
বিরল দর্শন আবাসিক পাখি। নাদুস-নুদুস চেহারা। বসারত অবস্থায় গড়ন ডিম্বাকৃতির দেখায়। দেখতে অনেকটাই বাজারে পাওয়া যায়, (খাঁচায় পালিত) কোয়েল পাখির মতো। যত্রতত্র দেখার নজির নেই। মূলত আর্দ্র তৃণভূমি এদের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র। এ ছাড়াও রাস্তার আশপাশের ঘন ঝোপজঙ্গলের ভেতর বিচরণ করে। খাবারের সন্ধানে বের হয় জোড়ায় কিংবা পারিবারিক ছোটদলে। খাবার খোঁজে মুরগির মতো মাটিতে আঁচড় কেটে কিংবা ঝরাপাতা উল্টিয়ে। শিকাররত অবস্থায় ডাকে ‘কুঈ-কী- কিউ’ সুরে। ভয় পেলে সুর পাল্টে যায়, তখন ‘টির..টির..টির..’ সুরে ডাকে।
‘নীলাভবুক বটেরা’ এক সময় ঢাকা ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমিতে দেখা যেত। বিশেষ করে সিলেটের চা বাগানের ভেতর পোকামাকড় খুঁজে বেড়াত। হালে দেখা যাওয়ার রেকর্ড নেই। আমরা সে রকম জোরালো তথ্যও আজ অবধি পাইনি। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, চীন, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় নীলাভবুক বটেরাদের বিস্তৃতি রয়েছে। এ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত, বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
পাখির বাংলা নাম: ‘নীলাভবুক বটেরা’, ইংরেজি নাম: ব্লু ব্রেস্টেড কোয়েল’ (Blue-breasted Quail), বৈজ্ঞানিক নাম: Coturnix chinensis | এরা ‘রাজবটেরা’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে ৩ প্রজাতির বটেরা নজরে পড়ে। যথাক্রমে নীলাভবুক বটেরা, বৃষ্টি বটেরা বা চীনা বটেরা, বড় বটেরা।
প্রজাতি লম্বায় ১৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৫০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির কপাল স্লেট-নীল। মাথায় অস্পষ্ট সাদা-কালো ডোরা। পিঠ বাদামি ছিট এবং লালচে-বাদামির মিশ্রণ। গলায় সাদা-কালো চওড়া দাগ। বুক স্লেট নীল। পেট ও লেজ ঢাকনি লালচে-তামাটে। ঠোঁট খাটো, শিং কালো। পা হলুদ। অপরদিকে স্ত্রী পাখির কপাল লালচে। ঘাড়ের নিচ থেকে ডানা পর্যন্ত ছিট দাগ। বুক ও বগলে কালো ডোরা। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখির বর্ণ অনুজ্জ্বল। এদের তলপেটে তামাটে রং দেখা যায় না।
প্রধান খাবার: শস্যবীজ, পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম জুন থেকে আগস্ট। ঝোপজঙ্গলের ভেতর মাটির প্রাকৃতিক গর্তে ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৫-৭টি। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 07/11/2014