নীল শিলাদামা | Blue rock thrush | Monticola solitarius

1702
নীল শিলাদামা | ছবি: ইন্টারনেট

দেখতে চমৎকার। তবে নিরীহ মনে হলেও ত্যাদড় প্রকৃতির। আকার-আকৃতিতে অনেকটা কালো দোয়েলের মতো। প্রাকৃতিক আবাসস্থল ফাঁকা উঁচুস্থান। দৃষ্টি থাকে নিচের দিকে। শিকার দেখলে বুলেটগতিতে নেমে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে পুনরায় সে স্থানে বসে। শিকার ধরতে মজাদার কৌশল প্রয়োগ করে। বিশেষ করে শিকার সংকট দেখলে ঝোঁপজঙ্গলের কাছে গিয়ে পাখা ঝাঁপটিয়ে পতঙ্গ বের করে আনে।

আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে ওরা একই স্থানে বসে দীর্ঘদিন শিকারের প্রতীক্ষায় থাকে। তবে রাতে নিরাপদে চলে যায়। দখলকৃত স্থানে অন্য কোনো প্রজাতির পাখিরা বসলে বিবাদ বাঁধিয়ে দেয়। এমনকি হিংস্রপাখি ফিঙেকে পর্যন্ত ছাড় দেয় না। এদের কণ্ঠস্বর শ্রুতিমধুর নয়। অবশ্য খুব একটা ডাকাডাকিও করে না। নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত গোসলাদি করে। গোসল করে শেষ বিকাল নাগাদ। তারপর বিকালের সোনারোদে ডানামেলে শরীরটা শুকিয়ে নেয়। দেশে শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ব্যতীত দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য এশিয়া, উত্তর চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত।

পাখির বাংলা নাম: ‘নীল শিলাদামা’ | ইংরেজি নাম: ‘ব্লু রক-থ্রাস’ (Blue rock thrush) বৈজ্ঞানিক নাম: Monticola solitarius |

এদের গড় দৈর্ঘ্য ২১-২৩ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির অধিকাংশ পালকের বর্ণ নীলচে কালো। ডানা এবং লেজের উপরিভাগ কালচে। ডানার উপরে রয়েছে ছোট্ট সাদা পট্টি। সমস্ত শরীরটাকেই মাছের আঁশটের মতো দেখতে। দেহতল গাঢ় বাদামি। শীতে রঙ বদলায়। নীল রঙ তখন ফিকে দেখায়। তবে আঁশটেভাব থেকে যায়। স্ত্রী পাখির রঙে পার্থক্য রয়েছে খানিকটা। পুরুষ পাখির যে পালকগুলো নীলাভ, স্ত্রী পাখির ওই পালকগুলো বাদামির উপর নীলাভ। আর পেটের দিকে বাদামির উপর লালচে আঁশটেভাব। চোখ, ঠোঁট, পা কালো।

প্রধান খাবার: পোকামাকড়, কেঁচো, ছোট ব্যাঙ ইত্যাদি। মাঝে মধ্যে খেজুরের রস পান করে। প্রজনন সময়- মার্চ থেকে এপ্রিল। পাথুরে পাহাড়ি অঞ্চলে বাসা বাঁঁধে। ডিমপাড়ে ৩-৫টি। বাচ্চা ফোটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, 18/07/2018

মন্তব্য করুন: