লালতলা প্রিনা | Rufous vented Prinia | Prinia burnesii
লালতলা প্রিনা | ছবি: ইন্টারনেট ‘মেটেবুক প্রিনা’ নিয়ে গত সংখ্যায় লিখেছি। আজ ওদের জ্ঞাতি ভাই ‘লালতলা প্রিনা’ নিয়ে লিখছি। উভয়ই স্থানীয় প্রজাতির পাখি। স্লিম গড়ন। মায়াবী চেহারার। তবে লালতলা প্রিনা আকারে খানিকটা বড়। স্বভাবে চঞ্চল। কণ্ঠস্বর তত সুমধুর নয়। বাদবাকি আচরণ মেটেবুক প্রিনার মতো। তবে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভিন্ন। বাংলাদেশ ব্যতীত ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। পাখির বাংলা নাম: ‘লালতলা প্রিনা’, ইংরেজি নাম: ‘রুফাস ভেন্টেড প্রিনিয়া’ (Rufous-vented Prinia), বৈজ্ঞানিক নাম: Prinia burnesii | এরা ‘জলাভূমির লেজ-তোলা টুনি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৭ সেন্টিমিটার। ওজন ১৯ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন হলেও পুরুষ পাখির রঙে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখি গাঢ় বাদামী রঙের। স্ত্রী পাখি হালকা বাদামি। উভয়ের লেজ লম্বা, কালচে বাদামি। লেজতল লালচে। দেহতল বাদামি-সাদা। ঠোঁট খাটো, জলপাই কালচে। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা হলুদাভ ত্বক বর্ণের। প্রজনন পালক ভিন্ন। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম আগস্ট-সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। ভূমি থেকে এক-দেড় মিটার উঁচুতে গাছেরপাতা পেঁচিয়ে কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১০-১১ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 29/12/2017
ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা | Grey capped Pygmy Woodpecker | Dendrocopos canicapillus
ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট দুর্লভ আবাসিক পাখি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগের পাতাঝরা-চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। বিচরণ করে কমবেশি প্যারাবনেও। এক সময় গাজীপুর এবং মধুপুরের শালবনে ব্যাপক বিচরণ ছিল বলে জানা যায়। হালে দুর্লভ দর্শন হয়ে পড়েছে। অন্যসব কাঠঠোকরার মতোই এরা বিচরণ করে একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। অনেক সময় ছোট দলেও দেখা যায়। স্বভাবে চঞ্চল হলেও হিংস নয়। এরা হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। বেশিরভাগই গাছের বাকল জড়িয়ে ধরে ওঠানামা করে। খাবার খোঁজে গাছের বাকল ঠুকরিয়ে। এদের খাবার খোঁজার কৌশল দারুণ। ঠোঁট দিয়ে গাছের কাণ্ডে আঘাত করতে করতে নিচের দিকে নামতে থাকে। পোকামাকড় আছে এমনটা সন্দেহ হলে কেবল ঠোঁট দিয়ে উপুর্যপরি আঘাত করে। আবার শিকার শেষে গাছের মগডালের ফাঁপাস্থানে আঘাত করে ড্রাম বাজাতে দেখা যায়। রাতে বিশ্রাম নেয় গাছের উপরমুখী ডালের মিলনস্থলে। সকালে গাছের ডাল জড়িয়ে ধরে রোদ পোহায়। জলপান ব্যতিরেকে পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, তাইওয়ান, লাওস, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও কোরিয়া পর্যন্ত। বিশ্বে এরা বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পাখির বাংলা নাম: ‘ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা’, ইংরেজি নাম: গ্রে-ক্যাপড পিগমী উডপেকার’ (Grey-capped Pygmy Woodpecker), বৈজ্ঞানিক নাম: Dendrocopos canicapillus | এরা ‘মেটেটুপি বাটকুড়ালি’ নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৪-১৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তফাৎ সামান্য। পুরুষ পাখির মাথার দু’পাশে রয়েছে লাল দাগ, স্ত্রী পাখির সেটি কালো দেখায়। ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরার কপাল-মাথা মলিন ধূসর। ভ্রুরেখা প্রশস্ত সাদাটে। পিঠে সাদা-কালো ডোরা। ডানা প্রশস্ত কালোর ওপর সাদা ডোরা। কোমর কালো। লেজের উপরিভাগ কালচে। থুতনি ও গলা সাদাটে। দেহতল বাদামি ডোরাসহ হালকা খয়েরি। ঠোঁটের কিছু অংশ শিঙরঙা বাদামি, কিছু অংশ ফ্যাকাসে। চোখ লালচে-বাদামি। পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে। প্রধান খাবার গাছ পিঁপড়া, পোকামাকড়, ফলের খোসা ও ফুলের মধু। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। গাছের খাড়া ডালে নিজেরা গর্ত করে খোড়ল বানিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৩ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 24/07/2015
ফিঙে | Black Drongo | Dicrurus macrocercus
ফিঙে | ছবি: ইন্টারনেট পক্ষীকুলের সমাজপতিরা একবার ‘পাখিরাজ’ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচন পদ্ধতি হচ্ছে যে পাখি যত ওপরে উঠতে পারবে সে হবে তাদের রাজা। ঘোষণা অনুযায়ী পাখিরা একদিন আকাশে ডানা মেলল। মূলত চিল, বাজ, শকুন নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ছোট পাখিদের মধ্যে ফিঙের সাধ জেগেছে আকাশে ওড়ার, সমস্যা হচ্ছে সে এত ওপরে উঠতে পারছে না। বিষয়টা মাথায় ঢুকতেই ওর মনে কূটবুদ্ধি এলো। ফিঙেটা চুপিচুপি চিলের পিঠে সওয়ার হলো। টের পায়নি তা চিল। চিল অন্য সব পাখিকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে ওপরে উঠেছে এক সময়। আশপাশে তাকিয়েছিল যখন নিশ্চিত হয়েছে আর কেউ অত ওপরে উঠতে পারেনি, তখন সে নিচে নামতে শুরু করল। আর সেই সুযোগেই ফিঙে চিলের পিঠ ছেড়ে আরেকধাপ ওপরে উঠে গেল। কর্তৃপক্ষ দেখেছে ফিঙের অবস্থানই সবার ওপরে। সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা এসেছে ‘আজ থেকে পাখিদের রাজা ফিঙে’। হ্যাঁ, ফিঙে খুবই সাহসী পাখি। চিল, বাজ, শকুনকেও ছেড়ে কথা বলে না। ওদের নাগালের মধ্যে এলেই ঠুকরিয়ে দেয়। বাসার কাছে গেলে মানুষকে পর্যন্ত আক্রমণ করে। ছোট পাখিরা ওদের অবস্থানের কাছাকাছি বাসা বেঁধে নিরাপদে থাকে তাই। পাখিটার বাংলা নাম: ‘ফিঙে’, ইংরেজি নাম: ‘ব্ল্যাক ড্রোঙ্গো’, (Black Drongo), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘ডিক্রুরাস মেক্রোসারকাস’(Dicrurus macrocercus)। এ পাখি লম্বায় লেজসহ ২৮-৩১ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত কালো পালকে আবৃত। কালোর ওপরে নীলাভ আভা বের হওয়াতে পালিশ করা চকচকে দেখায়। এদের ঠোঁট ধাতব কালো, গোড়ায় সাদা ফোঁটা থাকে। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের পেটের ওপর থাকে সাদা রেখা। যা দূর থেকে আঁশটে দেখায়। পা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ, ফুলের মধু টিকটিকি, প্রজাপতি, ভীমরুল, কেঁচো ইত্যাদি। প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। গাছের তেডালের ফাঁকে বাটি আকৃতির বাসা বানায়। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে পশুর পশম, সরু লতা-ঘাস ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 29/06/2013
টুনটুনি | Common Tailor bird | Orthotomus sutorius
টুনটুনি | ছবি: ইন্টারনেট অতি সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। দেশের এমন কোনো গাঁও-গ্রাম বা শহর নেই, যেখানে এদের সাক্ষাত পাওয়া যাবে না। খোদ রাজধানীতেও দেখা মেলে। ছেলে-বুড়ো সবাই প্রজাতির সঙ্গে পরিচিত। নানা কারণেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণটি হচ্ছে আমাদের শিশুসাহিত্যে ‘টুনটুনি’ পাখি পাকাপোক্তভাবে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। ছড়া-গল্প-গান কোথায় নেই টুনটুনি? শুধু কি তাই? এরা আমাদের বসতঘরের গা-ঘেঁষা ঝোপজঙ্গলে সব সময়ই লাফিয়ে বেড়ায়। কিংবা নাচানাচি করে লেজ উঁচিয়ে। গান শোনায় ‘টিন-টিন-টিন-টিন বা কিট-কিট-কিট-কিট-’ আওয়াজ করে। মায়াবী চেহারা। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। স্থিরতা নেই খুব একটা। যেন একদণ্ড বসার সুযোগ নেই কোথাও। এই আছে তো এই নেই। তবে যেখানেই থাকুক না কেন এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। জোড়ের পাখিটি সামান্য দূরে থাকলেও ডাকাডাকি করে ভাবের আদান-প্রদান চালিয়ে নেয়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি নানা কসরত করে স্ত্রী পাখির মন ভোলাতে। বাসা বাঁধে বেশ পরিপাটি করে। দুটি পাতাকে একত্রিত করে ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে বাসা বাঁধে। অনেকটা দর্জির কাপড় সেলাই করার মতো। ইংরেজি নামকরণেও সেই রকমটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ পাখির প্রধান শত্রু বাড়ির বিড়াল। মাটির কাছাকাছি বাসা বাঁধার কারণে বিড়াল সে সুযোগটি নেয়। তথাপিও দেশে এদের অবস্থান সন্তোষজনক। কারণ এরা বিড়াল দ্বারা আক্রান্ত হলেও মানুষ দ্বারা নির্যাতিত হয় না খুব একটা। মানুষ এদের যথেষ্ট মায়া করে। পাখির বাংলা নাম: ‘টুনটুনি’, ইংরেজি নাম: ‘কমন টেলর বার্ড’ (Common Tailor-bird), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘অর্থোটোমাস স্যুটোরিয়াস’ (Orthotomus sutorius)। লম্বায় ১২-১৩ সেন্টিমিটার। মাথা পাটকিলে। পিঠ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত জলপাই রঙের। ডানা ফিকে বাদামি। দেহতল সাদাটে। চোখ ফিকে বাদামি। ঠোঁট লম্বা সুচাল। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য খাটো। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির লেজ খানিকটা লম্বা হয়ে যায়। প্রধান খাবার: ফুলের মধু, ছোট পোকামাকড়। পারত পক্ষে মাটিতে নেমে খাবার সংগ্রহ করে না। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর। বাসা বাঁধে মাটির কাছাকাছি গাছের পাতায়। সেলাই করা বাসার ভেতর নরম তন্তু বা তুলা দিয়ে পরিপাটি করে ৩-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় নেয় ১৪-১৫ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 23/05/2014
বাজপাখি | Common Buzzard | Buteo buteo
বাজপাখি | ছবি: ইন্টারনেট শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। নজরে পড়ে খোলা মাঠ-বিল প্রান্তরে। খরগোশ, সাপ, গলিত মাংস, কীটপতঙ্গ এসব শিকার করে। পারতপক্ষে জলাশয় থেকে মাছ শিকার করে না। চাষাবাদ হয় এমন ক্ষেত-খামারের কাছাকাছি বেশি নজরে পড়ে। ফসলের ক্ষেত্রেও বিচরণ রয়েছে। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। অনেক ক্ষেত্রে ১০-১৫টির দলেও দেখা যায়। আকাশের অনেক উঁচুতে উঠে অনেকখানি পরিধি নিয়ে ঘুরতে থাকে। দীর্ঘক্ষণ শূন্যে ভেসে থাকতে পছন্দ করে। এরা শিকারি পাখি হলেও স্বভাবে তেমন হিংস নয়। প্রজাতির চারাভিযান বাংলাদেশ, ভারত, ইউরোপ, রাশিয়া, আফ্রিকা, তুরস্ক, জাপান, থাইল্যান্ড, হংকং এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। বিশ্বে এরা ভালো অবস্থানে নেই। >পাখির বাংলা নাম: ‘বাজপাখি’, ইংরেজি নাম: ‘কমন বাজার্ড’ (Common Buzzard), বৈজ্ঞানিক নাম: Buteo buteo | এরা ‘পাতি তিসাবাজ’ নামেও পরিচিত। প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ৪০-৫৮ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৪২৭ গ্রাম। প্রসারিত পাখা ১০৯-১৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী পাখি সামান্য বড়। মাথা, ঘাড়, পিঠ, ডানা ও লেজ কালচে বাদামির সঙ্গে সাদা ছোপ। ঘাড়ে, গলায় সাদা ছোপ স্পষ্ট। বুক, পেট ও বস্তি প্রদেশ হলদে বাদামির ওপর হলদে সাদা ছিট। চোখের বলয় হলুদ। কালো মণির চারপাশ বাদামি। বড়শির মতো বাঁকানো ঠোঁট কালো, গোড়া হলুদ রঙের। মুখের কিনারটাও হলুদ। পা হলুদ ও নখ কালো। প্রধান খাবার: খরগোশ, ছোট সাপ, ইঁদুর, টিকটিকি, ব্যাঙ, কাঁকড়া, পোকামাকড় ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম মধ্য এপ্রিল। গাছের উঁচু শিখরে সরু ডালপালা দিয়ে অগোছালো বাসা বাঁধে। মাটিতে বা পাথুরে এলাকায়ও বাসা বাঁধে। একই বাসা বারবার ব্যবহার করে। ডিমের সংখ্যা ২-৪টি। তিন দিন অন্তর ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩৩-৩৫ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে ৬-৮ সপ্তাহ। তিন বছর বয়সে বয়োপ্রাপ্ত হয়। গড় আয়ু ২৫ বছর। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 05/05/2017
চড়ই পাখি | House sparrow | Passer domesticus
চড়ই পাখি (পুরুষ) | ছবি: উইকিপিডিয়া প্রজাতিটি সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। বলা যায় পারিবারিক পাখিও। বাংলাদেশের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে ওদের দেখা পাওয়া যায় না। এরা স্বভাবে ভারি চঞ্চল। ভয়ডর তেমন একটা নেই। একেবারে মানুষের কাছাকাছি চলে আসে যে কোনো মুহূর্তে। আস্কারা পেলে আপনার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে খড়কুটো নিয়ে আপনার ঘরের ফাঁকফোকরে ইয়া বড় এক বাসা বানিয়ে ফেলবে। তার পর যথারীতি ঘর-সংসার। একদিন-দু’দিন নয়, বছরের পর বছর কাটিয়ে দেবে একই বাসায়। অবশ্য যদি নিরাপদ বোধ করে। এ হচ্ছে চড়–ইদের কীর্তি। পাখির বাংলা নামঃ চড়ই, ইংরেজি নামঃ হাউস স্প্যারো (House sparrow), বৈজ্ঞানিক নামঃ Passer domesticus | চড়ই পাখি (মহিলা) | ছবি: উইকিপিডিয়া লম্বায় ১৪-১৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা ধূসর। ঘাড় গাঢ় বাদামি। ঘাড়ের দু’পাশ ময়লা সাদা। পিঠ বাদামি। ডানায় বাদামি-কালো রেখার সংমিশ্রণ। ডানার গোড়ার দিকে সাদা পট্টি দেহতলের ময়লা সাদার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। লেজ কালচে। গলা ও থুতনি কালো। ঠোঁট কালো। স্ত্রী পাখির মাথায় আঁকিবুকি দাগ। পিঠ ঝাপসা বাদামির ওপর খাড়া ডোরা। ডানায় সাদা পট্টি। দেহতল ফ্যাকাসে। ঠোঁট ত্বক বর্ণ। উভয়ের চোখ বাদামি। প্রধান খাবারঃ শস্যদানা। এ ছাড়াও পোকামাকড়, ঘাসের কচিডগা, ফুলের মধু ইত্যাদি খায়। প্রজনন মৌসুম বছরের যে কোনো সময়। তবে একটি স্ত্রী পাখি বছরে তিনবারের অধিক ডিম পাড়ে না। বাসা বাঁধে বসতঘরের ফাঁকফোকরে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৪ দিন। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সাদামাটা নাকুটি | Pale Martin | Riparia diluta
সাদামাটা নাকুটি | ছবি: ইন্টারনেট আবাসিক পাখি হলেও দেশে যত্রতত্র দেখা মেলে না। প্রাকৃতিক আবাস্থল খোলা মাঠ-প্রান্তর, কৃষি জমি এবং জলাশয়ের আশপাশ। ছোট-বড় দলে বিচরণ করে। বাসাও বাঁধে দলবদ্ধ হয়ে। টানেল আকৃতির বাসা। অন্তত ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার সেই টানেলের দৈর্ঘ্য। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। চেহারায় কিছুটা হিংস তার ছাপ ফুটে উঠলেও আসলে ওরা হিংস নয়। কণ্ঠস্বর শ্রুতি মধুর নয়, বিরক্তিকর। অস্থিরমতির পাখি। উড়ন্ত পতঙ্গ শিকারের উদ্দেশ্যে সারাদিন ওড়াউড়ি করে। বিরতিহীন ওড়াউড়ি। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ব্যতিত উপমহাদেশীয় বিভিন্ন অঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্ব চীন, মরোক্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত। বিশ্বে প্রজাতিটি তেমন সন্তোষজনক না হলেও হুমকি নয়। পাখির বাংলা নাম: ‘সাদামাটা নাকুটি’, ইংরেজি নাম: ‘পেল মার্টিন’ (Pale Martin), বৈজ্ঞানিক নাম: Riparia diluta | এরা ‘ম্লান নাকুটি’ নামেও পরিচিত। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১২-১৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষের চেহারা অভিন্ন। মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ বাদামী। তবে ডানা এবং লেজের প্রান্ত পালক গাঢ় বাদামী। ডানা লম্বা, লেজের প্রান্তে মিশেছে। দেহতল সাদা হলেও গলা বুকের মাঝ বরাবর বাদামী ছোপ। চোখ কালো। ঠোঁট খাটো, কালো। পা কালো, নখ বড় বড়। প্রধান খাবার: উড়ন্ত পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। কলোনি টাইপ বাসা। পাহাড়, নদ-নদীর পাড়ে মাটির খাড়া দেওয়ালের গর্তে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ফোটে ১২-১৩ দিনে। লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণীবিশারদ ও পরিবেশবিদ।সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 27/10/2017