
সামুদ্রিক পাখিদের মধ্যে প্রজাতিটি হিংস্রতায় অদ্বিতীয়। দেখতে বোকাসোকা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে স্বভাব দস্যুদের মতো। ছোট পাখিদের খাবার ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ওদেরকেও বধ করার চেষ্টা করে। জলদস্যুদের মতো রুক্ষ আচরণের ফলে এবং শরীরের পালক অধিকাংশ বাদামি বর্ণের কারণে প্রজাতিটি ‘বাদামি জলদস্যু পাখি’ নামে পরিচিতি পায়।
এরা সর্বভুক পাখি। পচাগলা থেকে শুরু করে ফল-পাকুড়ও খেতে দেখা যায়। প্রজাতিটি স্বভাবে পরিযায়ী। শীতে এতদঞ্চলে দেখা মেলে। বিচরণ করে দক্ষিণ আমেরিকা, অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়াও তুন্দ্রা অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন সময়ে মহাসমুদ্র এলাকার মহীসোপানে এবং উপকূলীয় এলাকার জলাভূমিতে বিচরণ করে। বিচরণ করে ছোট-বড় দলে। সারাদিন সমুদ্রের বুকে উড়ে উড়ে শিকার খুঁজে বেড়ায়। প্রজাতিটি বিশ্বে হুমকি না হলেও আইইউসিএন এদের উদ্বেগ প্রজাতি হিসাবে শনাক্ত করেছে।
পাখির বাংলা নাম: ‘বাদামি জলদস্যু পাখি’, ইংরেজি নাম: ‘পোমারাইন স্কুয়া’ (Pomarine Skua), বৈজ্ঞানিক নাম: Stercorarius pomarinus | এরা ‘পোমারাইন জেগার’ নামেও পরিচিত। দেশে দুই প্রজাতির জলদস্যু পাখির সাক্ষাৎ মেলে। যথা: বাদামি জলদস্যু ও জলদস্যু পাখি।
প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ৪৩-৫৪ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ১১০-১৩৮ সেন্টিমিটার। ওজন ৫৪০-৯২০ গ্রাম। মাথায় কালো টুপি। ঘাড় পানউবর্ণের সাদা। পিঠ, ডানা ও বাদামি কালো। চামচ আকৃতির লেজ। গলা, বুক ও তলপেট পাণ্ডুবর্ণের সাদা। ঠোঁটের গোড়া ত্বক বর্ণ। কালো ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। চোখ বাদামি, পা ও পায়ের পাতা কালো। পায়ের পাতা হাঁসের পায়ের মতো জোড়া লাগানো। যুবাদের চেহারা ভিন্ন।
প্রধান খাবার: মাছ। এছাড়াও ছোট পাখি এবং পাখির ডিম, ইঁদুর, সরীসৃপ, পোকামাকড়, পচাগলাও খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে সেপ্টেম্বর। বাসা বাঁধে উত্তর আমেরিকা, উত্তর ইউরেশিয়া এবং তুন্দ্রা অঞ্চলের মাটির ওপর শৈবাল, শ্যাওলা ও ঘাসলতা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৫-২৮ দিন। শাবক উড়তে শেখে ২৫-৩০ দিনের মধ্যে। প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় ৩-৪ বছর।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 29/07/2016