নাকতা হাঁস | Knob billed duck | Sarkidiornis melanotos

2201
নাকতা হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট

বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি। হালে এরা পরিযায়ী হয়ে আসে আমাদের দেশে। তবে সংখ্যায় একেবারেই নগণ্য। বলা যায় বিরল দর্শন। অথচ একটা সময়ে এ দেশের স্থায়ী বাসিন্দা ছিল এরা। শীতে বর্তমানে সিলেট বিভাগের আর্দ্রভূমি এবং হাওর এলাকায় কিছু নজরে পড়ে। শুধু প্রজনন সংকটের কারণে ‘নাকতা হাঁস’ এ দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। মূলত এরা বাদাভূমি বা নলবন এলাকার বাসিন্দা। বিচরণ করে পারিবারিক দলে। দলে প্রায় ৭০-৮০টি পাখি দেখা যায়।

অগভীর জলাশয়ে সাঁতরিয়ে শিকার খোঁজে। মাথা ডুবিয়ে খাবার সংগ্রহ করে। বিপদ সংকেত পেলে জলে ডুবাতে থাকে। বেগতিক দেখলে গাছের ডালে গিয়ে বসে। এরা তেমন হাঁকডাকে অভ্যস্ত নয়। প্রজনন মুহূর্তে পুরুষ পাখি নিচু স্বরে ব্যাঙের মতো ডাকাডাকি করে। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ছাড়াও এদের দেখা যায় ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকায়। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত। বাংলাদেশে মহাবিপন্ন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিতও রয়েছে।

পাখির বাংলা নাম: ‘নাকতা হাঁস’, ইংরেজি নাম: Knob-billed duck, বৈজ্ঞানিক নাম: Sarkidiornis melanotos| এরা ‘বোঁচা হাঁস’ নামেও পরিচিত।

প্রজাতিটি লম্বায় ৫৬-৭৬ সেন্টিমিটার। ওজন ২.২ কেজি। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় ও আকারে পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা ও গলা সাদা। গলায় সাদার ওপর ছোট ছোট কালো তিলা। ঠোঁট কালো। ঠোঁটের গোড়ায় স্ফীত মাংসের কালো লতিকা। পিঠ দেখতে কালো মনে হলেও আসলে তা নীলাভ। পিঠ থেকে সবুজ-বেগুনি আভা বের হয়। ডানা কালচে। দেহতল সাদাটে। অন্যদিকে স্ত্রী পাখি আকারে খানিকটা ছোট। পিঠে অনুজ্জ্বল ছিটানো বাদামি ফোঁটা। ঠোঁটের গোড়ায় স্ফীত মাংসের লতিকা নেই। উভয় পাখির ঠোঁট কালো ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেহের উপরাংশ অনুজ্জ্বল, দেহতল লালচে-বাদামি।

প্রধান খাবার: শস্যবীজ, ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকা-মাকড়, জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা। প্রজনন মৌসুম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। জলাশয়ের কাছাকাছি পুরনো গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। বাসা বাঁধতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন ডালপালা, ঘাস, শুকনো পাতা ও পালক। ডিম পাড়ে ১০-১৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৭-৩০ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 27/06/2014

মন্তব্য করুন: