ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা | Grey capped Pygmy Woodpecker | Dendrocopos canicapillus

2436
ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট

দুর্লভ আবাসিক পাখি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগের পাতাঝরা-চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। বিচরণ করে কমবেশি প্যারাবনেও। এক সময় গাজীপুর এবং মধুপুরের শালবনে ব্যাপক বিচরণ ছিল বলে জানা যায়। হালে দুর্লভ দর্শন হয়ে পড়েছে। অন্যসব কাঠঠোকরার মতোই এরা বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। অনেক সময় ছোট দলেও দেখা যায়। স্বভাবে চঞ্চল হলেও হিংস নয়। এরা হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে।

বেশিরভাগই গাছের বাকল জড়িয়ে ধরে ওঠানামা করে। খাবার খোঁজে গাছের বাকল ঠুকরিয়ে। এদের খাবার খোঁজার কৌশল দারুণ। ঠোঁট দিয়ে গাছের কাণ্ডে আঘাত করতে করতে নিচের দিকে নামতে থাকে। পোকামাকড় আছে এমনটা সন্দেহ হলে কেবল ঠোঁট দিয়ে উপুর্যপরি আঘাত করে। আবার শিকার শেষে গাছের মগডালের ফাঁপাস্থানে আঘাত করে ড্রাম বাজাতে দেখা যায়। রাতে বিশ্রাম নেয় গাছের উপরমুখী ডালের মিলনস্থলে। সকালে গাছের ডাল জড়িয়ে ধরে রোদ পোহায়। জলপান ব্যতিরেকে পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, তাইওয়ান, লাওস, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও কোরিয়া পর্যন্ত। বিশ্বে এরা বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

পাখির বাংলা নাম: ‘ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা’, ইংরেজি নাম: গ্রে-ক্যাপড পিগমী উডপেকার’ (Grey-capped Pygmy Woodpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: Dendrocopos canicapillus | এরা ‘মেটেটুপি বাটকুড়ালি’ নামেও পরিচিত।

দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৪-১৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তফাৎ সামান্য। পুরুষ পাখির মাথার দু’পাশে রয়েছে লাল দাগ, স্ত্রী পাখির সেটি কালো দেখায়। ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরার কপাল-মাথা মলিন ধূসর। ভ্রুরেখা প্রশস্ত সাদাটে। পিঠে সাদা-কালো ডোরা। ডানা প্রশস্ত কালোর ওপর সাদা ডোরা। কোমর কালো। লেজের উপরিভাগ কালচে। থুতনি ও গলা সাদাটে। দেহতল বাদামি ডোরাসহ হালকা খয়েরি। ঠোঁটের কিছু অংশ শিঙরঙা বাদামি, কিছু অংশ ফ্যাকাসে। চোখ লালচে-বাদামি। পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে।

প্রধান খাবার গাছ পিঁপড়া, পোকামাকড়, ফলের খোসা ও ফুলের মধু। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। গাছের খাড়া ডালে নিজেরা গর্ত করে খোড়ল বানিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 24/07/2015

মন্তব্য করুন: