ছোট বাবুইবাটান | Small pratincole | Glareola lactea
ছোট বাবুইবাটান | ছবি: ইন্টারনেট সুলভ দর্শন, স্থানীয় প্রজাতির পাখি ‘ছোট বাবুইবাটান’। বাংলাদেশ ছাড়াও দেখা মেলে ভারত, পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে বালুচরে। পদ্মা ও যমুনার চরে ব্যাপক দর্শন মেলে। এ ছাড়াও নদ-নদী কিংবা মোহনার দ্বীপাঞ্চলে অথবা সৈকতের বেলাভূমিতে শিকার খুঁজে বেড়াতে দেখা যায়। হাঁটাহাঁটি করে খুব দ্রুততার সঙ্গে। আবার অনেকে মিলে জলের কিনারে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। একটা সময় এসে একেবারেই চুপচাপ থাকে, দূর থেকে দেখলে মনে হয় তখন বুঝি ওরা প্রার্থনারত রয়েছে। ওড়ে খুব ক্ষিপ্রতার সঙ্গে। তবে সোজাসুজি না উড়ে এঁকেবেঁকে ছান্দসিক তালে ওড়ে। তেমনিভাবে উড়ে উড়ে এরা শিকারের পিছু নেয়। মানুষ অথবা অন্য যে কোনো বন্যপ্রাণী ওদের বাসার কাছাকাছি গেলে মাথার ওপর দিয়ে চেঁচিয়ে চক্কর দিতে থাকে। এতে করে ওরা আরো বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং ওদের বাসার অবস্থান শনাক্ত হয়ে যায়। আর শত্রুপক্ষ সে সুবাদে ওদের ডিম-বাচ্চার ক্ষতি করার করার যথেষ্ট সুযোগ পেয়ে যায়। যার ফলে ওদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটে ব্যাপক। ছোট বাবুইবাটানদের কণ্ঠস্বর সুমধুর নয়। ‘টিক টিক টিক… টাক টাক টাক’ আওয়াজ করে। উত্তেজিত হলে কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসে। স্বর তখন আরো কর্কশ হয়ে ওঠে। পাখির বাংলা নাম: ‘ছোট বাবুইবাটান’, ইংরেজি নাম: ‘স্মল প্রাটিনকোল’, (Small pratincole), বৈজ্ঞানিক নাম: Glareola lactea| লম্বায় ১৬-১৭ সেন্টিমিটার। কপাল হালকা বাদামি। চোখের কোণ থেকে ঠোঁটের গোড়া পর্যন্ত কাজলটান। ঠোঁট নীলাভ কালো, গোড়ার দু’পাশ লাল। চোখের বলয় সাদা, তারা নীলাভ। পিঠ বালুধূসর। ডানার দিকে হালকা বাদামির ওপর লালচে আভা। ডানার প্রান্ত কালো। ওড়ার পালক কালো। লেজের কিনারটা কালো। দেহতল সাদা। পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার কীটপতঙ্গ। বিশেষ করে উড়ন্ত কীটপতঙ্গের প্রতি আসক্তি বেশি। প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে মার্চ। কোনো কোনো অঞ্চলে মার্চ থেকে এপ্রিলে বাসা বাঁধে (অঞ্চলভেদে সময়ের হেরফের লক্ষ্য করা যায়)। বাসা বাঁধে বেলাভূমি কিংবা পাথুরে এলাকায়। একাকী কিংবা কলোনি টাইপের বাসা বানাতেও দেখা যায়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 19/09/2014
কালো লালগির্দি | Black Redstart | Phoenicurus ochruros
কালো লালগির্দি | ছবি: ইন্টারনেট বাংলাদেশে হেমন্তে দেখা মেলে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব-মধ্য চীন, গ্রেট ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা। প্রাকৃতিক আবাসস্থল পাথুরে পর্বতমালা। দেখা মেলে নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চলেও। পুরুষ পাখি দেখতে মন্দ নয়। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায়। স্বভাবে কিছুটা চঞ্চল হলেও হিংস নয়। সব সময় পয়ঃপরিষ্কার থাকতে পছন্দ করে। নিয়ম করে গোসল করে। সমগ্র বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘কালো-লালগির্দি’, ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক রেডস্টার্ট’ (Black Redstart), বৈজ্ঞানিক নাম: Phoenicurus ochruros | এরা ‘কালাগির্দি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ১৩-১৪.৫ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ২৩-২৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১২-২০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ অন্ধকার স্লেট ধূসর। ডানা কালচে ধূসর। গলা ও বুক কালো। কোমর ও লেজ কমলা-লাল। দেহতল কমলা-লাল। চোখ কালো। ঠোঁট ও পা কালো। স্ত্রী পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও দেহতল ধূসর-বাদামি। লেজ অপেক্ষাকৃত কম কমলা-লাল। বাদবাকি পুরুষের মতো। যুবাদের রং ভিন্ন। প্রধান খাবার: পোকামাকড়, ছোট ফল, বীজ ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মে থেকে আগস্ট। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা কাপ আকৃতির। বাসা বাঁধার উপকরণ শুকনো ঘাস, সরু লতাপাতা, শৈবাল, চুল, পশম ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 11/11/2016
কালো কুক্কুট | Black coot | Fulica atra
কালো কুক্কুট | ছবি: ইন্টারনেট অতি সুলভ দর্শন পরিযায়ী পাখি ‘কালো কুক্কুট’। স্থায়ী নিবাস উত্তর এশিয়া ও হিমালয় অঞ্চলে। যখন প্রচণ্ড শীতে নিজ বাসভূমে খাদ্য সংকট দেখা দেয় কেবল তখনই আমাদের দেশে চলে আসে খাদ্যের সন্ধানে। শুধু খাদ্যের সন্ধানেই নয়, উষ্ণতার প্রয়াজনেও এ দেশে আশ্রয় নেয় ওরা। আশ্রয় নেয় সুপেয় জলের জলাশয়ে। হাওর-বাঁওড়, বিল-ঝিল এবং মোহনা অঞ্চলে হাজার হাজার পাখি একত্রে বিচরণ করে। এতদাঞ্চল ছাড়াও শীতে এদের দেশের বিভিন্ন স্থানেই দেখা মেলে। দেখা মেলে ঢাকা চিড়িয়াখানার লেকেও। মূলত জলচর পাখি এরা। হাঁসের মতো চট করে উড়তে পারে না। ওড়ার প্রস্তুতি নিতে হয় জলের ওপর খানিকটা কসরত করে। অত্যন্ত নিরীহ গোত্রের পাখি এরা। পারতপক্ষে নিজেদের ভেতর ঝগড়ায় লিপ্ত হয় না। সুখবরটি হচ্ছে শিকারিদের হাতে খুব বেশি ধৃত হয় না কালো কুক্কুট। প্রধান কারণটি হচ্ছে এদের মাংস তেমন সুস্বাদু নয়। যার কারণে প্রজাতিটি কিছুটা রক্ষা পাচ্ছে বলা যায়। তবে এদের প্রধান শত্র“ ঈগল গোত্রের পাখি। খোলা হাওর-বাঁওড়ে যখন ঝাঁকে ঝাঁকে কালো কুক্কুট বিচরণ করে বেখেয়ালি হয়ে ঠিক তখনই সুযোগটি কাজে লাগায় শিকারি পাখিরা। ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে শক্ত ধারালো নখর বিঁধিয়ে দেয় ওদের পিঠে। তথাপিও প্রজাতিটি বাংলাদেশে বিপন্মুক্ত। এটি আমাদের জন্য সুখবরই বটে। প্রতিটি প্রজাতি দেশে এমনি করে বিপন্মুক্ত হলে আমাদের জন্য সেটি হতো মহা আনন্দের। পাখির বাংলা নাম: ‘কালো কুক্কুট’, ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক কুট অথবা কমন কুট’, (Black coot/Common coot), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ফুলিকা আত্রা’ (Fulica atra). গোত্রের নাম: রাললিদি’। এরা ‘জল কুক্কুট’ ও ‘পাতি কুট’ নামে পরিচিত। লম্বায় ৪২ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড় কুচকুচে কালো। পিঠ কালচে ধূসর। খাটো লেজ গাঢ় কালো। ডানার প্রান্ত সামান্য সাদা। চোখ টকটকে লাল। ঠোঁট ত্রিকোণাকৃতির। ঠোঁটের গোড়ায় রয়েছে নীলাভ-সফেদ বর্ম। পা সবুজাভ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার ধান, জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা, জলজ কীট। মাঝে মধ্যে ছোট মাছ খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম গ্রীষ্মকালে। বাসা বাঁধে ভাসমান জলজ উদ্ভিদের ওপর লতাপাতা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ৬-১০টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 21/03/2014
বাংলা ডাহর | Bengal Florican | Houbaropsis bengalensis
বাংলা ডাহর | ছবি: ইন্টারনেট বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি। দেশে প্রায় ৬৫-৭৫ বছর আগে দেখা গেছে। এক সময় ঢাকা বিভাগ এবং উত্তরবঙ্গের তৃণভূমিতে দেখা যেত। হালে দেখা যাওয়ার রেকর্ড নেই। এরা আকারে বেশ বড়সড়। দেখতে অনেকটাই ময়ূরের মতো। এমনকি চলাফেরা কিংবা শিকার খোঁজার ভঙ্গিও। বিচরণ করে আর্দ্র খোলা লম্বা তৃণভূমিতে। অধিক ঝোপ জঙ্গল এড়িয়ে চলে। দ্রুত দৌড়াতে পারে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত (আসাম, উত্তর প্রদেশ, অরুণাচল), নেপালসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, কম্বোডিয়া ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন প্রজাতিটিকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। পাখির বাংলা নাম: ‘বাংলা ডাহর’, ইংরেজি নাম: ‘বেঙ্গল ফ্লোরিকান’ (Bengal Florican), বৈজ্ঞানিক নাম: Houbaropsis bengalensis | এরা ‘ডাহর’ নামেও পরিচিত। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্য রয়েছে আকার-আকৃতি এবং ওজনেও। প্রজাতির স্ত্রী পাখি দৈর্ঘ্যে ৬৮ সেন্টিমিটার। ওজন ১৭০০-২২৫০ গ্রাম। পুরুষ পাখি দৈর্ঘ্যে ৬৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১২৫০-১৭০০ গ্রাম। পুরুষ পাখির মাথা কালো মখমলের কাপড়ের মতো। মাথার নিচ থেকে ঝুঁটি গড়িয়ে পড়েছে। গলার নিচেও ঝুঁটি লক্ষ্য করা যায়। পিঠ এবং লেজে বাদামির ওপর কালো ছোপ। লেজ খাটো। ডানার দু’পাশে ধবধবে সাদা। দেহতল কালচে। স্ত্রী পাখির ঝুঁটি অনুপস্থিত, গায়ের বর্ণ হলুদাভ বাদামি। উভয়ের পা ও পায়ের পাতা হলুদ। প্রধান খাবার: মূলত এরা সর্বভুক পাখি। তবে ঘাস বীজ, ঘাসের কচিডগা, ফুল-ফল, পোকামাকড়, পঙ্গপাল, ফড়িং, পিঁপড়া ইত্যাদির প্রতি আসক্তি বেশি।প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে আগস্ট। বাসা বাঁধে ভূমিতে ঘাসলতা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৫-২৮ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 02/09/2016
কালচে দামা | Naumanns Thrush | Turdus naumanni
কালচে দামা| ছবি: ইন্টারনেট ভূচর পাখি। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। এতদাঞ্চলে প্রজনন ঘটে না। চেহারা মোটামুটি আকর্ষণীয়। প্রাকৃতিক আবাসস্থল তুষারপাত হয় এমন তৃণভূমি অঞ্চল। পাথুরে এলাকায়ও দেখা যায়। বিচরণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। পুরুষ পাখির গানের গলা ভালো। গাছের উঁচু ডালে বসে খুব ভোরে এবং গোধূলীলগ্নে গান গায়। স্বভাবে লাজুক। বেশির ভাগই একাকী বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায় লতাগুল্ম কিংবা ঝোপের নিচে। পরিত্যক্ত বা স্যাঁতস্যাঁতে এলাকার লতাপাতা উল্টিয়ে এবং ঘন ঘন ঠোঁট চালিয়ে খাবার খোঁজে। দ্রুত দৌড়াতে পারে, অসম্ভব দ্রুত। দুই পা একত্রিত করে লাফানোর মতো দৌড়ায়। গাছের উঁচুতে বিচরণ করে না। মাঝারি আকৃতির ফাঁকা ডালে বেশি দেখা যায়। দেশের সর্বত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম ইউরোপ পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘কালচে দামা’, ইংরেজি নাম: ‘নাউম্যান’স থ্রাস’(Naumann’s Thrush), বৈজ্ঞানিক নাম: Turdus naumanni। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ২৩-২৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৩-৮১ গ্রাম। মাথা, ঘাড় ও পিঠ জলপাই বাদামির সঙ্গে কালো ছিট। ডানার প্রান্ত পালক পাটকিলে। লেজ কালচে জলপাই রঙের। চোখের ওপর দিয়ে সাদা চওড়া টান ঘাড়ে ঠেকেছে। গলা আঁশটে ক্রিমসাদা। বুক থেকে লেজতল পর্যন্ত কালো-সাদা বুটিক। চোখ কালো। উপরের ঠোঁট কালচে, নিচের ঠোঁট হলদে জলপাই। পা ময়লা হলদে, নখ কালচে। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় ও কেঁচো। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। সাইবেরিয়া অঞ্চলে অধিক প্রজনন ঘটে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ২-৭ মিটার উঁচুতে। গভীর কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, শুকনো ঘাস ও লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 25/08/2017
খয়রামাথা সুইচোরা | Chestnut headed Bee eater | Merops leschenaultia
খয়রামাথা সুইচোরা | ছবি: ইন্টারনেট বিরল দর্শন, স্থানীয় প্রজাতির পাখি ‘খয়রামাথা স্ইুচোরা’। দেখতে ভীষণ সুন্দর। স্বভাবে চঞ্চল হলেও হিংস্র নয়। এক সময় দেশের শালবনে প্রচুর দেখা যেত। হালে সেভাবে দেখা যায় না। মূলত এদের বিচরণ মিশ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ বনে। বিচরণ করে প্যারাবনেও। দেশে তুলনামূলক বেশি দেখা যায় সুন্দর বনাঞ্চলে। ছোট-বড় দলে দেখা গেলেও বেশিরভাগই থাকে জোড়ায় জোড়ায়। গাছের চিকন পত্রপল্লবহীন ডালে কিংবা টেলিফোনের তারে বসে শিকারের প্রতিক্ষায় অস্থির সময় পার করে। তবে যেখানেই বসুক না কেন, আশপাশটা ঝোপ-জঙ্গল, লতাপাতা কিংবা ঘন ডালপালাবিহীন মুক্তাঞ্চল হওয়া চাই। যাতে করে কিছু সময় পর পর উড়তে সুবিধা হয়। সব ধরনের সুইচোরা উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। আবার জলপানেও রয়েছে বৈচিত্রতা। জলের ওপর উড়ে উড়ে ছোঁ মেরে জলপান করে। স্থিরতা এদের মাঝে খুবই কম। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার ফুরসত নেই যেন। এরা গায়ক পাখিদের তালিকায় না পড়লেও মাঝেমধ্যে নিচু স্বরে ডাকে ‘পের্রিপ-পের্রিপ’। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও চীন পর্যন্ত। বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘খয়রামাথা সুইচোরা’, ইংরেজি নাম: ‘চেস্টনাট-হেডেড বি-ইটার’ (Chestnut-headed Bee-eater), বৈজ্ঞানিক নাম: Merops leschenaultia | এরা ‘পাটকিলে মাথা বাঁশপাতি’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে চার প্রজাতির সুইচোরা দেখা যায়। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৮-২০ সেন্টিমিটার। ওজন ৩০ গ্রাম। থুতনি, গলা ও মুখ উজ্জ্বল হলুদ। গলায় লালচে-কালো বেষ্টনী। কপাল, মাথা, ঘাড় এবং পিঠাবরণ উজ্জ্বল তামাটে। পিঠ ঘাস-সবুজ। চেরা লেজের বর্ণ সবুজ। প্রজাতির অন্যদের মতো লেজে সরু লম্বা পালক থাকে না। দেহতল সবুজাভ। শিং-কালো রঙের, ঠোঁট নিচের দিকে বাঁকানো। চোখ লাল। পা ও পায়ের পাতা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাথার তালু ঘন সবুজ। প্রধান খাবার: উড়ন্ত কীটপতঙ্গ, মৌমাছি, উইপোকা এবং ফড়িং প্রিয় খাবার। খেজুরের রসের প্রতি আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে জুন। কলোনি টাইপ বাসা। নদী বা জলাশয়ের খাড়া পাড়ে নিজেরাই সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৫-৬টি। ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 10/08/2018
আমুর শাহিন | Amur Falcon | Falco amurensis
আমুর শাহিন | ছবি: ইন্টারনেট পাখির নাম ‘আমুর শাহিন’। আমুরল্যান্ডে বিচরণ আধিক্য বিধায় হয়তো এই নাম ওদের। এরা উপমহাদেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। সুদর্শন, স্লিম গড়নের পাখি। দেখতে কিছুটা ককাটিল পাখিদের মতো। পুরুষদের চেহারা চকচকে হলেও স্ত্রী পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ; ভিন্ন বর্ণের। প্রাকৃতিক আবাসস্থল খোলা মাঠপ্রান্তর, খোলা বনাঞ্চল। শিকারি পাখি হলেও স্বভাবে হিংস নয়। একাকী, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আমুরল্যান্ড, ট্রান্সবিকালিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব সাইবেরিয়া, উত্তর-পূর্ব মঙ্গোলিয়া উত্তর-পূর্ব চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান তত সন্তোষজনক নয়, উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে আইসিইউএন এদের শনাক্ত করেছে তাই। প্রজাতির বাংলা নাম: ‘আমুর শাহিন ’, ইংরেজি নাম: ‘আমুর ফ্যালকন’, (Amur Falcon), বৈজ্ঞানিক নাম: Falco amurensis | এরা ‘লালপা তুরমুতি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ৩০-৩৬ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ৬৫-৭৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৯৭-১৫৫ গ্রাম। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। চেহারায় বিস্তর তফাৎ। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ গাঢ় ধূসর। ডানা খানিকটা লম্বা। দেহতল ধূসর। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত লাল। চোখের বলয় কমলা হলুদ। ঠোঁটের অগ্রভাগ কালচে বাঁকানো, গোড়া কমলা হলুদ। পা লালচে কমলা। অপরদিকে স্ত্রী পাখির চেহারা ভিন্ন। শরীরে ধূসর, হলুদ, সাদা, বাদামির মিশ্রণ ছিট। বাদবাকি পুরুষের মতো। প্রধান খাবার: ঘাসফড়িং, পতঙ্গ, ছোট পাখি ও ছোট সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। গাছের উঁচু ডালে চিকন ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। মাস খানেকের মধ্যেই শাবক স্বাবলম্বী হয় এবং বাবা-মাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। লেখক: আলম শাইন।কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 06/10/2017