হলদেগলা পেঙ্গা | Yellow throated laughing thrush | Garrulax gal banus

1626
হলদেগলা পেঙ্গা | ছবি: ইন্টারনেট

স্থানীয় প্রজাতির হলেও যত্রতত্র দেখা যায় না। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব নিম্নভূমির বন-প্রান্তরের লম্বা ঘাস, সুচাল গাছ কিংবা ঝোপ-জঙ্গলে দেখা যায়। বিশেষ করে পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে এরা। ফাঁকা স্থানে তেমন একটা দেখা যায় না। বাস করে দলবদ্ধভাবে। দলে কমপক্ষে ৩০-৪০টি পাখি একত্রে বিচরণ করে। মানুষ ওদের শত্রু না হলেও অদৃশ্য কারণে ভীষণ ভয় পায়। মানুষের আনাগোনা টের পেলে সঙ্গে সঙ্গে পাতার আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। নিমেষেই চুপ মেরে যায় সবাই।

এ অবস্থায় ওদের অবস্থান নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য। প্রজাতির পুরুষদের চরিত্র তত সুবিধাজনক নয়। বহুগামিতার প্রমাণ মেলে। নিজ স্ত্রী ছাড়াও পরস্ত্রীর সেবা গ্রহণ করতে দেখা যায়। অর্থাৎ একাধিক স্ত্রী পাখিরা পুরুষ পাখিকে ঘিরে শরীর চুলকে দেয়। ওরা আরাম পেয়ে চুপচাপ বসে থাকে। সেই সঙ্গে প্রজননকর্মও সেরে নেয়। স্বভাবে খানিকটা ঝগড়াটে হলেও ভীতু প্রকৃতির এরা। কণ্ঠস্বর তত ভালো নয়, দ্রুত গান গায়। ফলে সুর শুনতে আগ্রহ সৃষ্টি হয় না। এশিয়ার অনেক দেশেই এদের সাক্ষাৎ মেলে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত (দক্ষিণ আসাম, মণিপুর, মিজোরাম), পশ্চিম মিয়ানমার ও দক্ষিণ চীন পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী প্রজাতিটি হুমকির মুখে নেই।

পাখির বাংলা নাম: ‘হলদেগলা পেঙ্গা’, ইংরেজি নাম: ‘ইয়েলো-থ্রোটেড লাফিং থ্রাস’,(Yellow-throated laughing thrush), বৈজ্ঞানিক নাম: Garrulax gal-banus |

এরা দৈর্ঘ্যে ২৩-২৪.৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৫৫-৫৭ গ্রাম। কপাল ও চিবুক কালো। মাথার তালু থেকে মাথার পেছন পর্যন্ত ঘন নীল। ঘাড় হালকা বাদামি-হলুদ। পিঠ গাঢ় বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক নীলচে সাদা। গলা হলদে। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত হলদে-সাদা। ঠোঁট কালো। চোখ লালচে বাদামি। পা ধূসর কালো।

প্রধান খাবার: কীটপতঙ্গ ও ছোট বীজ। ছোট ফলের প্রতিও আসক্তি রয়েছে। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে দেড়-দুই মিটার উচ্চতায় ঝোপের ভিতর। কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে বাঁশপাতা, ঘাস, শিকড়, লতাপাতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে দু-তিনটি। ডিম ফুটতে লাগে ১৩-১৫ দিন।

লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, 27/03/2016

মন্তব্য করুন: