
দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বাজ গোত্রের শিকারি পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও উত্তর-পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। দেখা যায় হিমালয়ের পাদদেশের চিরসবুজ অরণ্যেও। বাংলাদেশে সাক্ষাত মেলে উত্তর-পূর্ব চিরসবুজ অরণ্যে। বিশেষ করে সিলেটের চিরসবুজ অরণ্যে বা চা বাগানের উঁচু গাছ-গাছালিতে দেখা মেলে। লোকালয়ে তেমন একটা দেখা যায় না।
এদের মাথায় লম্বা পালকের খাড়া ঝুঁটি। দূর থেকে যা শিংয়ের মতো দেখায়। প্রজাতির চেহারায় রাগী রাগী ভাব ফুটে উঠলেও স্বভাবে অন্যসব বাজের মতো অতটা হিংস্র নয়। এরা বাতাসে উড়তে ভীষণ পছন্দ করে। খোশ মেজাজে থাকলে বাতাসে ভেসে বেড়ায় অনেক সময় লাগিয়ে। উড়তে উড়তে প্রায় ১৫০-১৭৫ মিটার ওপরে উঠে যায়। নামে ধীর গতিতে। জোড়ায় জোড়ায় বা একাকী বিচরণ করে। প্রজনন মুহূর্তে বাসা বাঁধতে মরিয়া হয়ে ওঠে। বাসা বানাতে গাছের ডালপালা ব্যবহার করে। শক্ত ধারালো ঠোঁট দিয়ে গাছের কাঁচা ডাল কেটে নেয়। এ ছাড়াও শুকনো ডালপালা টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলে।
পাখির বাংলা নাম: ‘বড় বাজা’, ইংরেজি নাম: জার্ডনস্ বাজা’, (Jerdon’s Baza), বৈজ্ঞানিক নাম: Aviceda jerdoni | এরা ‘বাদামি বাজ’ বা ‘জার্ডনের বাজ’ নামেও পরিচিত।
লম্বায় ৪৬-৪৮ সেন্টিমিটার। মাথা লালচে-কালো। মাথার ওপর কালো রঙের খাড়া ঝুঁটি। ঝুঁটির পান্ত পালকে সাদা ছোপ। পিঠ গাঢ় বাদামি। লেজে পাটকেলের ওপর তিনটি কালো পট্টি। গলায় লালচে সাদার ওপর কালো টান। বুক লালচে বাদামি। বুকের নিচের অংশ লালচে টান ও বাদামি-সাদা টান। বড়শির মতো বাঁকানো ঠোঁট কালচে রঙের। ঠোঁটের অগ্রভাগ কালো। পা হলদেটে-নীলাভ।
প্রধান খাবার: গিরগিটি, টিকটিকি, সাপ, ব্যাঙ ও অন্যান্য সরীসৃপ। মাছের প্রতি তেমন একটা আসক্তি নেই। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। অঞ্চলভেদে প্রজনন সময় ভিন্ন। গাছের উঁচু শিখরে সরু ডালপালা দিয়ে অগোছালো বাসা বাঁধে। বাসার তেমন শ্রীছাদ নেই। একই বাসায় ফি বছরও ডিম পাড়তে দেখা যায়। ডিমের সংখ্যা ২-৩টি। ডিম ফুটতে কতদিন সময় লাগে, সে তথ্য জানা যায়নি।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 28/11/2014