গাঙচিল | Whiskered Tern | Chlidonias hybridus

3519
গাঙচিল | ছবি: ইন্টারনেট

আমাদের দেশের স্থায়ী বাসিন্দা এ জলচর পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও এরা কাশ্মীরসহ উত্তর ভারতের গাঙ্গেয় উপত্যকা ধরে আসাম শীলঙ্কা ও নেপালের নিুভূমিতে বিচরণ করে। প্রচণ্ড শীতে এরা ভারতবর্ষের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তখন পরিযায়ী হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বেলুচিস্তান, পেশোয়ার ও সিন্ধু প্রদেশ অবধি। তবে বাংলাদেশের নদনদী, হাওর-বাঁওড় কিংবা সমুদ্র উপকূলে এদের বছরের যে কোনো সময় দেখা যায়। কারণ এরা স্থানীয় জলচর পাখি। একটা সময়ে এ পাখিদের বিচরণ ছিল অবাধ। সে তুলনায় বর্তমানে এদের দেখা মিলে অনেকটাই কম। তবে নদীপথের যাত্রীদের সঙ্গে এদের সাক্ষাৎ একটু বেশিই ঘটে। বিশেষ করে এ পাখি লঞ্চের পেছনে ‘ক্রিয়াক ক্রিয়াক’ সুরে ডেকে ওড়াউড়ি করে। কারণটি হচ্ছে লঞ্চ বা স্টিমারের প্রপেলারের প্রচণ্ড ঘূর্ণিতে অঘাত পেয়ে ছোট মাছ আহত অথবা নিহত হলে এরা ভুরিভোজন করার সুযোগ পায়। স্থিতা এদের মাঝে খুবই কম।

দিনের অধিকাংশ সময় এরা নদনদীর ওপরই উড়ে বেড়ায়। এরা একাকী কিংবা দলবদ্ধভাবেও বিচরণ করে। বিশ্রাম নেয় জলে পুঁতে রাখা কঞ্চি বা বাঁশের ওপর। ঠিক সে মুহূর্তে ওদের খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব যদি সঙ্গে থাকে বাইনোকুলার। অন্যথায় উড়ন্ত অবস্থায় রঙরূপ পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক অনেকবার দেখেছি এদের আমি। নদীপথে যাতায়াতের সুবাদে দেখা মেলে প্রায়ই। ফলে এ পাখি নিয়ে আমার আগ্রহ তুলনামূলক কমই ছিল।

পাখিটার বাংলা নাম: ‘গাঙচিল’, ইংরেজি নাম: ‘হুইস্কার্ড টার্ন’, (Whiskered Tern), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ক্লিডোনিয়াস হাইব্রিডাস্’ (Chlidonias hybridus) ‘লারিদি’। আমাদের দেশে কয়েক প্রকার গাঙচিল দেখা যায়।

গাঙচিল লম্বায় ২৫-২৭ সেন্টিমিটার। স্লিম গড়ন। গলা ধবধবে সাদা। ঘাড়ে বন্ধনী রয়েছে। প্রজননের সময় মাথা ও ঘাড় কালো। পিঠ গাঢ় ধূসর। কপাল, গলা সাদা। নিচের দিকে কালো। এ সময় ঠোঁট লাল দেখায়। পা-পায়ের আঙুল গাঢ় লাল হয়। প্রজননের বাইরে পিঠের দিক ধূসরাভ। নিচের দিক সাদাটে। মাথায় কালো ছিট দেখা যায়। শুধু মাথার চান্দিই নয় ঠোঁটের বর্ণ পাল্টিয়ে কালচে রূপ ধারণ করে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।

গাঙচিলের প্রধান খাবার মাছ। এ ছাড়া ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড় খায়। প্রজনন সময় জুন থেকে আগস্ট। দেশভেদে প্রজনন সময়ের তারতম্য ঘটে। নদী বা জলাশয়ের জলজ গুল্মের ওপর বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/03/2013

মন্তব্য করুন: