দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। বিচরণ করে যত্রতত্র। শুধু তাই নয়, মানুষের সান্নিধ্য পেতে এরা বাড়ির আশপাশে বিচরণ করে। পচাগলা খেয়ে মানুষের যথেষ্ট উপকারও করে। সামাজিক পাখি। দলের কেউ অন্যায় করলে নিজেদের ভেতর বোঝাপড়া করে। মানুষ বা অন্য কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে দলের সবাই মিলে একত্রিত হয়ে সমবেদনা জানায়। স্বভাবে চৌর্যবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়। মানুষের অগোচরে খাবার বা অন্য যে কোনো জিনিস নিয়ে পালায়। এমনকি সাবানও চুরি করে। এসব না খেলেও বাসায় নিয়ে জমা করে।
মজাদার বিষয়টি হচ্ছে আমরা সবাই জানি কোকিল গায়ক পাখি, অপরদিকে কাকের কণ্ঠস্বর কর্কশ বলে ওদেরকে অগায়ক পাখি হিসেবে জানি। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়টি। বরং কাক গায়ক পাখি, কোকিল সেই তালিকায় পড়ে না। কারণ কাকের গলায় স্বরযন্ত্র রয়েছে যা কোকিলের গলায় নেই। পাতি কাকের বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও ইরান পর্যন্ত। কাক সম্পর্কে বোধ করি আর বিশেষ কিছু বলার নেই। আমরা প্রত্যেকেই এ পাখিটি সম্পর্কে কমবেশি জানি।
পাখির বাংলা নাম: ‘পাতি কাক’, ইংরেজী নাম: ‘হাউস ক্রো’ (House Crow), বৈজ্ঞানিক নাম: Corvus splendens | দেশে দুই প্রজাতির কাক দেখা যায়। যথা: পাতি কাক ও দাঁড় কাক।
এরা দৈর্ঘ্যে ১৬-১৮ সেন্টিমিটার। মাথা ও গলা নীলাভ কালো। ঘাড়, পিঠ ও গলা ধূসর রঙের সঙ্গে পাটকিলে আভার মিশ্রণ। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত নিষ্প্রভ কালচে পাটকিলে। শরীরের বাদবাকি সমস্ত পালক কালোর ওপর বেগুনি নীলের সঙ্গে সবুজ আভার মিশ্রণ। চোখের মণি বাদামি কালো। ঠোঁট ও পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম।
প্রধান খাদ্য যে কোনো ধরনের উচ্ছিষ্ট খাবার। বলা যায় সর্বভূক পাখি এরা। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু শাখায়। অথবা বাড়ির কার্নিসে এবং বিদ্যুতের খুঁটিতেও। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে সরুডাল, ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৬টি।
লেখক: আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।
সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ, 12/02/2016