
বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, দক্ষিণ চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইরান, আজারবাইজান, দক্ষিণ রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইথিওপিয়া থেকে সাহারা পর্যন্ত। প্রাকৃতিক আবাস্থল পর্ণমোচী বদ্ধ শামিয়ানা বনভূমি। এ ছাড়াও শহরাঞ্চলেও বিচরণ রয়েছে। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো এরাও স্বভাবে হিংস। সাধারণত শিকারে বের হয় একাকী। তবে জোড়ায় জোড়ায়ও দেখা যায়। বন-বনানী কৃষিজমি কিংবা জলাশয় এলাকায় শিকার খুঁজে বেড়ায়। উড়তে উড়তে তীক্ষস্বরে ডাকে। হিমালয় অঞ্চলে ১৪০০ মিটার উঁচুতেও এদের দেখা যায়। দেশে প্রজাতিসুলভ দর্শন হলেও বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট তুর্কী বাজ’, ইংরেজি নাম: ‘শিকরা’ (Shikra), বৈজ্ঞানিক নাম: Accipiter badius। এরা ‘পাতি শিকরে’ নামেও পরিচিত।
প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ৩০-৩৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৫৮-৬০ সেন্টিমিটার। ওজন ৭৫-১৬০ গ্রাম। মাথা নীল ধূসর। ঘাড়ে আবছা লালচে দাগ। পিঠ গাঢ় ধূসর। গলা সাদাটে। বুক ও পেট লালচে ডোরাকাটা। ধূসর লেজ কিছুটা লম্বা। উরু সাদা। চোখ লাল। ঠোঁট কালচে, নিচের দিকে বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া হলুদ। পা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য তফাৎ রয়েছে। স্ত্রী পাখি আকারে খানিকটা বড়। ওদের দেহতল বেশি লালচে-বাদামি। চোখ হলুদাভ কমলা। যুবাদের রঙে পার্থক্য রয়েছে।
প্রধান খাবার: ছোট পাখি, মাছ, টিকটিকি, ইঁদুর, ব্যাঙ পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে মার্চ। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের লক্ষ করা যায়। অগোছালো বাসা, শ্রীছাদ নেই। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু ডালে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো চিকন ডালপালা। নিরাপদ হলে একই বাসায় ফি বছর ডিম-বাচ্চা ফোটায়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩০-৩৫ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে প্রায় মাস খানেক সময় লাগে।
লেখক: আলমশাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 03/02/2017