
কাজল কালো চোখ। স্লিম গড়ন। প্রথম দেখায় যে কেউ মুগ্ধ হবেন। মায়াবি দর্শনের হলেও প্রজাতিটি স্বভাবে হিংস । চটপটে। দ্রুত উড়তে পারে। চেলাফেরায় খুব হুঁশিয়ারি। নিজেদের তুলনায় ছোট পাখিদের আশপাশে ভিড়তে দেয় না। সুযোগ পেলে বড়সড়ো পাখিদেরও আক্রমণ করে। নামকরণেও সে রকমটি ইঙ্গিত মেলে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল আংশিক তুন্দ্রা বন, শুষ্ক এবং উষ্ণ এলাকার বিক্ষিপ্ত ঝোপ-জঙ্গল কিংবা গাছ-গাছালি। এ ছাড়াও খোলা কৃষিভূমির আশপাশে অবস্থিত গাছ-গাছালিতে বিচরণ রয়েছে। বিশেষ করে কাঁটাগাছ কিংবা কাঁটাঝোঁপে বিচরণ আধিক্য। বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায়। দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে।
বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ-ভারত ছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, আফ্রিকা, দক্ষিণ ফ্রান্স পর্যন্ত। বিশ্বে এরা ভালো অবস্থানে নেই। কৃষিজমিতে কীটনাশক ছিটানোর ফলে প্রজাতিটি হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
পাখির বাংলা নাম: ‘ধূসর কসাই’, ইংরেজি নাম: ইন্ডিয়ান গ্রে শ্রাইক/সাউদার্ন গ্রে শাইক, (Indian Grey Shrike/Southern Grey Shrike), বৈজ্ঞানিক নাম: Lanius meridionalis| এরা ‘দক্ষিণে মেটে লাটোরা’ নামেও পরিচিত।
প্রজাতি দৈর্ঘ্যে কমবেশি ২৪-২৫ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৩০-৩৪ সেন্টিমিটার। মাথা, ডানা ধূসর সাদা। ডানার প্রান্ত পালক কালো। কোমর সাদা। কালো রঙের লম্বা লেজের নিচের পালক সাদা। ঠোঁট শক্ত মজবুত খাটো, ধাতব কালো রঙের। ঠোঁটের গোড়া থেকে কপালের ওপর হয়ে চোখের দু’পাশ দিয়ে চওড়া কালোটান ঘাড়ের কাছে গিয়ে ঠেকেছে। গলা সাদাটে। দেহতল ময়লা সাদা। পা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন।
প্রধান খাবার: ছোট মেরুদণ্ডী প্রাণী, পোকামাকড়, ফড়িং, পঙ্গপাল, ঝিঁঝিঁ পোকা, টিকটিকি ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুলাই। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ৩-৫ মিটার উচ্চতায় গাছের ডালে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, পশম, মাকড়শার জাল ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। শাবক উড়তে শিখে তিন সপ্তাহের মধ্যে। গড় আয়ু ৬ বছর।
লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদওপরিবেশবিদ।