রাজ ধনেশ | Great Indian Hornbill | Buceros bicornis

4513
রাজ ধনেশ | ছবি: ইন্টারনেট

বিরল দর্শন পাখি। দেশে যত্রতত্র দেখার নজির নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের গহিন অরণ্যে কদাচিত নজরে পড়ে। বাংলাদেশ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, মালেয়েশিয়া, নেপাল ও ভারতে দেখা মেলে। দেখতে যেমনি এরা অদ্ভূত গড়নের তেমনি স্বভাবেও অদ্ভূত। বিশেষ করে প্রজনন সময়ে অদ্ভূত কাণ্ড ঘটিয়ে বসে। স্ত্রী পাখি স্বেচ্ছায় গাছের কোটরে ঢুকলে পুরুষ পাখি ওকে বন্দি করে রাখে। কোটরের মুখ বন্ধ করে দেয় কাদামাটি দিয়ে। পুরুষ পাখি নিজেই কাদামাটি বহন করে এনে ঠোঁট দিয়ে লেপে দেয়। শুধু ছোট্ট একটি ছিদ্র রাখে বায়ু চলাচল এবং খাবারের জোগান দিতে। পুরুষ পাখিকেই খাবারের জোগান দিতে হয় তখন। ডিম-বাচ্চা ফুটলেও খাদ্যের চাহিদা মেটায় পুরুষ পাখিই। শাবক স্বাবলম্বী হওয়ার আগ পর্যন্ত পুরুষ পাখিকেই খাবার জোগানে ব্যস্ত থাকতে হয়। বাচ্চারা ফুরফুরে হলে ভেতর থেকে মা পাখি ঠোঁট দিয়ে ঠুকরিয়ে মাটির আস্তর ফুটো করে বেরিয়ে আসে। তত দিনে পুরুষ পাখির অবস্থা দফারফা। দুর্বল হয়ে পড়ে অনেকটাই।

এ পাখি আজীবন একই স্থানে বাস করে যদি জঙ্গলে কোনো অশান্তি না ঘটে। সবচেয়ে দৃষ্টান্তমূলক দিকটি হচ্ছে এদের জুড়ি আজীবনের জন্যই থাকে, মৃত্যু বা শিকারির হাতে ধৃত না হওয়া পর্যন্ত। এদের কণ্ঠস্বর কর্কশ, ‘খক্-খক্-খক্’ শব্দে ডাকে। হঠাৎ ডানা ঝাপটালে ভয় পেয়ে লাগে। এ বিরল প্রজাতির পাখি আমাদের দেশে মোটেই ভালো অবস্থানে নেই। এমনিই এদের প্রজনন সন্তোষজনক নয়। তার ওপর কবিরাজ নামক অপচিকিৎসকদের কবলে পড়ে এ পাখিগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গেছে আজ। তারা এ পাখির অবয়বটাকে কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের রোগের উপশম হয় এমনটি বয়ান করে ফুটপাতে ওষুধ বিক্রি করে। এ ছাড়া পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়িরা মাংসের লোভে এদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। বিশালাকৃতির এ পাখি প্রথম দেখি ১৯৮৭ সালে খুলনার খালিশপুরে এক কবিরাজের কব্জায় বন্দি অবস্থায়। পাখিটার পাখার পালক কেটে তার পাশে বসিয়ে রেখেছে। উৎসুক জনতা এক নজর দেখছে, কবিরাজ তাতে মজা পাচ্ছেন আর ফন্দি আঁটছেন ওষুধ বেচার। দ্বিতীয়বার দেখা হয়নি।

পাখিটার বাংলা নাম: ‘রাজ ধনেশ’, ইংরেজি নাম: গ্রেট ইন্ডিয়া হরনবিল (Great Indian Hornbill), বৈজ্ঞানিক নাম: (Buceros bicornis) গোত্রের নাম: ‘বুসেরোটিদি’।

এরা লম্বায় ৯৫-১০৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৩-৪ কিলোগ্রাম। ঠোঁটের গড়ন অদ্ভূত, আকারে বড়। কাস্তের মতো নিচের দিকে বাঁকানো। ঠোঁটের ওপরে শক্ত বর্ম। ঠোঁটের ডগা লালচে বাকিটা হলদেটে। ঠোঁটের গোড়া, কপাল কালচে। মাথা, গলা, ঘাড় হলুদ বর্ণের। বুক, পেট কালো। ডানার অধিকাংশ পালক কালো মাঝ বরাবর সাদা পট্টি। লেজে সাদার ওপর কালো পট্টি। চোখের বলয় কালো, তারা বা মনি লাল। স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে চোখের বলয় লাল মনি সাদা।

প্রধান খাবার: ফল-ফলাদি। এ ছাড়া ইঁদুর, গিরগিটি ছোট পাখি ইত্যাদি খায়। প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। বড় বড় গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৮-৪০ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 31/05/2013

মন্তব্য করুন: