মেটেমাথা কুরাঈগল | Grey headed Fish Eagle | Ichthyophaga ichthyaetus

3462
মেটেমাথা কুরাঈগল | ছবি: ইন্টারনেট

আবাসিক পাখি। মোহনা এবং উপকূলের কাছাকাছি জলাশয় ও নিম্নভূমির বন প্রান্তরে বিচরণ করে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উঁচুতেও দেখা যায়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, লাওস, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও পশ্চিম ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। প্রজাতির দেখা মেলে একাকি বা জোড়ায়। মিঠা জলের জলাশয় এদের বিচরণের জন্য উত্তম। দুর্দান্ত সাহসী ও হিংস ।

নিজের শরীরের সমান ওজনের মাছ বা সরীসৃপ শিকার করতে সক্ষম। শিকার খুঁজে জলাশয়ের ওপর চক্কর মেরে। ওপর থেকে নিশ্চিত হলে কেবল জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছোট মাছের প্রতি আসক্তি নেই বললেই চলে। আকারে বড়সড়ো মাছ দেখলে নিশানা ঠিক করে বিশাল ডানা মেলে মাছের পিঠ বা ঘাড়ে থাবা বসিয়ে দেয়। এ থেকে বাদ যায় না জলচর সাপও। দেশে এদের অবস্থা সন্তোষজনক নয়। জলাশয় সংকুচিত এবং উঁচু গাছের অভাবে এরা হুমকির মুখে পড়েছে।

পাখির বাংলা নাম: ‘মেটেমাথা কুরাঈগল’, ইংরেজি নাম: ‘গ্রে-হেডেড ফিস ঈগল, (Grey-headed Fish Eagle), বৈজ্ঞানিক নাম: (Ichthyophaga ichthyaetus)। এরা ‘মাছ মুরাল’ নামেও পরিচিত।

দৈর্ঘ্য ৬১-৭৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির প্রসারিত ডানার দৈর্ঘ্য ৪২-৪৫.৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১.৬ কেজি। স্ত্রী পাখির প্রসারিত ডানার দৈর্ঘ্য ৪৪.৫-৫১.৮ সেন্টিমিটার। ওজন ২.৩-২.৭ কেজি। দেহের তুলনায় মাথা খাটো। মাথা বাদামি ধূসর। ঘাড় ও গলা লালচে বাদামি। পিঠ কালচে-বাদামি। বুক লালচে-বাদামি। পেট থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত সাদা। লেজ বাদামি, বৃত্তাকার এবং খাটো। ঠোঁট শিং কালো। শক্ত-মজবুত ধারালো ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। চোখ হলুদ-বাদামি। পা খাটো, নখ তীক্ষ, ধূসর-কালচে। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের রঙে সামান্য পার্থক্য রয়েছে।

প্রধান খাবার: মাছ। এ ছাড়া সাপ, ইঁদুর, খরগোশসহ বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ শিকার করে। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। জলাশয়সংলগ্ন উঁচু গাছের তে-ডালে সরু ডালপালা দিয়ে মস্তবড় বাসা বাঁধে। বাসা অগোছালো। একই বাসায় ফি বছরেও ঘর বাঁধতে দেখা যায়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৫-৪০ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৬৫-৭০ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 05/08/2016

মন্তব্য করুন: