা সুযোগ পেলেই গাছের গায়ে কুঠারের মতো শক্ত চঞ্চু চালিয়ে ওদের অবস্থান জানান দেয়। খাদ্যের সন্ধান ব্যতিরেকেও স্বভাবসুলভ আচরণগত কারণে গাছের গায়ে কুঠার চালিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। শিকারের সন্ধান পেলে জোরে জোরে চেঁচিয়ে ওঠে ‘পিক…পিক…’ সুরে।

বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। অনেক সময় পরিবারের সবাই মিলে গাছে লাফিয়ে বেড়ায়। প্রজাতির অন্যদের মতোই এরাও গাছের কাণ্ডে লাফিয়ে লাফিয়ে খাড়া হাঁটে। পারতপক্ষে মাটি স্পর্শ করে না। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি ঘাড় দুলিয়ে স্ত্রী পাখির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। দেশে এদের সংখ্যা সন্তোষজনক।

পাখির বাংলা নাম: ‘পাকড়া কাঠঠোকরা’, ইংরেজি নাম: ‘ফালভাস-ব্রেস্টেড উডপেকার’(Fulvous-breasted woodpecker) বৈজ্ঞানিক নাম: Dendrocopos macei | এরা ‘বাতাবি কাঠঠোকরা’ এবং ‘জরদ কাঠঠোকরা’ নামেও পরিচিত।

লম্বায় ১৯ সেন্টিমিটার। ওজন ৪৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথার চাঁদি লাল। কাঁধ ফ্যাকাসে, কাঁধ ঢাকনি কালো। চোখ ও ঘাড়ের মধ্যখানে কালো ডোরা। পিঠ এবং ডানায় সাদা-কালো ডোরা। লেজের আচ্ছাদক কালো, নিন্মাংশ উজ্জ্বল লাল। গলা ফ্যাকাসে লাল-বাদামি। দেহতল ফ্যাকাসে লাল-বাদামির ওপর কালচে সরু ডোরা। চোখ বাদামি। ঠোঁটের উপরের অংশ শিঙ-বাদামি, নিচের অংশ ফ্যাকাসে স্নেট। পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ স্নেট। স্ত্রী পাখির মাথার চাঁদি কালো। বাদবাকি পুরুষ পাখির মতোই। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখির দেহবর্ণ ফ্যাকাসে।

প্রধান খাবার: গাছ পিঁপড়া, এ ছাড়াও পিউপা, বিছাপোকা, পিঁপড়ার ডিম এবং ফুলের মধু খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। নিজেরা গাছের কাণ্ডে গর্ত বানিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/11/2018

মন্তব্য করুন: