
মূলত এরা একই প্রজাতির পাখি। দেখতেও অনেকটা একই রকম। স্বভাবেও মিল রয়েছে খানিকটা। ভয়ঙ্কর দর্শন। গোলাকার চোখ। গোলাকার শারীরিক গঠনও। নিশাচর পাখি। কেবল রাতের আঁধার নেমে এলে শিকারে বের হয়। দিনে গাছের বড় পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। কিছুটা লাজুক স্বভাবের বলা যায়। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো অত হিংস্র নয়। চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে।
মিশ্র চিরহরিৎ বনে দেখা যায়। এছাড়াও বাঁশ বনে কিংবা নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চলে দেখা মেলে। একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় গাছের ডালে চোখ প্রসারিত করে চুপচাপ বসে থাকে। ওই অবস্থায় যে কেউ দেখলে ভয় পেতে পারেন। তার ওপর গুরুগম্ভীর সুরে ডেকে ওঠে, ‘গুগ গুক..গুগ গুক..’। যার ফলে পিলে চমকে ওঠে অনেকেরই। আসলে ওরা একেবারেই নিরীহ প্রাণী। অন্যসব প্যাঁচাদের মতো এরাও মাথা ঘুরিয়ে ঘাড়ের ওপর নিয়ে ঠেকাতে পারে। শিকার সন্ধানে পদ্ধতিটি দারুণ কাজে দেয়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া উত্তর-ভারত, পশ্চিম হিমালাঞ্চল, শ্রীলঙ্কা, উত্তর পাকিস্তান, চীন ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়।
পাখির বাংলা নাম: ‘কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা’, ইংরেজি নাম: ‘কলারড স্কপস আউল’ (Collared scops owl), বৈজ্ঞানিক নাম: Otus lettia| এরা ‘বন্ধনীযুক্ত নিমপোখ’ নামেও পরিচিত।
দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৩-২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। ওজন ১০০-১৭০ গ্রাম। মাথার দু’পাশে কান পশম রয়েছে, যা ঝুঁটি আকৃতির দেখায়। চোখের দু’পাশে কপালের ওপর সাদা টান। মুখমণ্ডল হলদে-বাদামি। দেহের উপরাংশ ধূসর-বাদামি রঙের ছিট ছিট। দেহের নিচের দিকে হলদে-বাদামির ওপর টানা কালো রেখা। চোখের তারা গাঢ় বাদামি। শিং রঙা ঠোঁট আকারে খাটো, নিচের দিকে বড়শির মতো বাঁকানো। পায়ের আঙুল ফ্যাকাসে হলদে।
প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ, গোবরে পোকা, ইঁদুর, টিকটিকি, ফড়িংসহ অন্যান্য পোকামাকড়। সুযোগ পেলে ছোট পাখিও শিকার করে। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। মরা গাছের ৩-৫ মিটার উঁচুতে প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৫ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে মাসখানেক লেগে যায়।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/08/2015