ময়না পাখি | Common hill myna | Gracula religiosa

12246
ময়না পাখি | ছবি: ইন্টারনেট

পাখিটার নাম জানেন না, এমন মানুষ বোধকরি আমাদের দেশে খুবই কম আছেন। এরা এতই আকর্ষণীয় পাখি যে, উপঢৌকন হিসেবেও একে অপরকে প্রদানের রেওয়াজ চালু আছে এ দেশের মানুষের কাছে। এ পাখি না দেখলেও শুধু নামেই চেনেন অনেকে। শুধু বাংলাদেশের মানুষের কাছেই নয়, গোটা বিশ্বে রয়েছে এদের ব্যাপক চাহিদা। কারণ এরা মানুষের কথাবার্তা হুবহু নকল করতে পারে। সেজন্য অবশ্য ওদের পস্তাতেও হচ্ছে খুব বেশি। নিছক শখের বশে অনেক চড়া দামে মানুষ এদের কিনে নিয়ে বন্দি করে রাখে। আমাদের দেশের মানুষও সে কাজটি করে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, পাহাড়ি এলাকার কিছু লোক শিকার করে এদের মাংস পর্যন্ত খায়।

এ কারণে এরা দুর্লভ হয়ে পড়েছে আমাদের দেশে। অথচ একটা সময় দেশের মিশ্র চিরসবুজ অরণ্যে এদের মোটামুটি সাক্ষাৎ পাওয়া যেত। দেখা যেত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অরণ্যেও। এ পাখি সাধারণত মাটিতে নামে না। বৃক্ষচারী। সারাদিন গাছে গাছে বিচরণ করেই খাবার সংগ্রহ করে। জোড়ায় জোড়ায় কিংবা ছোট দলেও বিচরণ করতে দেখা যায়। তবে সবচেয়ে মজাদার বিষয় হচ্ছে, স্ত্রী-পুরুষ পাখি আজীবনের জন্য জোড়া বাঁধে। সঙ্গী না মারা যাওয়া পর্যন্ত ওদের জোড় অটুট থাকে। এ পাখি সম্পর্কে জানার আগ্রহ যথেষ্ট রয়েছে দেশের মানুষের। অনেক পাঠক এদের নিয়ে লেখার অনুরোধ জানিয়েছেন আমাকে। পাঠকের সেই অনুরোধকে প্রাধান্য দিয়ে এ পাখি সম্পর্কে যৎসামান্য তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করলাম। আশাকরি পাখিপ্রেমীরা এদের সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা নিতে পারবেন।

পাখিটার বাংলা নাম: ‘ময়না’, ইংরেজি নাম: ‘কমন হিল ময়না’ (Common hill myna), বৈজ্ঞানিক নাম: গ্রাকুলা রেলিজিওসা (Gracula religiosa) |

লম্বায় ময়না ২৫-২৯ সেন্টিমিটার। গায়ের পালক কালো। মাথা কুচকুচে কালো। ঘাড়ের উপরের দিক বেয়ে দু’পাশে দুটি বড় হলুদ লতিকা দু’ভাগ হয়ে চোখের নিচে নেমেছে। এদের কালো ডানায় একটি ছোট্ট সাদাটে পট্টি রয়েছে। চোখ গাঢ় বাদামি। ঠোঁট মজবুত গড়নের, বর্ণ কমলা-হলুদ। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। প্রজননের সময় গলা ও ঘাড়ে বেগুনি আভা দেখা যায়। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।

ময়না পাখি সর্বভুক। পোকামাকড় থেকে শুরু করে ফুলের মধু এবং ফল সবই খায়। পোষা ময়না ভাতও খায়। প্রজনন সময় বর্ষাকাল। মাটি থেকে প্রায় ১০-১৫ মিটার উঁচু গাছের কোটরে বাসা বাঁধে। বাসা তৈরিতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতা ও পালক। একই বাসায় অনেক বছর ব্যবহার করে। ডিমের সংখ্যা ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫। শাবক উড়তে শিখলেই মা-বাবার কাছ থেকে সরে পড়ে।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 09/03/2013

মন্তব্য করুন: