ভারি শান্ত স্বভাবের পাখি। চেহারাটাও বেশ মায়াবি। গ্রামে-গাঁয়ে এক সময় অনেক দেখা যেত। এখন খুব একটা নজরে পড়ে না। এদেশেরই পাখি তবে অবাধে বৃক্ষ নিধন ও শিকারিদের দৌরাত্ম্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। প্রজনন ঋতুতে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। কণ্ঠস্বর মধুর। মাদকতা রয়েছে সুরে। ডাকে ‘ঘু ঘু ঘু’ সুরে। গ্রীষ্মের অলস দুপুরে দূর থেকে ভেসে আসা ওদের ডাক বড় মধুর লাগে। নিজ প্রজাতির বাইরেও অন্য প্রজাতির ঘুঘুদের সঙ্গেও এরা ঘুরে বেড়ায়। তিলা ঘুঘুদের সঙ্গে দলবেঁধে এদের মাঠ-প্রান্তরে চরে বেড়াতে দেখা যায়। বিশেষ করে ঘাসে ভরা জমিতে এটা-সেটা কুড়িয়ে খায়।
পাখির বাংলা নাম:‘রাজ ঘুঘু’, ইংরেজি নাম: ‘ইন্ডিয়ান রিং ডাভ'(Indian Ring Dove), বৈজ্ঞানিক নাম: Streptopelia decaocto | গোত্রের নাম:‘কলাম্বিদি। অনেকের কাছে এরা কণ্ঠী ঘুঘু নামে পরিচিত। আমাদের দেশে আরো অনেক জাতের ঘুঘু নজরে পড়ে। যেমন: তিলা ঘুঘু, রাজ ঘুঘু, রাম ঘুঘু, লাল ঘুঘু, সবুজ ঘুঘু, ক্ষুদে ঘুঘু ইত্যাদি।
রাজ ঘুঘু লম্বায় ৩০ সেন্টিমিটার। ঘাড়ে অর্ধচন্দ্র কালো রেখা। দেহের উপরি ভাগ ধূসর বর্ণের। ডানার পালক কালচে। বুক ফিকে নীলচে পাটকিলে। তলপেট ছাই ধূসর। লেজের তলার পালক গাঢ় ধূসর। লেজের বাইরের পালকের ডগা সাদা। চোখের তারা লাল। চোখের বলয় পালকহীন ধূসরাভ-গোলাপি চামড়ায় আবৃত। পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল লাল। ঠোঁট কালো। স্ত্রী-পরুষ পাখি দেখতে প্রায় একই রকম।
এদের প্রধান খাবার শস্যদানা। সরিষার প্রতি আসক্তি রয়েছে। খুটে খুটে মাটি খেতে দেখা যায়। প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। ঝোপ জঙ্গল ঘেরা গাছের নিচের দিকে শুকনো ঘাস লতা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ১-২টি। স্ত্রী-পুরুষ পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬-১৮ দিন।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, 12/09/2013