নীলাভ গৃহবাসী আবাবিল | Asian House Martin | Delichon dasypus
নীলাভ গৃহবাসী আবাবিল | ছবি: ইন্টারনেট পরিযায়ী পাখি। শীতে দেখা মেলে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল পাহাড়ি এলাকায় এবং সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উঁচুতেও দেখা মেলে। পোকামাকড়ের আধিক্য যেখানে সে সব এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ করে। আবার পত্র-পল্লবহীন গাছেও ঝাঁকে ঝাঁকে বসে বিশ্রাম নেয়। প্রজনন মুহূর্তে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। দূর-দূরান্ত থেকে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে কাদামাটি বয়ে এনে বাসা বাঁধে। কণ্ঠস্বর শ্রুতিমধুর না হলেও বিরক্তিকর নয়। অস্থিরমতির পাখি। উড়ন্ত পতঙ্গ শিকার করে। সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, এরা উড়ন্ত অবস্থায়ই জলপান করে। জলাশয়ের ওপর চক্কর মেরে স্থির হয়ে জল ঠোঁটে নিয়ে পান করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, তিব্বত, আফগানিস্তান, সাইবেরিয়া, ফিলিপাইন, জাপান, তাইওয়ান, কোরিয়া, সুমাত্রা ও সংযুক্ত আরব আমিরাত পর্যন্ত। বিশ্বে প্রজাতিটি হুমকি নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘নীলাভ গৃহবাসী আবাবিল’| ইংরেজি নাম: ‘এশিয়ান হাউস মার্টিন’ (Asian House Martin) | বৈজ্ঞানিক নাম: Delichon dasypus | এরা ‘এশীয় ঘরনাকুটি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১২-১৩ সেন্টিমিটার। ওজন ১৪ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষের চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। মাথা, ঘাড় ও পিঠ ও গাঢ় নীল। ডানা এবং লেজ কালো-বাদামি। লম্বা ডানা লেজের প্রান্তে মিশেছে। লেজ মাছের লেজের মতো চেরা। গলা থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদা। চোখ বাদামি। ঠোঁট খাটো, ধূসর-কালো। পা ও পায়ের পাতা সাদা পালকে আবৃত। যুবাদের রং ভিন্ন। প্রধান খাবার: উড়ন্ত পোকামাকড়। বিশেষ করে মাছি এদের খুব প্রিয় খাবার। প্রজনন মৌসুম অক্টোবর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। পুরনো দরদালানের ফাঁকফোকরে কাদা মাটি দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ফোটে ১৪-১৬ দিনে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/03/2018
ক্ষুদে কাঠঠোকরা | Speckled Piculet | Picumnus innominatus
ক্ষুদে কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও দুর্লভ দর্শন ‘ক্ষুদে কাঠঠোকরা’। চেহারা অনেকটাই ‘ছোট বসন্ত বউরি’ পাখিদের মতো। পাখি পর্যবেক্ষক ব্যতীত প্রথম দর্শনে যে কেউই বসন্ত বউরি বলে ভুল করেন তাই। এরা অনেকটাই কুঁজো ধাঁচের, নাদুসনুদুস চেহারার অধিকারী। দেখা মেলে প্যারাবন, অর্ধ-চিরসবুজ বন, আর্দ্র পাতাঝরা বন কিংবা বাঁশঝাড়ে। তবে দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না। কেবল কালেভদ্রে দেখা মেলে সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে এবং খুলনা বিভাগের প্যারাবনে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। বাংলাদেশ ছাড়াও দেখা মেলে ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ও চীনে। বেশিরভাগই এরা একাকী বিচরণ করে। মাঝেমধ্যে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। বিচরণকালীন গাছের চিকন ডালের চারপাশে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে, আর তীক্ষè কণ্ঠে ‘স্পিট..স্পিট..’ সুরে ডাকে। ক্ষুদে কাঠঠোকরা বৃক্ষচারী পাখি, প্রয়োজন ব্যতিরেকে ভূমি স্পর্শ করে না। পাখির বাংলা নাম: ‘ক্ষুদে কাঠঠোকরা’, ইংরেজি নাম: ‘স্পেকলেড পিকুলেট’ (Speckled Piculet), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘Picumnus innominatus’। এরা ‘তিলা কুটিকুড়ালি’ নামেও পরিচিত। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মোট ২০ প্রজাতির কাঠঠোকরার দেখা মেলে। প্রজাতিটি লম্বায় ১০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে খানিকটা পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির কপাল অনুজ্জ্বল কমলা, মাথার চাঁদি হলুদ-জলপাই। স্ত্রী পাখির চাঁদি হলুদ-জলপাই। এ ছাড়া উভয়ের পিঠ হলদে-সবুজ। ডানার নিচে ছোট ছোট দাগ, পেছনে দিকে খাড়া চিতি যা ডোরার মতো দেখায়। দেহের নিচের দিকটা সাদাটের ওপর বড় বড় কালো ডোরা দাগ। লেজ কালো, বাইরের পালক সাদা। চোখের উপরে নিচে দুটি মোটা সাদা দাগ, যা ঘাড় হয়ে পিঠে গিয়ে ঠেকেছে। সাদা দুই দাগের মধ্যখানের দাগটি জলপাই রঙের। চোখ লালচে-বাদামি। ক্ষুদ্রাকৃতির ঠোঁটটি (১.১ সেন্টিমিটার) সেøট কালো। পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল ফ্যাকাসে। প্রধান খাবার: গাছ পিঁপড়া, লার্ভা ও পিউপা। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে এপ্রিল। বাসা বাঁধে গাছের খোড়লে। নিজেরাই গাছের মরা ডালে গর্ত বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১১-১২ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/07/2014
হলুদগলা কাঠঠোকরা | Yellow naped Woodpecker | Picus flavinucha
হলুদগলা কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন, আবাসিক পাখি। প্রথম দর্শনে যে কারও নজর কাড়তে সক্ষম। বাসস্থান দেশের গভীর বনাঞ্চলে হলেও বেশির ভাগই বিচরণ চিরসবুজ পাতাঝরা বনের বড় পাতাধারী সুউচ্চ বৃক্ষের কাণ্ডে। পাহাড়ের পাদদেশে কিংবা চা বাগানেও সাক্ষাৎ মেলে। সাক্ষাৎ মেলে কমবেশি প্যারাবনেও। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় বিস্তৃতি রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এরা সাধারণত জোড়ায় কিংবা পারিবারিক ছোট দলে বিচরণ করে। জোড়ের পাখির সঙ্গে সাক্ষাৎ না ঘটলে যোগাযোগ রক্ষার্থে ‘পি-উ… পি-উ…’ সুরে চেঁচিয়ে ওঠে। সুর বড়ই করুণ। পেঙ্গা ও ফিঙ্গে পাখিদের সঙ্গে এদের খানিকটা ভাব লক্ষ্য করা যায়। সুযোগ পেলে ওদের সঙ্গে শিকারেও বের হয়। এ ছাড়া নিজেরা সকাল এবং গোধূলিলগ্নে নিয়ম করে শিকারে বের হয়। গাছের উঁচু খাড়া ডালের বাকল ঠুকরে শিকার খোঁজে। ভেতরে পোকামাকড়ের সন্ধান মিললে লম্বা শক্ত, আঠালো জিহ্বার সাহায্যে তা বের করে আনে। পায়ের শক্ত নখর দিয়ে অাঁকড়ে ধরে গাছের খাড়া কাণ্ডে তরতরিয়ে লাফিয়ে উপরে ওঠে। প্রজনন মৌসুমে বনপ্রান্তরে ছোটাছুটি বেড়ে যায়। বেড়ে যায় হাঁকডাকও। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘হলুদ-গলা কাঠঠোকরা’। ইংরেজি নাম: ‘ইয়েলো-নেপড উডপেকার’,(Yellownaped Woodpecker) বৈজ্ঞানিক নাম: ‘পাইকাস ফ্লাভিনুচা’, (Picus flavinucha) গোত্রের নাম: ‘পাইকিদি’। দেশে প্রায় ২০ প্রজাতির কাঠঠোকরা নজরে পড়ে। এরা ‘বড় হলদেকুড়ালি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি লম্বায় ৩৩ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড়ে সিংহের কেশরের মতো খাড়া সোনালি-হলুদ ঝুটি রয়েছে। গলা সোনালি-হলুদ, গলার দুপাশ কালো। পিঠ হলদে সবুজ। ডানার প্রান্তের পালক লালচে বাদামির ওপর কালো পট্টি। লেজ কালো। শক্ত-পোক্ত ঠোঁটটি হলদে-ধূসর, গোড়া কালচে, অগ্রভাগ মোম সাদা। চোখ বাদামি গাঢ় লাল। পা ও পায়ের পাতা ধূসর সবুজ। স্ত্রী-পুরুষ পাখির বর্ণে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। ওদের থুঁতনি, গলা লালচে বাদামি। এ ছাড়া আকারে সামান্য বড় পুরুষ পাখি। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ঘাড় ফ্যাকাসে, গলায় কালোচিতি এবং পেট ধূসর। প্রধান খাবার: গাছ পিঁপড়া এবং গাছের বাকলে লুকিয়ে থাকা পোকামাকড়। ফুলের মধুর প্রতি আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। গাছের মরা কাণ্ডে গর্ত বানিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে তিন-চারটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮ থেকে ২০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 07/09/2018
মেঠো কাঠঠোকরা | Eurasian Wryneck | Jynx torquilla
মেঠো কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট এ পাখিরা মাটিতে দাঁড়ালে অনেকটাই গুইসাপের শাবকের মতো মনে হয়। গলার নিচটায়ও রয়েছে সে ধরনের আঁকিবুঁকি চিহ্ন। আর ওদের পিঠের দিকে তাকালে অজগর সাপের চিত্রটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। এমনই অদ্ভুত গড়নের পাখি এরা। খুব চতুরও এ পাখি। মাটিতে বিচরণ করেও বন্যপ্রাণীর শিকারে পরিণত হয় না খুব একটা। বরং বিপদে পড়লে অভিনয় করে পার পেয়ে যায়। হঠাৎ করে এরা যদি কোনো মানুষের নজরে পড়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়টাকে ১৮০ ডিগ্রি কোনে ঘোরাতে থাকে আর চোখ উল্টিয়ে লেজ নাড়তে নাড়তে মাটিতে শুয়ে পড়ে। ভাবটা এমন দেখায় মনে হচ্ছে বুঝি ওর ঘাড়টা মচকে গেছে এখন প্রচণ্ড ব্যথায় কোকাচ্ছে। এ অবস্থায় মানুষ ওদের বেগতিক ভাবসাব দেখে থমকে যায় বা ধরতে ইতস্ততবোধ করে। ঠিক তখনই ডানায় বাতাস লাগিয়ে ফুরুৎ। এরা পরিযায়ী পাখি। শীতকালে চীন, সাইবেরিয়া থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় পৌঁছায়। থাকে বসন্তকাল অবধি। তবে এদের মূল বাসভূমি ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে। ডাকে নাকি সুরে ‘খেক্-খেক্-খেক্’ শব্দে। এ ধরনের পাখি বহু বছর আগে দেখেছি মিরপুরের উদ্ভিদ উদ্যানে। দেখেছি মাটির ওপর বিচরণ করতে। নির্জনে খুঁটেখুঁটে পোকামাকড় খাচ্ছে। এ পাখির বাংলা নাম: ‘মেঠো কাঠঠোকরা’, ইংরেজি নাম: ‘ইউরেশিয়ান রাইনেক’ (Eurasian Wryneck), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘জাইংকস টরকিল্লা’, (Jynx torquilla) গোত্রের নাম : ‘পাইকিদি’। উল্লেখ্য, অন্যসব কাঠঠোকরা প্রজাতির পাখিদের সঙ্গে এদের চেহারার মিল না থাকাতে অনেকে এদের ‘ঘাড়ব্যথা’ পাখি নামে ডাকে। লম্বায় এরা ১৬-১৯ সেন্টিমিটার। তুলনামূলক লেজ খানিকটা লম্বা। গায়ের বর্ণ ধূসর-মেটের সঙ্গে সাদার মিশ্রণে রয়েছে ছোপ, ডোরা খাড়া দাগ। পিঠের ওপর মোটা দাগ। মাথা, গলার নিচে আড়াআড়ি কালো ডোরা দাগ, পেটের দিকটায় সাদার উপরে এলোমেলো দাগ। লেজ বলয়যুক্ত। চোখের পাশের রেখা ঘাড়ের মাঝ বরাবর চলে গেছে। ঠোঁট, পা বাদমি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম মনে হলেও আসলে পুরুষ পাখির গায়ের বর্ণ কিছুটা উজ্জ্বল। এদের প্রধান খাবার পোকামাকড়। তবে পিঁপড়া, পিঁপড়ার ডিম এদের প্রিয়। খেঁজুরের রস খেতেও দেখা যায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে গাছের খোড়লে। অনেক সময় অন্য প্রজাতির কাঠ ঠোকরাদের পরিত্যক্ত বাসায়ও ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৭-১০টি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/01/2013
কালাঘাড় ডুবুরি | Black necked Grebe | Podiceps nigricollis
কালাঘাড় ডুবুরি | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। কেবল প্রচণ্ড শীতে সিলেটের হাওরাঞ্চলে অল্পবিস্তর দেখা মেলে। স্বাদুজলে বিচরণ করে। বিচরণ করে জোড়ায় জোড়ায়। মাঝেমধ্যে ছোট দলেও নজরে পড়ে। সাঁতারে খুব পটু। ঘন ঘন ডুব সাঁতার দিয়ে জলাশয় মাতিয়ে রাখে। জনমানবের সাড়া পেলে মুহূর্তে চুপসে যায়। নিরাপদবোধ মনে না হলে জলাশয়ের ত্রিসীমানায় ঘেঁষে না। খুব হুঁশিয়ারি পাখি, ভীতুও সাংঘাতিক। এতই হুঁশিয়ারি যে, ডিমে তা দেয়া থেকে উঠে যাওয়ার সময় ডিমের ওপর আগাছা দিয়ে ঢেকে রাখে। ফিরে এসে আগাছা সরিয়ে পুনরায় ডিমে তা দেয়। শত্রুর চোখ ফাঁকি দিতে ডুব সাঁতার দিয়ে বাসায় পৌঁছে। এরা লেজহীন পাখি। হাঁস আকৃতির হলেও ঠোঁট চেপ্টা নয়, সুচালো। নিজ বাচ্চাদের নিরাপদ রাখতে পিঠে চড়িয়ে জলে ভেসে বেড়ায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল এবং পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত। বাংলা নাম: ‘কালাঘাড় ডুবুরি’, ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক-নেকেড গ্রিব’ (Black-necked Grebe), বৈজ্ঞানিক নাম: Podiceps nigricollis | এরা ‘কালোমাথা ডুবুরি’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য ২৮-৩৪ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৫৮ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৩৬০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে অভিন্ন। কপাল, মাথার তালু ও ঘাড় কুচকুচে কালো। মাথা খাড়া। কান পশম সোনালি-হলুদ, যা চোখের পেছন দিক থেকে শুরু করে ঘাড়ের ওপর গিয়ে ঠেকেছে। পিঠ কালো। পিঠের দু’পাশ গাঢ় বাদামি। ওড়ার পালক সাদা-কালো। বুক কালো। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত সাদা। লেজ খাটো, নেই বললেই চলে। ঠোঁট সুচালো কুচকুচে কালো। চোখের বলয় লাল। চোখের তারা প্রবাল লাল। পা কালচে। পায়ের পাতা চওড়া এবং চেপ্টা। প্রজনন পালক ভিন্ন। প্রধান খাবার: ছোট মাছ, ভাসমান জলজ উদ্ভিদ। এছাড়াও ছোট চিড়িং, ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড় শিকার করে। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভাসমান জলজ ঝোপের ভেতর। ঝোপটি যেন ভেসে না যায় তার জন্য স্থায়ী আগাছা বা ঝোপের সঙ্গে বেঁধে রাখে বাসাটি। ডিম পাড়ে ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২০-২২ দিন। শরীরে পালক গজাতে সময় লাগে ১০-১১ সপ্তাহ। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 01/01/2016
শিয়ালে কীট কুড়ানি | Chestnut bellied Nuthatch | Sitta castanea
শিয়ালে কীট কুড়ানি | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। দেশে যত্রতত্র দেখা যায় না, বিরল দর্শন। পার্বত্য চট্টগ্রামে যৎসামান্য দেখা যেতে পারে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বন, ক্রান্তীয় পার্বত্য অরণ্য, খোলা পর্ণমোচী বন। শালবন বেশি পছন্দের। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। হিংস নয়। স্বভাবে অত্যন্ত চঞ্চল। কাঠঠোকরা পাখিদের মতো গাছের খাড়া কাণ্ডে খুব দ্রুত হেঁটে উঠতে পারে। নিমেষেই গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে কীট-পতঙ্গ খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে যায়। হয়তো এ জন্যই এদের নামকরণ হয় ‘কীট-কুড়ানি’। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, তিব্বত, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। এরা বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাখির বাংলা নাম: ‘শিয়ালে কীট-কুড়ানি’, ইংরেজি নাম: ‘চেস্টনাট বেলিড নাটহ্যাচ’ (Chestnut-bellied Nuthatch), বৈজ্ঞানিক নাম: Sitta castanea | এরা ‘খয়রাপেট বনমালী’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি গড় দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৯ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য আছে। কপাল ও ঘাড় রূপালী-ধূসর। পিঠ ধূসর। লেজ খাটো, কালো-ধূসর। মাথার দু’পাশ দিয়ে কালোটান ঘাড়ের কাছে পৌঁছে নিচে নেমেছে। ডানার প্রান্ত পালক কালচে-ধূসর। দেহতল শিয়ালে রঙের অথবা খয়েরি। ঠোঁট কালচে। পা ধূসর-কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, পিঠ ও লেজ বাদামি ধূসর। দেহতল হালকা খয়েরি। বাদবাকি একই রকম। প্রধান খাবার: কীট-পতঙ্গ, পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে। শ্যাওলা, তন্তু, শুকনো ঘাস, পালক ইত্যাদি বাসা বানানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/03/2017
কালাপেট পানচিল | Black bellied Tern | Sterna acuticauda
কালাপেট পানচিল | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি। সুচালো স্লিম আকৃতির গড়ন। দেখতে মন্দ নয়। উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে এদের দেখা মিললেও মূলত এরা সামুদ্রিক পাখি। হ্রদ কিংবা নদ-নদীতে বিচরণের পাশাপাশি দেখা মেলে বালুময় দ্বীপাঞ্চলেও। এ ছাড়া কৃষিজমিতে বিচরণ রয়েছে। মিঠা জলের চেয়ে লবণ জলে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণই এটি। বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে। কলোনি টাইপ বাসা বাঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে। স্বভাবে শান্ত। ঝগড়াঝাটি পছন্দ নয়। তবে নিজেদের মধ্যে কমবেশি ঝগড়া বাধে। এ সময় বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’ সুরে। শিকারি পাখি ব্যতিরেকে এদেরকে পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা বিরক্ত করে না। ফলে এরা দেশে মোটামুটি ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়া পর্যন্ত। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এদের অবস্থান কিছুটা ভালো। পাখির বাংলা নাম: ‘কালাপেট পানচিল’, ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক-ব্যালিড টার্ন’ (Black-bellied Tern), বৈজ্ঞানিক নাম: Sterna acuticauda | এরা ‘কালো গাংচিল’ নামেও পরিচিত। এরা দৈর্ঘ্যে ৩২-৩৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রজনন পালক ভিন্ন। মাথায় টুপি আকৃতির ঘন কালো পালক, যা ঘাড়ের উপরিভাগ অবধি নেমে গেছে। পিঠ, ডানা ও লেজ সাদাটে ধূসর। ডানা এবং লেজের অগ্রভাগ সরু। গলা সাদা। বুক ধূসর কালো। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত গাঢ় কালো। ওড়ার পালক সাদা। চোখের কালো। হলুদ ঠোঁটের গোড়ার দিক মোটা হলেও প্রান্তটা সুচালো। পা ও আঙ্গুল কমলা হলুদ। প্রধান খাবার: ছোট মাছ। এ ছাড়াও বালুচরে ঘুরে পোকামাকড়, সরীসৃপ, শুককীট খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম ফ্রেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। জলাশয়ের কাছাকাছি বেলাভূমি এলাকায় ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২২-২৩ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে ৪-৫ সপ্তাহ সময় লাগে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 26/02/2016