
অনিয়মিত ও বিরলতম পরিযায়ী পাখি। কচ্ছপ আকৃতির গোলাকার গড়ন। দেখতে মন্দ নয়। শরীরে সাদা-কালো আঁকিবুকি। পরখ করে দেখলে বোঝা যায় ডানার প্রান্তে কালো রঙের হৃৎপিণ্ড আকৃতির দাগ। যা থেকেই এদের নামকরণের সূত্রপাত। স্বভাবে চঞ্চল। অন্যসব প্রজাতির কাঠঠোকরাদের মতো যত্রতত্র দেখা যায় না। দেখা মেলে চিরসবুজ ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে। দেখা মেলে বাঁশবনেও। বিচরণ করে একা কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। গাছের কাণ্ডের চারপাশে লাফিয়ে ঘুরে ঘুরে শিকার খোঁজে। এ সময় শক্ত-মজবুত ঠোঁট চালিয়ে গাছের বাকলের ভিতর থেকে কীটপতঙ্গ বের করে আনে। শিকার পেলে তীক্ষ কণ্ঠে ‘ক্লিক-ক্লিক’ সুরে ডেকে ওঠে।
এ ছাড়াও মাঝে মাঝে গাছের ডালের চারপাশে ঘুরে ঘুরে ‘টুই-টুই-টিটিটিটিটি…’ সুরে ডাকতে থাকে। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের গহিন বনাঞ্চলে দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্দোচীন পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। এরা বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। অন্যসব কাঠঠোকরার মতোই এদের শক্রসংখ্যা নগণ্য। তথাপিও এদের সংখ্যা অপ্রতুল। প্রধান কারণটি হচ্ছে অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে।
পাখির বাংলা নাম: ‘কলজেবুটি কাঠকুড়ালি’, ইংরেজি নাম: ‘হার্ট-স্পটেড উডপেকার’(Heart-spotted woodpecker) বৈজ্ঞানিক নাম: Hemicircus canente | এরা ‘হৃৎপিণ্ড- ফোঁটাযুক্ত কাঠঠোকরা’ নামেও পরিচিত।
লম্বায় ১৫-১৬ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৬ গ্রাম। পুরুষ পাখির কপাল কালো, স্ত্রী পাখির কপাল সাদা। এ ছাড়া উভয়েরই ঝুঁটি পেছনের দিকে খাড়া। ঘাড় কালো, দুই পাশ পীতাভ সাদা। শরীরের ওপরের অংশ কালোর ওপর সাদা। ডানার সাদা বাজু অংশে কালো রঙের ছোট হৃৎপিণ্ড আকারের ফোঁটা। খাটো লেজটি কালো বর্ণের। দেহতল কালচে-জলপাই। ঠোঁট শিঙ-বাদামি। চোখ জলপাই বাদামি। পা ও পায়ের পাতা স্লেট কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা অনেকটাই স্ত্রী পাখির মতো দেখতে।
প্রধান খাবার: গাছ পিঁপড়া, উইপোকা ও পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত। বাসা বাঁধে গাছের মরা কাণ্ডে গর্ত বানিয়ে। নিজেরাই গর্ত খুঁড়ে নেয়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে কত দিন সময় লাগে সে তথ্য জানা যায়নি।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকন্ঠ 09/11/2018