সিঁদুরে ফুলঝুরি | Scarlet backed flowerpecker | Dicaeum cruentatum

4742
সিঁদুরে ফুলঝুরি | ছবি: ইন্টারনেট

সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি ‘সিঁদুরে ফুলঝুরি’। শরীরে বাহারি রঙের পালক। চেহারা বেশ আকর্ষণীয়। এক কথায় সুদর্শন প্রজাতির পাখিদের কাতারে পড়ে ওরা। আকারে চড়ই পাখির চেয়েও খাটো। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র নিুভূমির জঙ্গলে অথবা বৃক্ষাচ্ছাদিত এলাকায় বিচরণ করে। বাংলাদেশে যত্রতত্র নজরে পড়ে। বিশেষ করে গ্রামীণ বনাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। দেখা যায় গেরস্তের সাজানো বাগানেও। অথবা বাড়ির আঙিনার লাউ-কুমড়া কিংবা ঝিঙেলতার ঝোপে নাচানাচি করতে দেখা যায়। অর্থাৎ যেখানে ফুল সেখানে ফুলঝুরি পাখির সমাহার। ফুলের মধু এদের প্রধান খাবার। মধুপানের নেশায় সারা দিন ব্যস্ত সময় পার করে।

স্বভাবে ভারি চঞ্চল। অস্থিরমতি পাখি। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার সময় নেই। ছোট গাছ-গাছালি কিংবা লতাগুল্মের ওপর লাফিয়ে লাফিয়ে শিস কাটে। মিষ্টি সুরে গান গায় ‘চিপ…চিপ… বা ঝিট…ঝিট…’ সুরে। সুর শুনতে মন্দ নয়। সিঁদুরে ফুলঝুরি পাখিদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ব্রুনাই, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর পর্যন্ত। বাংলাদেশে এদের অবস্থান সন্তোষজনক। ভূমি থেকে এদের বাসা কাছাকাছি বিধায় বিড়াল বা বনবিড়ালের আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়। তথাপিও দেশে ভালো অবস্থানে রয়েছে ওরা।

পাখির বাংলা নাম: ‘সিঁদুরে ফুলঝুরি’, ইংরেজি নাম: ‘স্কারলেট ব্যাকেট ফ্লাওয়ারপেকার’ (Scarlet-backed flowerpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: Dicaeum cruentatum | এরা ‘লালপিঠ ফুলঝুরি’ নামেও পরিচিত।

দৈর্ঘ্য কমবেশি ৭-৯ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির কপাল থেকে শুরু করে ঘাড়ের মাঝ বরাবর সোজা পিঠ দিয়ে লেজ ঢাকনি পর্যন্ত সিঁদুরে লাল পালকে আবৃত। মাথার এবং ঘাড়ের দুপাশ ডানা এবং লেজ কালো। দেহের দুপাশ নীলাভ-ধূসর। দেহতল বাদামি-হলুদ। অপরদিকে স্ত্রী পাখির উপরের অংশ ধূসরাভ-বাদামি। নিতম্ব লাল। উভয়ের ঠোঁট ও পা কালো।

প্রধান খাবার ফুলের মধু ও বিচি। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। ভূমি থেকে দুই-আড়াই মিটার উঁচুতে গাছের ডালে অথবা গুল্মলতা আচ্ছাদিত ঝোপে ঝুলন্ত থলে আকৃতির বাসা বাঁধে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে গাছের নরম তন্তু, তুলা, শ্যাওলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 21/12/2018

মন্তব্য করুন: