
এ পাখিরা মাটিতে দাঁড়ালে অনেকটাই গুইসাপের শাবকের মতো মনে হয়। গলার নিচটায়ও রয়েছে সে ধরনের আঁকিবুঁকি চিহ্ন। আর ওদের পিঠের দিকে তাকালে অজগর সাপের চিত্রটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। এমনই অদ্ভুত গড়নের পাখি এরা। খুব চতুরও এ পাখি। মাটিতে বিচরণ করেও বন্যপ্রাণীর শিকারে পরিণত হয় না খুব একটা। বরং বিপদে পড়লে অভিনয় করে পার পেয়ে যায়। হঠাৎ করে এরা যদি কোনো মানুষের নজরে পড়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়টাকে ১৮০ ডিগ্রি কোনে ঘোরাতে থাকে আর চোখ উল্টিয়ে লেজ নাড়তে নাড়তে মাটিতে শুয়ে পড়ে। ভাবটা এমন দেখায় মনে হচ্ছে বুঝি ওর ঘাড়টা মচকে গেছে এখন প্রচণ্ড ব্যথায় কোকাচ্ছে। এ অবস্থায় মানুষ ওদের বেগতিক ভাবসাব দেখে থমকে যায় বা ধরতে ইতস্ততবোধ করে। ঠিক তখনই ডানায় বাতাস লাগিয়ে ফুরুৎ।
এরা পরিযায়ী পাখি। শীতকালে চীন, সাইবেরিয়া থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় পৌঁছায়। থাকে বসন্তকাল অবধি। তবে এদের মূল বাসভূমি ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে। ডাকে নাকি সুরে ‘খেক্-খেক্-খেক্’ শব্দে। এ ধরনের পাখি বহু বছর আগে দেখেছি মিরপুরের উদ্ভিদ উদ্যানে। দেখেছি মাটির ওপর বিচরণ করতে। নির্জনে খুঁটেখুঁটে পোকামাকড় খাচ্ছে।
এ পাখির বাংলা নাম: ‘মেঠো কাঠঠোকরা’, ইংরেজি নাম: ‘ইউরেশিয়ান রাইনেক’ (Eurasian Wryneck), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘জাইংকস টরকিল্লা’, (Jynx torquilla) গোত্রের নাম : ‘পাইকিদি’। উল্লেখ্য, অন্যসব কাঠঠোকরা প্রজাতির পাখিদের সঙ্গে এদের চেহারার মিল না থাকাতে অনেকে এদের ‘ঘাড়ব্যথা’ পাখি নামে ডাকে।
লম্বায় এরা ১৬-১৯ সেন্টিমিটার। তুলনামূলক লেজ খানিকটা লম্বা। গায়ের বর্ণ ধূসর-মেটের সঙ্গে সাদার মিশ্রণে রয়েছে ছোপ, ডোরা খাড়া দাগ। পিঠের ওপর মোটা দাগ। মাথা, গলার নিচে আড়াআড়ি কালো ডোরা দাগ, পেটের দিকটায় সাদার উপরে এলোমেলো দাগ। লেজ বলয়যুক্ত। চোখের পাশের রেখা ঘাড়ের মাঝ বরাবর চলে গেছে। ঠোঁট, পা বাদমি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম মনে হলেও আসলে পুরুষ পাখির গায়ের বর্ণ কিছুটা উজ্জ্বল।
এদের প্রধান খাবার পোকামাকড়। তবে পিঁপড়া, পিঁপড়ার ডিম এদের প্রিয়। খেঁজুরের রস খেতেও দেখা যায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে গাছের খোড়লে। অনেক সময় অন্য প্রজাতির কাঠ ঠোকরাদের পরিত্যক্ত বাসায়ও ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৭-১০টি।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/01/2013