সুন্দরী হাঁস | Mandarin Duck | Aix galericulata

4003
সুন্দরী হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট

বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। বোধ করি হাঁস প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরতম পাখি। প্রজাতির রূপের বর্ণনা বোঝানোর মতো নয়, বিধায় পাখি বিশারদরা সোজাসাপ্টা নামকরণ করেছেন ‘সুন্দরী হাঁস’। বলা যায় যথার্থ নামকরণ এটি। দেশে কেবলমাত্র আগমন ঘটে শীত মৌসুমে, তবে প্রতি মৌসুমেই পালা করে আগমন ঘটে না। কালেভদ্রে সিলেটের হাওরাঞ্চলে দেখা মেলে। দেখা যেত এক সময়ে সুন্দর বনাঞ্চলেও। বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া ও ভিয়েতনামে অনিয়মিত দেখা যায়। খানিকটা বেশি দেখা যায় চীন, জাপান ও কোরিয়াতে।

সুন্দরী হাঁস অন্য প্রজাতির সঙ্গে মিলেমিশে চলাফেরা করলেও নিজ প্রজাতির পুরুষদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে প্রায়ই। এদের বেশিরভাগ বিচরণক্ষেত্র জঙ্গলাবৃত জলাশয়ে। ঊষা এবং গোধূলিলগ্নে নিয়ম করে শিকারে বের হয়। সাঁতারে দক্ষ হলেও ডুব দিতে তেমন পারদর্শী নয়। উড়তে পারে ভালো। পুরুষ হাঁস উড়তে উড়তে ডাকে ‘হোয়েক..হোয়েক’ অপরদিকে স্ত্রী হাঁস ডাকে গ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ-অ্যাগ..’ সুরে। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপন্মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে।

তবে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত নয়। এদের মাংস তত সুস্বাদু নয় বিধায় শিকারির হাতে নির্যাতনের খবর পাওয়া যায় না খুব একটা। তথাপিও দেশে খুব বেশি আগমন ঘটছে না, তার প্রধান কারণই হচ্ছে অবাধে বৃক্ষ নিধন। বসবাসের জন্য পর্যাপ্ত জঙ্গলাবৃত জলাশয় সংকটের ফলে সুন্দরী হাঁস বিরলতম হয়ে উঠছে আমাদের দেশে।

পাখির বাংলা নামঃ ‘সুন্দরী হাঁস’, ইংরেজি নামঃ ‘মান্ডারিন ডাক’, (Mandarin Duck), বৈজ্ঞানিক নামঃ Aix galericulata পরিযায়ী । এরা ‘মান্ডারিন হাঁস’ নামেও পরিচিত।

লম্বায় ৪৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৪২৮-৬৯৩ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির গোল মাথাটা বাদামি রঙের। চোখ বাদামি। চোখের ওপরে চওড়া সাদা টান, যা ঘাড় অবধি ঠেকেছে। চিবুক থেকে কমলা রঙের কেশর সাদৃশ্য পালক ঘাড়ে ঠেকেছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির ডানায় কমলা রং ধারণ করে। তখন দু’পাশের ডানার পালক খাড়া থাকে নৌকার পালের মতো। প্রজনন ঋতুর বাইরে ডানা লালচে। দেহতল সাদা। ঠোঁট লাল, অগ্রভাগ সাদাটে। পা কমলা-পীতাভ। স্ত্রী পাখির রং নিষ্প্রভ। পিঠ জলপাই-বাদামি। দেহতল সাদা। বুকে সাদা ডোরা।

প্রধান খাবারঃ জলজকীট, ছোট কাঁকড়া, চিড়িং, জলজ উদ্ভিদের কচিডগা। প্রজনন মৌসুম মে-আগস্ট। জলাশয়ের কাছাকাছি মাটির গুহায় অথবা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে ঘাস লতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৯-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, 02/04/2022

মন্তব্য করুন: