
কবুতর আকৃতির গড়ন। তাগড়া শরীর। নজরকাড়া রূপ। স্থানীয় প্রজাতির পাখি। বিরল দর্শন। স্বভাবে শান্ত, মিশুকও। অন্য প্রজাতির দূরের কথা, নিজ প্রজাতির কারও সঙ্গেও পারতপক্ষে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় না। বিচরণ করে মিশ্র চিরসবুজ অরণ্যে। জোড়ায় কিংবা ছোটদলে থাকে। বট-পাকুড় গাছে বেশি দেখা যায়। ফল পাকলে ঝাঁক বেঁধে খেতে আসে। সূর্যস্নান এদের বেশ পছন্দের। প্রায়ই দেখা যায় সূর্যোদয়ের পরে কিংবা সূর্যাস্তের সময় গাছের পত্র-পল্লববিহীন ডালে বসে রোদ পোহাতে। এমনিতে বৃক্ষচারী পাখি। সারাক্ষণই গাছে কাটায়। কেবল জলতেষ্টা পেলে মাটিতে নামে।
প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির হাঁকডাক বেড়ে যায়। দেশে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। অবাধে বট-পাকুড় গাছ উজাড়ের ফলে এরা বাসস্থান হারিয়ে ফেলছে। তা ছাড়া শিকারিদের নির্যাতনের ফলেও দেশে বিরল দর্শন হয়ে পড়েছে। বিশ্বেও এরা ভালো অবস্থানে নেই। আইইউসিএন উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে শনাক্ত করেছে এদের। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, তিব্বত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত।
পাখির বাংলা নাম: ‘লেজচোখা হরিয়াল’, ইংরেজি নাম: ‘ওয়েজ টেলেড গ্রিন পিজিয়ন, (Wedge-tailed Green-Pigeon), বৈজ্ঞানিক নাম: ‘Treron sphenurus’| এরা ‘গেঁজলেজ হরিয়াল’ নামেও পরিচিত।
দৈর্ঘ্য ৩০-৩৩ সেন্টিমিটার। ওজন ২০৫ থেকে ২১৪ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহায় তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথা কমলা-হলুদ। ঘাড় হলুদাভ-সবুজ। ঘাড়ের লাগোয়া ধূসর রেখা। পিঠ ও ডানা লালচে-বাদামি। ডানার প্রান্ত পালক কালচে। লেজ ময়লা সবুজ। বুক কমলা-হলুদাভ আভাযুক্ত। নিচের দিকে হলুদাভ-সবুজ। স্ত্রী পাখির মাথা হলুদাভ সবুজ। পিঠ ধূসর সবুজ। উভয়ের ঠোঁটের গোড়া ফিরোজা রঙের। চোখ গাঢ়-বাদামি। পা ও পায়ের পাতা গোলাপি।
প্রধান খাবার: বট-পাকুড় ও ডুমুরফল। এ ছাড়াও ছোট ফল-ফলাদি খায়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে আগস্ট। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। গাছের তে-ডালে চিকন কাঠি দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ১-২টি। ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, 07/01/2016