পাতি বনলাটোরা | Common Woodshrike | Tephrodornis Pondicerianus

2010
পাতি বনলাটোরা | ছবি: ইন্টারনেট

আবাসিক পাখি। দূর থেকে কাঠ শালিকের মতো মনে হলেও আসলে এরা শালিক প্রজাতির কেউ নয়। আহামরি রূপ নেই চেহারায়। তবে কাজল কালো আঁখির ওপর নজর পড়লে পাখিপ্রেমীদের মায়া লেগে যাবে বোধ করি। প্রজাতির দেখা মিলে শুষ্ক বন-বনানী কিংবা ঘন পাতার গাছগাছালির ডালে। ভাওয়াল শালবনে একটু বেশি দেখা মেলে। দেখা মেলে রাজধানীতেও। স্বভাবে শান্ত। কিছুটা লাজুকও। উঁচু গাছের ঘন পাতার আড়ালে বিচরণ করে। শিকারে বের হয় জোড়ায় কিংবা ছোট দলে।

পতঙ্গভূক অন্য পাখিদের সঙ্গেও শিকারে বের হয়। মাটিতে নেমেও শিকার খোঁজে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি ‘হুইট হুইট’ সুরে গান গায়। মাঝে মধ্যে সুর পাল্টিয়ে গেয়ে ওঠে ‘হুই-হুই-হুই…’। সুর শুনতে মন্দ নয়। এরা কিছুটা বোকা ধরনের। স্ত্রী পাখি যখন ডিমে তা দেয় ঠিক তখনই পুরুষ পাখি মনের আনন্দে সামান্য দূরত্বের গাছের ডালে বসে গান গাইতে থাকে। তাতে করে চতুর শিকারি পাখিরা বুঝে যায় ওদের বাসার অবস্থান আশপাশেই রয়েছে। আর তখনই দুষ্ট পাখিরা নেমে পড়ে ডিম-বাচ্চার খোঁজে। এক সময় পেয়েও যায় ওদের ডিম-বাচ্চার সন্ধান।

পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি বনলাটোরা’, ইংরেজি নাম: ‘কমন উডশ্রাইক’ (Common Woodshrike), বৈজ্ঞানিক নাম: Tephrodornis Pondicerianus| এরা সুধুকা, কাঠ কাজল ও দুক্কা নামেও পরিচিত।

লম্বায় ১৫-১৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। উভয়েরই কাজল কালো আঁখি। ভ্রুর ওপর চওড়া সাদা টান। মাথা, ঘাড় ও পিঠ ছাই-বাদামি। ডানার প্রান্ত ফিকে রঙের। লেজ গাঢ় খয়েরি। লেজের মধ্যখানের পালক দুটোতে ছাই রঙের ছোপ, বাইরের পালক ময়লা সাদা। গলার নিচে থেকে বুক পর্যন্ত ছাই রং। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত ফিকে ছাই। ঠোঁট সেøট কালো। পা সিসে-কালো।

প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন সময়ের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। বাসা বাঁধে ২-৯ মিটার উঁচুতে গাছের দুই ডালের ফাঁকে। ঘাস, লতাপাতা, শিকড় ও মাকড়সার জাল দিয়ে পেয়ালা আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 31/10/2014

মন্তব্য করুন: