
দেখতে চড়ুইয়ের মতো হলেও আকারে সামান্য বড়। স্বভাবে চঞ্চল হলেও অহিংস । প্রাকৃতিক আবাসস্থল হিমালয়াঞ্চলের পাহাড়-জঙ্গল। শীতকালে পরিযায়ী হয়ে আসে আমাদের দেশে। পৌষ-মাঘ মাসে দেখা যায় এদের। লোকালয় থেকে খানিকটা দূরে নির্জনে বিচরণ করতে পছন্দ করে। পাহাড়ি অঞ্চল, নলখাগড়ার বন, তুলা, তিসি, ভূট্টা, কাউন খেতেও এদের দেখা মেলে। শিকারের জন্য উত্তম স্থান হিসেবে বেছে নেয় এসব ফসলের ক্ষেতখামার।
ফসলের ডগায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে শিকারের প্রতীক্ষায়। ভূমিজ কীট দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠোঁটে চেপে ধরে। নিজের শিকার এলাকা শত্রুমুক্ত রাখতে ‘হুইট-চ্যাট, হুইট-চ্যাট’ সুরে ডেকে অন্য পাখিদের ভয় পাইয়ে দিতে চেষ্টা করে। পারতপক্ষে আক্রমণের ধার ধারে না। কাউকে তেড়ে যাওয়ার মতো অত ক্ষমতাও ওদের নেই।
পাখির বাংলা নাম: ‘লাল ফিদ্দা’, ইংরেজি নাম: ‘কমন স্টোন চ্যাট’ (Common Stonechat), বৈজ্ঞানিক নাম: Saxicola Torquata | এরা ‘লাল চ্যাট’ নামেও পরিচিত।
লতা-গুল্মের ভিতর থেকে অতিরিক্ত চঞ্চলতা দেখানোর জন্য অনেকে এদের ‘গুল্মচঞ্চল’ নামে ডাকে। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১২-১৩ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে গলা পর্যন্ত কালো বর্ণের। গলার দুই পাশে সাদা ছোপ। লেজ, ডানা পাটকিলে কালো। বুক লালচে কমলা পেটের দিকে তা বিস্তৃত হয়েছে। তলপেটের দিকে হালকা কমলা বর্ণ সাদার সঙ্গে মিশে গেছে। পা, ঠোঁট কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। স্ত্রী পাখির পিঠ গাঢ় ধূসরাভ-বাদামি ও ডোরাদাগ।
প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ। ফসলের ডগায় বসা কীটপতঙ্গ পেলেও শিকার করে। প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুলাই। পাকিস্তান, নেপালের দুর্গম পাথুরে পাহাড়ের ওপর শুকনো ঘাস, লতা-পাতা দিয়ে বাসা বানায়। বাসা পেয়ালা আকৃতির। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৬ দিন।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, 04/07/2018