ঝুঁটিয়াল বাতাসি | Crested Tree swift | Hemiprocne coronata

2973
ঝুঁটিয়াল বাতাসি | ছবি: ইন্টারনেট

বিরল দর্শন। একসময় শীতে পার্বত্য এলাকায় দেখা যেত। হালে দেশে এদের দেখা যাওয়ার তেমন একটা নজির নেই। আশির দশকেও পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল বিক্ষিপ্ত গাছ-গাছালি, পর্ণমোচী বন। বন প্রান্তরের ন্যাড়া গাছ বেশি পছন্দ। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। অবসরে দলের সবাই ন্যাড়া গাছের ডালে বসে গা খোঁটাখুঁটি করে। চেহারা অনেকটাই ভিনদেশি ‘ককাটিল’ পাখির মতো। পাখিবিশারদ ছাড়া প্রজাতি শনাক্ত করা কঠিনই বটে। দেখতে হিংস্র মনে হতে পারে। তবে পারতপক্ষে ওদের আচরণে হিংস্রতা প্রকাশ পায় না। আক্রান্ত হলেই কেবল আক্রমণ করে। আত্মরক্ষার্থে অনেক সময় মানুষকেও ছাড় দেয় না। বন্দি হলে ঠোঁট ও নখের আঁচড়ে জখম করে দেয়।

শরীরের তুলনায় ডানা লম্বা। এ কারণে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। মূলত এরা বন-পাহাড়ি অঞ্চলে বিচরণ করে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৬৫ মিটার উচ্চতায়ও ওদের বিচরণ করতে দেখা যায়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। একাকী অথবা দলবদ্ধভাবে সারা দিন ওড়াউড়ি করে কাটায়। উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। বেশ দ্রুত উড়তে পারে। জলপান ব্যতিরেকে পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, দক্ষিণ চীন ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে বিরল দর্শন। ফলে আইইউসিএন এদের ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত পাখি হিসেবে শনাক্ত করেছে।

পাখির বাংলা নাম: ‘ঝুঁটিয়াল বাতাসি’, ইংরেজি নাম: ‘ক্রেস্টেড ট্রি সুইট’ (Crested Tree swift), বৈজ্ঞানিক নাম: Hemiprocne coronata | এরা ‘খোঁপাযুক্ত বাতাসি’ নামেও পরিচিত।

পাখিটির গড় দৈর্ঘ্য ২৩ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য ভিন্নতা আছে। মাথা আসমানি-ধূসর। মাথায় ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার উঁচু সবুজাভ নীল ঝুঁটি। পিঠ আসমানি ধূসর। ডানা লম্বা সুচালো কালচে, নিচের দিকে ধূসরাভ। লেজ লম্বা ও দ্বিখণ্ডিত। পুরুষ পাখির মুখাবয়ব লালচে-বাদামি। আর স্ত্রী পাখির মুখাবয়ব ধূসর। গলা ধূসরাভ। দেহতল ধূসরাভ-সাদা। চোখ বাদামি-কালো। ঠোঁট কালো এবং যথেষ্টই খাটো। পা কালচে। যুবাদের রং ভিন্ন।

ঝুঁটিয়াল বাতাসির প্রধান খাদ্য কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড়। গোবরে পোকার প্রতি আসক্তি লক্ষ করা যায়। এদের প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। গাছের ধ্বংসাবশেষে ওরা বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে তিন থেকে পাঁচটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫ থেকে ১৭ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 25/05/2018

মন্তব্য করুন: