
দেশের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও যততত্র দেখা যায় না। তুলনামূলক পাথুরে এবং মজা এলাকায় বেশি নজরে পড়ে। এ ছাড়াও তৃণময় সমভূমি এলাকায় দেখা মেলে। প্রজনন মৌসুম ছাড়া বেশির ভাগই একাকী বিচরণ করে। দিনে ঘুমিয়ে কাটায়। সূর্যাস্তের খানিকটা পরেই ঝোপজঙ্গলের ভেতর থেকে ‘চিঙ্ক-চিঙ্ক-চিঙ্ক’ সুরে ডাকতে থাকে। কণ্ঠস্বর সুমধুর না হলেও সুরে তাল-লয় রয়েছে। রাত বাড়লে ডাকাডাকি বন্ধ। দেখতে মোটেও আকর্ষণীয় নয়। শারীরিক গড়নটাও একটু ব্যতিক্রম। গায়ের বর্ণ অনেকটাই গাছের মরা ডাল বা শুকনো পাতার মতো। গাছের ডালে বসলে খুব সহজে পাখি হিসেবে শনাক্ত করা যায় না। অপরদিকে মাটিতে বসে থাকলে শুকনো পাতার মতোই মনে হতে পারে। মাড়িয়ে গেলেও টের পাওয়া যায় না যে, এরা পাতা নাকি পাখি! বর্ণচোরা বিধায় নিরাপদে থাকার খানিকটা সুযোগ পায় ওরা।
বাংলাদেশে প্রজাতিটি আবাস সংকটের কারণে অসুলভ হয়ে পড়েছে। আইইউসিএন এদের উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। বিশ্বব্যাপী এরা হুমকির মুখে রয়েছে। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, হিমালয় অঞ্চল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত।
পাখির বাংলা নাম: ‘মেঠো রাতচরা’, ইংরেজি নাম: ‘সাভানা নাইটজার’ (Savanna Nightjar), বৈজ্ঞানিক নাম: Caprimulgus affinis | দেশে মোট পাঁচ প্রজাতির ‘রাতচরা’ পাখির দেখা মেলে।
দৈর্ঘ্য ২০-২৬ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির ওজন ৫৪-৮৬ গ্রাম। স্ত্রী পাখির ৭৫-১১০ গ্রাম। উভয়ের গায়ের উপরের রং বাদামি-দারুচিনি মিশ্রিত ছিট এবং কালচে ডোরাকাঁটা। ঠোঁটের গোড়ায় অল্পসল্প খাড়া লোম। লেজ ও ডানা সামান্য লম্বা। বুক থেকে পেট পর্যন্ত রয়েছে আড়াআড়ি ডোরা দাগ। গলার নিচে হালকা ক্রিমসাদা ছিট। লেজ তলের পালকে বাদামি-সাদার ছিট। চোখ বাদামি। ঠোঁট কালচে, ওপরের ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো। পা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম মনে হলেও সামান্য পার্থক্য রয়েছে।
প্রধান খাবার: ঝিঁঝিঁ পোকা, ফড়িং, গুবরে পোকা ও উড়ন্ত কীটপতঙ্গ। বিশেষ করে নিশাচর কীটপতঙ্গ শিকার করে বেশি। প্রজনন মৌসুম বাংলাদেশ-ভারত এপ্রিল থেকে আগস্ট। এছাড়াও অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ছোট ছোট পাথর অথবা সরাসরি মাটির ওপরে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো লতাপাতা। ডিমের সংখ্যা ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৬ দিন।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 18/12/2015