
আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী পাখি এরা। মানুষকে ভয় পেলেও একেবারেই ঘরের লাগোয়া গাছ-গাছালিতে এরা বিচরণ করে। গ্রাম-গঞ্জের প্রায় প্রতিটি বাড়ির ঝোপ-জঙ্গলে এদের কম-বেশি দেখা যায়। ছোট গাছের ডালে কিংবা মাটিতে নেচে বেড়ায় সুযোগ পেলেই। বিশেষ করে স্যাঁতস্যাঁতে ছায়াময় স্থানে এদের বেশি দেখা যায়। তার কারণও আছে অবশ্য। কারণটি হচ্ছে ওদের পছন্দের শিকার মশা-মাছি বা ছোট পতঙ্গ এতদাঞ্চলে বেশি মেলে। এ ছাড়া স্ত্রী-পুরুষ পাখিদের মধ্যে প্রেম নিবেদনের মোক্ষম স্থানও বটে। তবে যেখানেই বিচরণ করুক না কেন চুপচাপ বসে থাকার মতো পাখি নয় এরা। বরং উল্টো ওদের চরিত্র। সাংঘাতিক চঞ্চল প্রকৃতির পাখি ওরা। চোখের নিমেষেই ফুরুৎ হয়ে যায়। আবার হঠাৎ করেই চোখের সামনে এসে হাজির হয়। কিছুক্ষণ নেচে-গেয়ে আবার ফুরুৎ। এ হচ্ছে ওদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ পাখিরা কালো ধাচের হলেও দেখতে ভারী চমৎকার।
বিশেষ করে ওদের লেজটা বেশ আকর্ষণীয়। নেচে বেড়ানোর সময় লেজটাকে ছাতার মতো মেলে ধরে। ঠিক সে সময় পেখমমেলা ময়ূরের চিত্রটা চোখের সামনে ভেসে আসে ময়ূর দেখিয়েদের মনে। একটা সময় এ পাখিদের প্রতি আমার খুব দুর্বলতা ছিল। ওদের দেখলেই কেন জানি ছুঁয়ে আদর করতে ইচ্ছে করত। অনেকবার চেষ্টাও করেছি ধরতে। ওদের বাসার ওপর সুতার ফাঁদ পেতে ধরার অহেতুক প্রচেষ্টা কম করিনি। এমনকি রাতেও অপারেশন চালিয়েছি। কামিয়াবি হতে পারিনি। খুব চতুর প্রকৃতির হওয়াতে এরা ধরাছোঁয়ার হাত থেকে রেহাই পেয়ে গেছে বারবারই।
আর হ্যাঁ, পাখি পর্যবেক্ষক হওয়ার আগ মুহূর্তেও একটি ভুল ধারণা ছিল এ পাখির প্রজতির প্রতি। তখন আমার ধারণা ছিল এরা ‘শ্যামা’ গোত্রের পাখি। পরে শ্যামা পাখির দর্শন পেয়ে সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তৎসঙ্গে এ প্রজাতির পাখির সঠিক পরিচয় জানতে পেরে আমি বেশ আনন্দিতও হয়েছি। আশা করি প্রিয় পাঠকরাও সে আনন্দের ভাগিদার হবেন। প্রতিবেশী পাখির সঠিক পরিচয়টা জানতে পারবেন।
এ পাখির বাংলা নাম: ‘সাদাগলা লেজনাচানি’, ইংরেজি নাম: ‘হোয়াইট থ্রোটেড ফ্যানটেইল’ (White-throated Fantail), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘রাইপিডুরা আলবিকল্লিস’ (Rhipidura albicollis), গোত্রের নাম: ‘রাইপডুরিনি’|
এরা লম্বায় ১৬-১৮ সেন্টিমিটার। মাথাটা কালো। গলার দুই পাশে সাদা। চোখের ওপর রয়েছে সাদা টান। এ ছাড়া এদের বাদবাকি পালক ধূসর-পাটকিলে। লেজের অগ্রভাগ সাদা। ঠোঁট, পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
এরা পতঙ্গভুক পাখি। মশা, মাছি, বোলতা জাতীয় পতঙ্গের প্রতি আসক্তি বেশি। প্রজনন সময় ফেব্র“য়ারি থেকে মে। ভূমি থেকে সামান্য উঁচু গাছের দুই ডালে পেয়ালা আকৃতির বাসা বানায়। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে নরম চিকন ঘাস-লতা, গাছের সরু শিকড়। স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন। শাবক বাসা ত্যাগ করে ১৫ দিনের মধ্যে।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/01/2013
খুব খুশী হলাম লেখকের জানার পরিমন্ডলে প্রবেশ করতে পেরে, অনেক তথ্য পেয়ে সমৃদ্ধ হলাম।