চাতক পাখি | Pied cucko | Clamator jacobinus
চাতক পাখি | ছবি: ইন্টারনেট গানের গলা এদের বড়ই মধুর। ‘পিউ, পি-পি-পিউ’ সুরে ডাকে। জাদু করা সেই সুর বিলিয়ে এরা স্থান করে নিয়েছে মানুষের মনে, বাংলা সাহিত্যে ও গানে। এ দেশের খুব কম মানুষই আছেন, যারা এ পাখির নাম শোনেননি। তবে পাখিটি দেখেননি এ ধরনের মানুষের সংখ্যা তার চেয়েও অধিক। আমি নিজেও দেখিনি এতকাল। দেখেছি কেবল সেদিন। পাখি দেখতে বেরিয়েছি নিজ গ্রামে। সঙ্গে নিয়েছি একটি হাই রেজুলেশনের বাইনোকুলার। সেদিন গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটা জঙ্গলে প্রবেশ করেছি। ভরদুপুর। গা ছমছম করছে। এ জঙ্গলে ক’বছর আগে এক স্কুলমাস্টার গলায় ফাঁস লাগিয়েছেন। আমি নিজেও তার লাশ দেখেছি। স্মৃতি রোমন্থন করে একটু ভড়কে গেছি। দ্রুত প্রস্থানের উদ্যোগ নিয়েছি। বেরুতে গিয়ে নজর ঠেকেছে একটা শিরিষ গাছের উঁচু ডালে। ওখানে একটি পাখি বসে এদিক-সেদিক ঘাড় ঘুরাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বাইনোকুলারের আইপিসে চোখ লাগিয়ে পর্যবেক্ষণে লেগে গেলাম। বেশ সুন্দর পাখি। সাদা-কালো চেহারা। অন্য সব বর্ণের উপস্থিতি নেই। আগে কখনও অমন পাখি দেখেছি বলে মনে হয়নি। ডর-ভয় ভুলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পাখিটাকে ভালোমতো দেখে নিলাম। যখন নিশ্চিত হলাম, এটি গায়ক পাখি চাতক, তখন একটা তৃপ্তি বোধ করলাম। যাক, পর্যাপ্ত না হলেও কিছু চাতক রয়েছে রায়পুরের (লক্ষ্মীপুর) চরপাতা গ্রামে। সেদিন চাতক দেখে আমি কিছুটা অনুপ্রাণিত বোধ করেছি পাখিদের কল্যাণে কিছু একটা করতে। পরিকল্পনা করেছি, পৈতৃক সম্পত্তিতে প্রকৃতির এ সন্তানদের জন্য ছোট্ট পরিসরে একটি অভয়াশ্রম গড়তে। যাতে ওরা নির্বিঘ্নে রাতে ঘুমাতে পারে। চাতক পাখি নিয়ে চমৎকার একটি মিথও আছে। সেটি হচ্ছে,’মুমূর্ষু মা কিশোর ছেলের কাছে জলপান করতে চাইলেন। ছেলে মায়ের আকুতি ভুলে খেলায় মেতে রইল। ইতিমধ্যে মা পরপারে চলে গেছেন। ছেলে পড়েছে অনুশোচনায়। জল জল করে চেঁচিয়ে পাড়াময় ঘুরতে লাগল। এমনকি মাকে জল পৌঁছে দিতে ওপারে যেতে চাইল। অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করল পাখি বানিয়ে দিতে। সৃষ্টিকর্তা ওর আবেদনটা মঞ্জুর করলেন। হয়ে গেল সে পাখি। লোকের বিশ্বাস, ওই কিশোর আজও উড়ে উড়ে স্রষ্টার কাছে জল প্রার্থনা করছে। এদের বাংলা নাম: ‘চাতক পাখি,| ইংরেজি নাম: ‘পায়েড কুক্কু’ (Pied cucko)| বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ক্লামেটর জাকোবিনাস’ (Clamator jacobinus)। গোত্রের নাম: ‘কুকুলিদি’। এ পাখি লম্বায় ৩৩-৩৫ সেন্টিমিটার। বর্ণ সাদা-কালো। ঝুঁটি, ঘাড়, পিঠ ও ডানা কালো। ডানার পাশটায় সামান্য সাদা ছোপ। গলা, বুক, পেট, লেজের নিচটা কালো। লেজের প্রান্ত সাদাটে। চক্ষু, পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। চেহারায় রাগী ভাব। তবে অত হিংস্র নয়। গ্রামাঞ্চলের মানুষ এদেরকে বড় বুলবুল পাখি বলে ভুল করে। এরা গাছের উঁচু ডালে অবস্থান করে। মাঝেমধ্যে মাটিতে নেমে আসে। মাটিতে হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। সমানতালে পা চালিয়ে হাঁটতে পারে না। প্রধান খাবার: ঘাসফড়িং, শুয়োপোকা, পিঁপড়া, লতাগুল্মের কচিপাতা। প্রজনন সময় জুন থেকে আগস্ট। কোকিলের মতো পরের বাসায় ডিম পাড়ে। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না। ডিমের সংখ্যা ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক সমকাল, 31/08/2012
শ্যামা | White rumped Shama | Copsychus malabaricus
শ্যামা | ছবি: ইন্টারনেট ‘পুউ উ উ-পিউউ-উস’ মিষ্টি সুরটা কানে বাজতেই ভাতঘুমটা ভেঙে গেছে। আহ, কী মধুর সুর! নিজ ঘরঘেঁষা আম শাখা থেকে সুরটা ভেসে আসছে। পরিচিত সুর। পাখিটা চিনি। নামও জানি। ওকে এক মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি না। লুকিয়ে গান গাচ্ছে। ওদের স্বভাবটাই এমন। লুকিয়ে-চুরিয়ে গান গাওয়া। জানালার গ্রিল ভেদ করে দৃষ্টিটা বাইরে চলে গেছে ইতিমধ্যে। পাতার ফাঁক-ফোকরে খুঁজছি পাখিটাকে। দেখা পেলে ক্লিক করার সুযোগ পাব। ক্যামেরা, দুরবিন, টেপ রেকর্ডার, নোটশিট, রঙ পেন্সিল সব সময় হাতের নাগালে রাখি। খুঁজে যেন হয়রান হতে না হয়। পাখি দেখিয়েদের এ ক’টা জিনিস কাছে রাখা প্রয়োজন। কারণ ঘরের আশপাশের পাখিগুলোকে ক্যামেরাবন্দি করতে গেলে এ ছাড়া বিকল্প নেই। বলে রাখা ভালো, পাখিরা ছবি তুলতে আপনাকে সময় দেবে না। আপনার জন্য আলাদা পোজও দেবে না। ওর পোজে সন্তুষ্ট হয়েই আপনার ক্যামেরা অন করতে হবে। সেটা যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে, পারলে দূর থেকে ক্লিক করতে করতে এগোতে হবে। যাতে উড়ে গেলেও ওর স্মৃতিটা অন্তত থেকে যায় আপনার ক্যামেরায়।মিনিট পাঁচেক ধরে খুঁজে অবশেষে পাখিটাকে নজরবন্দি করতে সক্ষম হয়েছি। ততক্ষণে অবশ্য ওর মিষ্টি সুর উধাও। মিনিট খানেকের মাথায় পাখিটাও উধাও। চোখের সামনে থেকে পাখিটা উধাও হলেও আমার মনে গেঁথে রয়েছে দীর্ঘদিন। কারণও আছে অবশ্য। যে পাখিদের নিয়ে এত গান এবং এত এত সাহিত্য রচনা হয়েছে, তাকে কি ইচ্ছে করলেই ভোলা যায়! যে পাখির কথা শুনলেন এতক্ষণ, তার বাংলা নাম: ‘শ্যামা’| ইংরেজি নাম: White rumped Shama| বৈজ্ঞানিক নাম: Copsychus malabaricus| লম্বায় শ্যামা ২৮-৩০ সেন্টিমিটার (লেজের প্রান্ত থেকে ঠোঁটের অগ্রভাগ পর্যন্ত)। এদের শরীরের মোট ৬০ ভাগজুড়ে লেজের অংশ। মাথা, গলা, বুক, পিঠ, ডানা কুচকুচে কালো। পুরুষ পাখির পিঠ ও লেজের মধ্যাংশ ধবধবে সাদা। পেট উজ্জ্বল বাদামি-পাটকিলে। লেজের পালকের উপরিভাগ কালো, নিম্নাংশের বেশির ভাগ সাদা, অগ্রভাগ কালো ও হাল্কা বাদামি। লেজের পালকের পাশেই রয়েছে সাদার টান। ঠোঁট হালকা কালো, পা হালকা গোলাপি। চোখের মণি হালকা বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। শ্যামাকে অনেকে দোয়েল বলে ভুল করেন। এদের লম্বা লেজটা না থাকলে এ ভুলটা আরও বেশি বোধ হতো।শ্যামা গায়ক পাখি। কণ্ঠটা ভীষণ মধুর। এরা অন্য পাখিদের কণ্ঠ নকল করতে ওস্তাদ। একেবারে হুবহু নকল করতে পারে। গভীর জঙ্গল এদের পছন্দ। গোসল করে নিয়মিত। বেশ ঝকঝকে দেখায় তাই। রোদ এদের শত্রু। যতটা সম্ভব ছায়া-শীতল স্থানে থাকতে পছন্দ করে। শ্যামা পতঙ্গভুক পাখি। মাটির পতঙ্গ ওদের বেশি পছন্দ। মাটির ওপর পড়ে থাকা পাতা উল্টিয়ে খাবার খোঁজে। এদের প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। সময়টা এলে পুরুষ পাখি অনবরত মিষ্টি সুরে গান গাইতে থাকে। মিলন শেষে গাছের কোটরে বাসা বানায়। কোটর স্বল্পতার কারণে মাটির কাছাকাছি পেয়ালা আকৃতির বাসা বানায়। বাসার ভেতর ঘাস, লতাপাতা দিয়ে নরম গদি তৈরি করে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন। (বি. দ্র. দয়া করে পাখিদের খাঁচায় বন্দি করবেন না) লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক সমকাল, 08/07/2012
কমলাদামা | Orange Headed Thrush | Zoothera citrina
কমলাদামা | ছবি: ইবার্ড এ পাখি আমাদের প্রতিবেশী হলেও অনেক ভীতু এবং লাজুক স্বভাবের। স্বভাবে লাজুক হলেও এরা মানুষের একেবারে কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। মানুষও খুব একটা ক্ষতি করে না এদের। বরং আদর করে নানা নামে ডাকে। কেউ ডাকে কমলা বউ, কেউ ডাকে কমলাফুলি, আবার অনেকেই ডাকে কমলা দোয়েল নামে। তবে ‘কমলাদামা’ নামেই এটি অধিক পরিচিত। বাংলাদেশের সর্বত্র কমলাবউ পাখির বিচরণ। কম-বেশি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সবখানেই। এদের অধিকাংশই বিচরণ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। তাই অনেকের ধারণা, কমলাবউর বাস ওই অঞ্চলেই। প্রকৃতপক্ষে তা সঠিক নয়। রাজধানীর অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি স্থানেও এদের দেখা মেলে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে ২০১০ সালে একবার দেখেছি। তারপর আর দেখিনি। বাসা তৈরির উপযুক্ত গাছপালার অভাবে রাজধানী থেকে এরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। কমলাবউর রূপ যেমন, তেমনি গুণ। বিভিন্ন ধরনের কসরত দেখাতে পটু এরা। বিশেষ করে হিংস্র পোকামাকড় কিংবা ছোট সাপের বাচ্চা শিকারের কৌশল বেশ দর্শনীয়। অনেকটা নেচে-নেচে শিকার ধরে। এ পাখির ইংরেজি নামঃ অরেঞ্জ হেডেড থ্রাস (Orange Headed Thrush), বৈজ্ঞানিক নামঃ জুথেরা সিট্রিনা (Zoothera citrina), গোত্রঃ ‘মুস্কিকাপিদি’। কমলাবউ দোয়েল আকৃতির পাখি। হাঁটেও দোয়েলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে। ফলে অনেকে এদের ‘দোয়েল’ বলে ভুল করে। লম্বায় এরা ২০ থেকে ২২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একরকম মনে হলেও সৌন্দর্যের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে পুরুষ পাখি। কমলাবউ পাখির মাথা, ঘাড়, গলা ও বুক কমলা-বাদামি। তলপেট ও লেজের নিচের দিক সাদাটে। চোখের মণি গাঢ় পিঙ্গল। চোখের নিচ বরাবর পরপর তিনটি সাদা ছোপ। পিঠের পালক নীলাভ ছাই বর্ণের। পায়ের রঙ ফিকে গোলাপি। স্ত্রী পাখির বুকের রঙ সামান্য ফিকে। পিঠের ওপরের পালক ছাই ধূসর।কমলাবউর প্রজনন সময় মার্চ থেকে মে। এ সময় স্ত্রী-পুরুষ পাখি একসঙ্গে চলাফেরা করে। অন্য সময় এরা মূলত আলাদা বাস করে। বাসা বাঁধার ব্যাপারে এরা যথেষ্ট খুঁতখুঁতে। পছন্দসই জায়গা খুঁজে পেলে তবে বাসা তৈরি করে। বাসার আদল চায়ের কাপের মতো। এমনকি চায়ের কাপের মতো হাতলও বানায়। হাতলটা দিয়ে গাছের ডালপালার সঙ্গে মজবুত করে বেঁধে রাখে। বাসা তৈরির উপকরণ শুকনো ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। আর যাই হোক বাসাটা এরা খুবই সুন্দরভাবে বানাতে পারে। বাসা বানানো হলে তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। শান্ত স্বভাবের এ বাচ্চাদের স্বাবলম্বী হতে মাসখানেক লেগে যায়। তবে উড়তে শিখতে সময় নেয় ২০ দিনের মতো। তারপর মা-বাবার সঙ্গে থেকে ধীরে ধীরে শিকারের কৌশল রপ্ত করে। প্রধান খাবারঃ মূলত কীটপতঙ্গই এদের। সুযোগ পেলে কেঁচো, সাপের ছোট বাচ্চা শিকার করতে এরা পিছপা হয় না। খেজুরের রস কমলাবউর বেশ প্রিয়। রসের স্বাদ নিতে প্রায়ই খেজুর গাছের আশপাশে ঘুরঘুর করে। লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
লালশির ট্রগোন | Red headed Trogon | Harpactes erythrocephalus
লালশির ট্রগোন | ছবি: ইন্টারনেট পাখিটিকে আগে কখনও সরাসরি দেখিনি। ভিডিও ফুটেজে দেখেছি। তাতে কি আর সাধ মেটে! যদি সরাসরি না-ই দেখি তাহলে পাখি নিয়ে কিছু লেখা গপ্পো ছাড়া আর কী হতে পারে? কাজেই যেভাবে হোক ওকে আমার স্বচোখে দেখা চাই-ই চাই। হ্যাঁ, যে পাখিটির কথা লিখছি ওটার নাম ‘লালশির ট্রগোন’। পাখি দেখিয়ে এক বন্ধুর শরণাপন্ন হলে সে জানায়, পাখিটি নাকি সিলেটের মাধবকুণ্ডের ইকোপার্কে একবার দেখেছে। কথাটা জানতে পেরে আমার যেন তর সইছে না। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে সময়-সুযোগ বুঝে ওই বন্ধুকে নিয়ে মাধবকুণ্ডে পৌছেছি। ওখানে পৌছে সঙ্গে সঙ্গে লালশির ট্রগোনের খোঁজে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু সাক্ষাৎ পাইনি। রাতটা কোনো রকম কাটিয়ে প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করেছি। সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজে হয়রানও হয়ে গেছি। তবুও সাক্ষাৎ মেলেনি। বন্ধু পরামর্শ দিয়েছে জলপ্রপাতের লাগোয়া পাহাড়ের চূড়ায় চড়তে। না-সূচক জবাব দিয়েছি। সে সন্তুষ্ট হয়নি তাতে। তার মন রক্ষার্থে পরিশেষে চূড়ায় উঠতে বাধ্য হয়েছি। চূড়ার একপ্রান্তে বসে বাইনোকুলারটা চোখে ঠেসে ধরে এদিক-ওদিক ঘোরাচ্ছি। এভাবে মিনিট পাঁচ-সাতেক ব্যয় করেছি মাত্র। ঠিক এরই মধ্যে একটা বুনোগাছে গিয়ে আমার নজর ঠেকেছে। লাল রঙের কী যেন একটা দেখতে পেয়েছি। হতচকিত হয়ে দৃষ্টিটা গভীরভাবে নিক্ষেপ করেছি সেদিকে। আরে পাখিই তো! কি পাখি ওটা? তবে কি এটাই ‘লালশির ট্রগোন’? বন্ধু নিশ্চিত করেছে ট্রগোন পাখি এটি। আমি খুশি । ভীষণ খুশি। মুহূর্তেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি ওর রূপের ঝলকে এবং হতবাক হয়েছি রূপের বাহার দেখে। স্বাভাবিক প্রশ্ন মাথায় জেগেছে, প্রকৃতি কি তবে নিজ হাতে এদের বানিয়েছেন? চুপচাপ বসে আছে পাখিটি। আমি তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকেই। প্রতিজ্ঞা করেছি পাখিটা উড়ে না যাওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে থাকব। কিন্তু সে সময় বেশি পাইনি। পাখিটা নিমেষেই উধাও। লালশির ট্রগোনের ইংরেজি নাম: ‘রেডহেডেড ট্রগোন’, (Red-headed Trogon)| বৈজ্ঞানিক নাম: ‘হারপ্যাকটেস এরিথ্রোকেফালাস’ (Harpactes erythrocephalus)| গোত্রের নাম: ‘ট্রগোনিদি’| বাংলায় কোনো নাম নেই। আমাদের দেশের পাখি গবেষকরা নাম দিয়েছেন ‘লালশির ট্রগোন’। নামটা জুতসই বলা যায়। ওই নামেই পরিচিত এখন। এরা লম্বায় ৩৩-৩৬ সেন্টিমিটার। গায়ে লাল পালকের আধিক্য। বিশেষ করে মাথা, ঘাড় ও বুক পরিষ্কার লাল। দেহের নিম্নাংশ গোলাপি এবং পিঠ ও লেজের মাঝখানে পাটকেলে পালক। ডানার ওপর সাদা-কালো রেখা। লেজটা বেশ বাহারি। দেহের তুলনায় কিছুটা বড়। লেজের নিচের পালক সাদা-কালো খাঁজকাটা। বুকের ওপর দিয়ে মালার মতো সাদা লাইন। ঠোঁট বেগুনি নীল, পা হালকা বেগুনি। স্ত্রী পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। মাথা, বুক, ঘাড় থেকে লেজ পর্যন্ত কমলা-পাটকেলে। ডাকে কিউ-কিউ সুরে। খায় পোকামাকড়, ফলমূল। সিলেটের গহিন জঙ্গলে এদের বাস। ট্রগোন নির্জনতাপ্রিয়। ফলে একাই থাকে। শুধু প্রজননের সময় হলে ঘর বাঁধে। গহিন অরণ্যে গাছের কোটরে দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে ট্রগোন। স্ত্রী-পুরুষ পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় নেয় ২০-২২ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক সমকাল, 04/05/2012
নীলাঞ্জনা পাখি | Blue whistling thrush | Myophonus caeruleus
নীলাঞ্জনা পাখি | ছবি: ইন্টারনেট পাখিটির ইংরেজি নাম: ‘ব্লু হুইসলিং থ্রাস’ (Blue whistling thrush)| বৈজ্ঞানিক নাম: ‘মাইওফোনাস সারুলিয়াস’ (Myophonus caeruleus)| গোত্রের নাম: ‘মুস্কিকাপিদি’। এ পাখিটির বাংলা আদি কোনো নাম নেই। আমাদের দেশের পাখি গবেষকরা নাম দিয়েছেন ‘নীলাঞ্জনা পাখি’। নামটির ভেতর চমৎকার একটি সাহিত্যবোধ লুকিয়ে রয়েছে। পাখিটি লম্বায় ৮-১০ ইঞ্চি। আকৃতি শালিকের মতো। পিঠের পালক রূপালি নীলচের ওপর সাদা বুটির মতো কাজ করা। মাথাটা নীলচে কালো। ডানা ঝকঝকে নীল। কনীনিকা কালো, ঠোঁট হলুদ, পা ও আঙুল ছাই কালো। তুলনামূলকভাবে পা একটু লম্বা। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম।এগুলোর মূল বাসভূমি উত্তর বেলুচিস্তানের পাহাড়ি জঙ্গল থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত। প্রচণ্ড শীতে এগুলো হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আমাদের দেশে চলে আসে। এগুলোর প্রধান খাবার পোকামাকড়, যা এ অঞ্চলে প্রচুর পাওয়া যায়। ফলে এগুলো এ দেশেই বেশি সময় কাটিয়ে দেয়। শুধু প্রজননের সময় হিমালয় অঞ্চলে চলে যায়। প্রজননকাল এপ্রিল-জুন। এ সময় পুরুষ পাখিটি সকাল-সন্ধ্যা হুইসেলের মতো শব্দ করে স্ত্রী পাখির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। জুটি বাঁধার পর পাহাড়ি জলাধারের কাছাকাছি গাছের ডালে পেয়ালা আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। বাচ্চা ফুটতে সময় নেয় ১৮-২০ দিন। বাচ্চা স্বাবলম্বী হলে পুরুষ পাখিটি আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তী প্রজনন মৌসুম পর্যন্ত একা একা বিচরণ করে। পরের বছর অন্য স্ত্রী নীলাঞ্জনার সঙ্গে সংসার পাতে। গান গেয়ে মজাতে পারলে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে ঘর বাঁধার অনুমতি মেলে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক সমকাল, 25/05/2012
বউ কথা কও | Indian cuckoo | Cuculus micropterus
বউ কথা কও | ছবি: ইবার্ড আমাদের দেশে রাতজাগা পাখির বাস খুব একটা নেই। উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে রয়েছে লার্জ-টেইলড নাইটজার (রাতচরা), বিভিন্ন প্রজাতির পেঁচা, নিশিবক, বউ কথা কও ইত্যাদি। দেখা গেছে, এসব প্রজাতির পাখি স্বস্থানে বসেই রাত-বিরাতে বিলাপ করে। একমাত্র ব্যতিক্রম ‘বউ কথা কও’ পাখি। এ পাখিরা উড়তে উড়তেই ডাকাডাকি করে। দিনে যেমনি ডাকে তেমনি রাতেও। চাঁদনি রাত এদের প্রিয়। আকাশে চাঁদের ঝিলিক দেখলেই এরা ‘বউ কথা কও, হক কথা কও’ বা ‘টুটু…টুটু’ সুরে ডাকাডাকি করে (শব্দটি যার কানে যেমন বাজে) এবং একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে উড়ে বেড়ায়।” তথ্যটি জানিয়েছেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।বউ কথা কও পাখির সুরের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে প্রায় তিন যুগ আগেই। তবে তখন ওদের গগনবিদারী আর্তচিৎকারটাই শুধু শুনেছি, কিন্তু দেখিনি। আকাশে উড়ে উড়ে বিলাপ করতে শুনেছি। ওই অবস্থায় দেখেছিও বহুবার। উড়ন্ত অবস্থায় মালুম করতে পারিনি ওদের বর্ণবৈচিত্র্য। কাছাকাছি থেকে দেখেছি অনেক দিন আগে। রায়পুরের (লক্ষ্মীপুর) ‘পূর্ব চরপাতা’ নামক স্থানে। বৈশাখের শেষ বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে জারুলশাখায় ওর সাক্ষাৎ পাই। খানিকটা উঁচুতে বসেছিল। কাজেই আশ্রয় নিতে হয় বাইনোকুলারের। পাখিটা ওপরের দিকে মাথাটা খাড়া করে রেখেছিল। পাতার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টাও করেছে। সে সুবাদে নিচ থেকে উঁকি মেরে ওকে দেখে নিয়েছি। আসলে এ পাখিদের স্বচক্ষে দেখা অনেকটাই কঠিন ব্যাপার। যদিও এরা গ্রীষ্মকালে সচরাচর গ্রামগঞ্জে বিচরণ করে; তথাপি দেখা মেলে না। শুধু কানে সুর ভেসে আসে। কারণ এরা বেশ সুচতুর ও লাজুক। আত্মরক্ষাকে প্রাধান্য দেয়। আড়াল-আবডালে নিজেকে সবসময় লুকিয়ে রাখে। ভূমি থেকে অনেকখানি ওপর দিয়ে চেঁচিয়ে ওড়াউড়ি করে। ফলে সর্বসাধারণের নজরে খুব একটা পড়ে না। গ্রামগঞ্জে বউ কথা কও পাখি নিয়ে অনেক মিথ আছে। এর সঙ্গে বাঙালির একটা আবেগও জড়িয়ে আছে। আমাদের সাহিত্যে পাকাপোক্ত আসন করে নিয়েছে বউ কথা কও পাখি। অনেক গান, কবিতা রচিত হয়েছে এদের নিয়ে। বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকরা লিখেছেন বউ কথা কও পাখি নিয়ে। এদের নিয়ে যে মিথটি বেশি প্রচলিত তা হচ্ছে, ‘শাশুড়ি-বউয়ের ঝগড়ার এক পর্যায়ে শাশুড়ি ক্ষিপ্ত হয়ে বউকে অভিশাপ দিলে সে পাখি হয়ে যায়। স্বামীর প্রতীক্ষায় একটা গাছের ডালে বসে থাকে পাখিটি। স্বামী বেচারি দূরদেশ থেকে এসে মায়ের কাছে জানতে চায় তার আদুরে বউটি কোথায়? মা আঙুল তুলে গাছের দিকে দেখিয়ে বলল, ‘ওই যে তোর বউ’। বউয়ের উদ্দেশে ছেলে প্রশ্ন ছুড়ে, ‘বউ তুমি পাখি হয়ে গাছে বসে রয়েছ কেন?’ বউ জবাব দেয় না। কারণ সে মানুষের কথা বুঝতে সক্ষম নয়। বাধ্য হয়ে স্বামী বেচারি সৃষ্টিকর্তার কাছে আর্জি পেশ করল, ‘আমাকে পাখি বানিয়ে দাও। আমি যেন বউয়ের ভাষা বুঝতে পারি’। সৃষ্টিকর্তা আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে পাখি বানিয়ে দেন। আর সে উড়ে উড়ে বউয়ের উদ্দেশে ডাকতে লাগল ‘বউ কথা কও … বউ কথা কও’। পাখিটির ইংরেজি নাম: ইন্ডিয়ান কুক্কু, (Indian cuckoo) বৈজ্ঞানিক নাম: কুকুলাস মাইকোপটেরাস, (Cuculus micropterus) গোত্র: কুকুলিদি। লম্বায় এরা এক ফুটের চেয়ে সামান্য বেশি। শরীরের উপরাংশ গাঢ় ধূসরের সঙ্গে পাটকিলে আভার সংমিশ্রণ। নিম্নাংশ মলিন ধূসর এবং সাদাটে মিশ্রণ। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে প্রায় একই রকম। পার্থক্য সামান্য। স্ত্রী পাখির ডানা মলিন ধূসর, বুক পাটকিলের ওপর লালচে আভা। চোখের মণি উভয়েরই পাটকিলে। গোল চোখের পাতা কমলা হলদেটে। ঠোঁট পাটকিলে। চিবুক, পা, আঙুল হলদেটে। বউ কথা কও পাখি শীতকালে দেখা যায় না। গ্রীষ্মে এদের আগমন ঘটে। প্রিয় খাবার পোকামাকড়। গাছের ওপর বসেই এরা পোকামাকড় শিকার করে। পারতপক্ষে জমিনে এরা খুব একটা নামে না। এদের যৌনজীবন সুখকর নয়। স্থায়ীভাবে সাংসারিকও নয়। ব্যভিচারী যৌনজীবনে অভ্যস্ত। কোকিলের মতো বউ কথা কও বাসা বাঁধতে জানে না। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এরা অন্য পাখিদের বাসায় চুরি করে ডিম পেড়ে পালিয়ে যায়। বাচ্চা লালন-পালন করে অন্য পাখিরাই। বউ কথা কও পাখিদের সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি তথ্য জানা যায়নি। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
কালো বুলবুল | Black bulbul | Hypsipetes leucocephalus
কালো বুলবুল | ছবি: ইন্টারনেট মূলত এদের বাস সুন্দরবনের গভীরে। লোকালয়ে পারতপক্ষে ঘেঁষে না। সুন্দরবন অঞ্চলের আশপাশের গ্রামগুলোতে শীতকালে দেখা যায় মাঝে মধ্যে। দেশের সর্বত্র এ পাখির দেখা মেলে না খুব একটা। আমি প্রথম দেখেছি ১৯৯৫ সালে। সুন্দরবনের শাপলা রেঞ্জ চত্বর থেকে কিছুটা দূরে কেওড়াডালে বসে দুটি পাখি খুনসুটি করছে। কুচকুচে কালো পাখি দুটিকে দেখে কিছুটা হতবাক হয়েছি বৈকি। কারণ আগেই জানতে পেরেছি, এরা বিরল প্রজাতির বুলবুল। তাই যত দ্রুত সম্ভব ট্রাভেল ব্যাগ থেকে বাইনোকুলারটা বের করলাম। মাত্র বাইনোকুলারের আইপিসে চোখ রেখেছি আর অমনি ওরা উড়ে গেল বনের ভেতর। আর দেখিনি সেদিন। দ্বিতীয় দফায় দেখেছি সুন্দরবন সংলগ্ন বরইতলা নামক গ্রামে। সেদিন অবশ্য খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ হয়েছে।এ পাখি সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি তা হচ্ছে, এরা খুব হিংস্র প্রকৃতির। বুলবুলদের ভেতর এ প্রজাতিই বেশি হিংস্র। এদের আশপাশে অন্য কোনো পাখি সহজে ভিড়তে পারে না। সে যতবড় সেয়ান পাখিই হোক না কেন, ঠুকরে বিদায় করে। উপর্যুপরি আক্রমণ করে শত্রু পাখিদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে। বিশেষ করে ডিমে তা দেওয়া অবস্থায় কিংবা বাসায় শাবক থাকার সময় শিকারি পাখি ত্রিসীমানায় প্রবেশ করতে পারে না। আমাদের দেশে মোট পাঁচ ধরনের বুলবুল দেখা যায়। যথাক্রমে_ সিপাহি বুলবুল, লালপুচ্ছ বুলবুল, কালো বুলবুল, শাহ বুলবুল, কালো মাথা হলুদ বুলবুল। সব ধরনের বুলবুলই গায়ক পাখি। সে তুলনায় এরা ভালো গায়ক নয়, কণ্ঠস্বর মোটামুটি। সুন্দরবনের বনমোরগ এদের প্রিয় বন্ধু। বনমোরগের পায়ের নখের শক্ত আঁচড়ে মাটি থেকে পোকামাকড় বেরিয়ে এলে তা খায়। বিনিময়ে এরা বনমোরগের উপকারও করে। শত্রু দেখলে বনমোরগকে সতর্ক করে দেয়। এ পাখির বাংলা নাম: ‘কালো বুলবুল’| ইংরেজি নাম: ব্ল্যাক বুলবুল’ (Black bulbul)| বৈজ্ঞানিক নাম: ‘Hypsipetes leucocephalus’| গোত্রের নাম; ‘পিকনোনোটিদি’। কালো বুলবুল লম্বায় ২৪-২৫ সেন্টিমিটার। এদের মাথায় রয়েছে কালো ঝুঁটি। ঝুঁটিটা সামান্য উল্টোমুখী। কানের চারপাশে কুচকুচে কালো দাগ। এটি ঠোঁটের গোড়া থেকে শুরু হয়েছে। দাগটি পরখ করে না দেখলে বোঝা মুশকিল। কারণ ওদের শরীরের অধিকাংশ পালক কালো বিধায় এ বিশেষ কালো বর্ণটি খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। তবে পাখি বিশারদদের বর্ণটি খুঁজে পেতে সমস্যা হয় না। কালো বুলবুলের শরীরের সব পালক কালো বর্ণের হলেও ডানার প্রান্ত থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত সাদাটে। ঠোঁট, পা লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে তেমন কোনো তফাৎ নেই। শুধু ঝুঁটি ছাড়া, যা স্ত্রী পাখির নেই। সব ধরনের বুলবুল সর্বভুক পাখি। পতঙ্গ থেকে শুরু করে ফলমূল সবই খায়। গৃহস্থবাড়ির আঙিনায় এলে ভাতও খায় এরা। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বানায় পেয়ালা আকৃতির। মাটি থেকে সামান্য ওপরে গাছের তে-ডালায় বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে দুই থেকে চারটি। ডিমে তা দেয় স্ত্রী-পুরুষ মিলে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক সমকাল, 29/09/2012